চট্টগ্রাম নগরীর মুরাদপুর থেকে অক্সিজেন পর্যন্ত মাত্র তিন কিলোমিটার সড়ক। সম্প্রতি বৃষ্টিতে ব্যস্ততম এ সড়কটিতে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। বিশেষ করে, এ সড়কের বিবিরহাট, হামজারবাগ, সঙ্গীত, আতুরার ডিপো, রৌফবাদ এলাকার একাধিক স্থানের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক পর্যায়ে ঠেকেছে। সামান্য বৃষ্টিতে গর্তগুলো রূপ নেয় ছোটখাটো ডোবায়। ইট দিয়ে কোনোরকমে ভরাট করলেও তা টেকে না। বৃষ্টি হলেই গাড়ির চাপে আবার ভাঙে। বছরের পর বছর ধরে এমনটাই দেখে আসছেন স্থানীয় লোকজন।
শুধু অক্সিজেন-মুরাদপুর সড়কটি নয়, নগরীর সব কয়টি সড়কের অবস্থায় প্রায় একই। কোনও কোনও সড়কের অবস্থা আরও বেশি নাজুক। সিটি করপোরেশনের মতে, নগরীতে বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ১৪২ দশমিক ২৮১ কিলেমিটার। ক্ষতিগ্রস্ত এসব সড়ক সংস্কারে প্রয়োজন ৪২৬ কোটি ৮৪ লাখ ২২ হাজার ৭১০ টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত এসব সড়ক সংস্কারে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে ৫০০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ চেয়ে সম্প্রতি চিঠি দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
চিঠিতে বলা হয়, নগরীর বিভিন্ন খালের পাশে নিরাপত্তাবেষ্টনীর অপ্রতুলতা থাকায় জলাবদ্ধতার ফলে বিভিন্ন দুর্ঘটনার আশঙ্কাও প্রবল আকার ধারণ করেছে এবং সম্প্রতি কিছু দুর্ঘটনাও ঘটেছে। ফলে নগরীর ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, ব্রিজ-কালভার্ট মেরামতসহ ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে নিরাপত্তাবেষ্টনী স্থাপন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এ লক্ষ্যে করপোরেশনের প্রায় ৫০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হবে। কিন্তু চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন আর্থিক অবস্থা বর্তমানে অপ্রতুল হওয়ায় কাজগুলো জরুরি ভিত্তিতে সমাধা করা সম্ভব হচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘এবার বর্ষায় নগরীর অধিকাংশ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিছু কিছু স্থানে সড়কের পাশাপাশি অনেক স্ল্যাব নষ্ট হয়েছে। অরক্ষিত খালে নিরাপত্তাবেষ্টনী দিতে হবে। এতেও প্রচুর টাকা প্রয়োজন। তাই মন্ত্রণালয়ে ৫০০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ চেয়ে চিঠি লিখেছি।’
চসিকের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের তালিকা প্রস্তুত করেছে চসিকের প্রকৌশল বিভাগ। চসিকের ৬টি জোন এ তালিকা প্রস্তুত করেছে। তালিকা অনুযায়ী, নগরীর ১ নম্বর জোনে ২৩ হাজার ৭৬ মিটার, ২ নম্বর জোনে ২৮ হাজার ৪৮০ মিটার, ৩ নম্বর জোনে ৮ হাজার ৯১৩ মিটার, ৪ নম্বর জোনে ২৬ হাজার ৩৬৬ মিটার, ৫ নম্বর জোনে ২৭ হাজার ২৬৫ মিটার এবং ৬ নম্বর জোনে ২৮ হাজার ১৮০ মিটার সড়কের ক্ষতি হয়েছে।
চসিক ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের পাশাপাশি নষ্ট হওয়া স্ল্যাব ও খালের সম্ভাব্য নিরাপত্তাবেষ্টনীরও তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী, নগরীতে স্ল্যাব ক্ষতি হয়েছে ১৮ হাজার ৬৬৩ বর্গমিটার। ক্ষতিগ্রস্ত স্ল্যাব সংস্কারে ব্যয় হবে ৯ কোটি ৩৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা। খালে নিরাপত্তাবেষ্টনী দিতে হবে ২১ হাজার ২৯৪ মিটার জায়গায়। এতে খরচ হবে ২১ কোটি ২৯ লাখ ৩৭ হাজার টাকা।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এবার বর্ষায় অনেক বেশি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা বিগত চার বছরের বর্ষায় যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছিল তার চেয়েও বেশি। এসব সড়কসহ আশপাশ সংস্কারের জন্য বিশেষ বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন মেয়র মহোদয়। এখন পর্যন্ত কোনও অর্থ পাওয়া যায়নি। তবে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো সংস্কার করা হচ্ছে।’