গাইবান্ধায় কলেজছাত্র ও ছাত্রশিবিরের নেতা সিজু মিয়াকে (২১) হত্যার অভিযোগে সাঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাদশা আলমসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়েছে। মামলায় ওই থানার আরও ১১ পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) দুপুরে নিহত সিজু মিয়ার মা রিক্তা বেগম সাঘাটা আমলি আদালতে মামলাটি করেন। আদালতের বিচারক পাপড়ী বড়ুয়া মামলাটি সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. সাইদ আল আসাদ।
মামলার অপর আসামিরা হলেন- সাঘাটা থানার এসআই মশিউর রহমান, লিটন মিয়া, উজ্জল, এএসআই মহসিন আলী সরকার, আহসান হাবীব, লিটন মিয়া, কনস্টেবল হামিদুল ইসলাম, আজাদুল ইসলাম, নয়ন চন্দ্র, জয় চন্দ্র, কর্ম ধর্ম চন্দ্র, স্থানীয় বাসিন্দা সাব্বির, ইউসুফ আলী ও মোমিনুল ইসলাম। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা চার-পাঁচ জনকে আসামি করা হয়।
নিহত সিজু মিয়া গাইবান্ধা সদর উপজেলার গিদারী ইউনিয়নের বাগুরিয়া গ্রামের দিনমজুর দুলাল মিয়ার ছেলে। তিনি কঞ্চিপাড়া ডিগ্রি কলেজের ছাত্র ও ছাত্রশিবিরের ওই ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী সাইদ আল আসাদ বলেন, ‘সিজু মিয়াকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার ঘটনায় আদালতে মামলা করেছে তার পরিবার। আদালত মামলাটি সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।’
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, শিবির নেতা ও কলেজছাত্র সিজু মিয়াকে পরিকল্পিতভাবে থানায় ডেকে নিয়ে আসামিরা লাঠি ও বন্দুকের বাট দিয়ে নৃশংসভাবে মেরে রক্তাক্ত করে। পরে কৌশলে হত্যার উদ্দেশ্যে থানার পার্শ্ববর্তী পুকুরে ফেলে দেয়। পুকুর থেকে সাঁতরে বাঁচার চেষ্টা করলে আসামিরা বাঁশের লাঠি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে। পরে সিজুকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে হত্যার ঘটনাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ জুলাই রাত ১০টার দিকে সিজু সাঘাটা থানার কম্পিউটার অপারেটরের কক্ষে যান। সেখানে অভিযোগ লেখার বিষয়ে কম্পিউটার অপারেটরের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে দায়িত্বরত কনস্টেবলের কাছ থেকে বন্দুক কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কনস্টেবলের চিৎকারে পাশের কক্ষে থাকা উপসহকারী পরিদর্শক (এএসআই) মহসিনসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য এসে বন্দুক উদ্ধার করেন। এ সময় তাকে ধরার চেষ্টা করা হলে কাছে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে এএসআই মহসিনকে আঘাত করে পালিয়ে যান। পরে থানা ভবনের পার্শ্ববর্তী সাঘাটা পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের পুকুরে সিজুকে দেখা যায়। পরদিন সকালে ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় পুকুর থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়।
পরদিন দুপুরে সাঘাটা থানা চত্বরে এ নিয়ে ব্রিফ করেন গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) বিদ্রোহ কুমার কুন্ডু। তিনি জানান, ওই দিন রাত ৮টা ৪০ মিনিটে ওই যুবক সাঘাটা থানায় আসেন। তিনি একটি মোবাইল হারিয়ে গেছে মর্মে সাধারণ ডায়েরি করতে চান। দায়িত্বরত কর্মকর্তা তার কাছে মোবাইল নম্বর, আইএমইআই নম্বর এবং কবে, কখন, কোথায় হারিয়ে গেছে, তা জানতে চান। সিজু ১৫ থেকে ২০ মিনিট পুলিশে ওই কর্মকর্তার সামনে থাকলেও এ সংক্রান্ত কোনও তথ্য দিতে পারেননি। এরপর রাত ৯টার দিকে থানা থেকে বের হয়ে যান। পরে রাত ৯টা ৫৬ মিনিটের দিকে একটি ছুরি হাতে সিজু আবার থানায় আসেন। এরপর তিনি দায়িত্বরত কনস্টেবল সিরাজুল ইসলামকে আঘাত করেন ও তার কাছ থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তারা দুজনে হাতাহাতি করা অবস্থায় দায়িত্বরত কর্মকর্তার কক্ষে প্রবেশ করেন। সিজু হাতে থাকা ছুরি দিয়ে পুলিশকে এলোপাতাড়ি আক্রমণ করার চেষ্টা করেন। এ সময় একজন এএসআই আহত হন। আরও কয়েকজনকে আঘাত করতে উদ্যত হন। রাত ৯টা ৫৭ মিনিটের দিকে তিনি দৌড়ে পাশের একটি পুকুরে লাফ দেন। পরদিন সকালে ফায়ার সার্ভিস পুকুর থেকে সিজুর লাশ উদ্ধার করেছিল।
এদিকে, সিজু মিয়াকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে মানববন্ধন করে আসছিলেন স্থানীয় লোকজন জামায়াত শিবির। এ অবস্থায় ওই থানার এসআই রাকিবুল ইসলামকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শরিফুল আলম বলেন, ‘এ ঘটনায় ইতিমধ্যে পুলিশ সদর দফতর ও রংপুর রেঞ্জ থেকে দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত চলছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্টের পর বিস্তারিত জানা যাবে।’
গাইবান্ধা জেলা শিবিরের সভাপতি ফেরদাউস সরকার রুম্মান বলেন, ‘সাঘাটা থানায় মামলা না নেওয়ায় শেষ পর্যন্ত আমরা আদালতে মামলা করেছি। আমরা চাই, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ বিচার হোক।’
সিজুর মা রিক্তা বেগম বলেন, ‘আমার সন্তানকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বিচারের জন্য পুলিশের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়েছে। তবু মামলা নেয়নি। সন্তানের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই আমি।’
এ বিষয়ে জানতে সাঘাটা থানার ওসি বাদশা আলমের সরকারি নম্বরে কল দিলে রিসিভ করেন এসআই মশিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘স্যার সাক্ষ্য দিতে গেছেন। আমাদের নামে মামলা হয়েছে বলে শুনেছি।’













