সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কাদাকাটি ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া গ্রামে মরিচ্চাপ নদীর ভয়াবহ ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে একটি মসজিদ ও কওমি মাদ্রাসা। যেকোনও মুহূর্তে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান দুটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে—এমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মাঝে।
জানা যায়, ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত তেঁতুলিয়া হামিউচ্ছুন্নাহ কওমিয়া ও হাফিজিয়া মাদ্রাসা এবং এর সংলগ্ন চর জামে মসজিদ বর্তমানে নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার মুখে।
ভাঙনের কারণে মসজিদ–মাদ্রাসাসহ আশপাশের বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার শঙ্কায় আতঙ্কে রয়েছে তেঁতুলিয়া গ্রামের শতাধিক পরিবার। প্রতিদিন ভাঙন ক্রমেই বাড়তে থাকায় পরিবারগুলো ঘরবাড়ি হারানোর ভয় নিয়ে দিন কাটাচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘নদীভাঙনে আমাদের ঘরবাড়ি চলে গেলে পরিবার-পরিজন নিয়ে কোথায় যাবো জানি না। আমরা দিন-রাত আতঙ্কে আছি। দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না করলে পুরো গ্রামের শতাধিক পরিবার নদীতে তলিয়ে যাবে।’
এলাকাবাসীর অভিযোগ, নদী খননের সময় সংরক্ষিত ভরাট অংশ বাদ দিয়ে ভাঙনপ্রবণ অংশে খনন করায় এ বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। খননের এক বছরের মাথায় পুনরায় ভাঙন শুরু হয়, যা এখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্রায় এক মাস আগে ভাঙন শুরু হলেও গত এক সপ্তাহে তা মারাত্মক আকার ধারণ করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এক সপ্তাহ আগে প্রায় ২০–২৫ হাত বাঁধ নদীতে তলিয়ে যায়। মসজিদ ও মাদ্রাসা রক্ষায় স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমে শতাধিক বাঁশ দিয়ে পাইলিং করে বাঁধ নির্মাণের চেষ্টা চালালেও বুধবার দুপুর নাগাদ সেই বাঁধও ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে যায়।
বর্তমানে মসজিদ ভবনের দেয়ালের পাশঘেঁষে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইমাম সাহেবের বাসা ইতোমধ্যেই ভাঙনের কবলে পড়েছে। মাদ্রাসাটিও যেকোনও সময় নদীতে তলিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে মসজিদ–মাদ্রাসাসহ আশপাশের অসংখ্য ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে হারিয়ে যাবে।
স্থানীয় বিএম আলাউদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, ‘বছর ধরে নদীভাঙনের শিকার হলেও যথাযথ ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা না নেওয়ায় এই বিপর্যয় বারবার ঘটছে। দ্রুত জিও ব্যাগ ফেলা, বালুর বস্তা, বাঁধ নির্মাণ ও পাইলিংসহ দীর্ঘমেয়াদি নদীতীর সংরক্ষণ প্রকল্প গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাই।’
এ বিষয়ে আশাশুনির কাদাকাটি ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক জহির উদ্দীন বলেন, ‘আমরা স্থানীয়দের সহযোগিতায় সর্বশক্তি দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছি। ইউএনও মহোদয়ের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের সহযোগিতায় দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে কাজ করার অনুরোধ জানিয়েছি।’
আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কৃষ্ণা রায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ভাঙনের ভয়াবহতা দেখে শঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে জরুরিভিত্তিতে কাজ শুরু করেছি।’
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড, সাতক্ষীরার উপসহকারী প্রকৌশলী রাশিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে বাঁধ রক্ষায় প্রাথমিক পদক্ষেপ নিয়েছি। সার্ভে সম্পন্ন হলে স্থায়ী ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’