গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত ‘মওলানা ভাসানী সেতু’ উদ্বোধনের একদিন পরই সেতুর ল্যাম্পপোস্টের বিদ্যুৎ সরবরাহের ৩১০ মিটার তার চুরি হয়েছে। এতে অন্ধকারে রয়েছে সেতুটি। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। সেতুর নিরাপত্তা ইনচার্জ নুরে আলম বাদী হয়ে শুক্রবার রাতে সুন্দরগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা করেন। মামলায় পাঁচ লাখ ২০ হাজার টাকার তার চুরির করা উল্লেখ করা হয়।
গত বুধবার গভীর রাতে দুষ্কৃতকারীরা মাটি খুঁড়ে মাটির নিচ দিয়ে স্থাপন করা ওই তার কেটে নিয়ে যায়। এতে সেতুর ল্যাম্পপোস্টে আলো জ্বলেনি, অন্ধকারে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন।
সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, সেতুর দক্ষিণ পাশের সংযোগ সড়কের উভয় পাশে থাকা আটটি ল্যাম্পপোস্টের ৩১০ মিটার তার মাটি খুঁড়ে কেটে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এতে উদ্বোধনের রাতে লাইট জ্বালাতে ব্যর্থ হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে চায়না সাসেক প্রকল্পের কর্মীরা মাটি খুঁড়ে তার কাটা ও চুরির ঘটনাটি শনাক্ত করেন।
সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল হাকিম আজাদ বলেন, ‘সেতুর নিরাপত্তা ইনচার্জ বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। চুরি যাওয়া তার উদ্ধারে অভিযান চলছে এবং ঘটনায় জড়িতদের শনাক্তের চেষ্টা অব্যাহত আছে। সেতুতে যানজট নিরসন ও সার্বিক নিরাপত্তা জোরদারে কাজ করছে পুলিশ।’
গাইবান্ধা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল চৌধুরী বলেন, ‘তার চুরির ঘটনায় মামলা হয়েছে। দ্রুত নতুন তার সংযোগ দিয়ে বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা পুনরায় স্থাপন করা হবে। পাশাপাশি সেতুতে নিরাপত্তা জোরদার ও স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, সেতুর হরিপুর পয়েন্ট থেকে মাটি খুঁড়ে তার কেটে নিয়ে গেছে চোরেরা। এর ফলে উদ্বোধনের দিন থেকে সেতুতে আলো না থাকায় হাজারো মানুষ বিড়ম্বনায় যাতায়াত করছেন। অন্ধকারে যাতায়াত করায় অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ ঘটনায় এলজিইডির গাফিলতিকে দায়ী করছেন তারা।
গত বুধবার দুপুরে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া সেতুটি উদ্বোধন করেন। সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ঘাট থেকে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার চিলমারী ঘাট পর্যন্ত সেতুটি নির্মাণে ২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর দরপত্র আহ্বান করা হয়। সেতুর উভয় পাশে ৮৬ কিলোমিটার সড়ক মেরামত, ছোট-বড় ৬২টি সেতু-কালভার্ট নির্মাণ ও সাড়ে তিন কিলোমিটার নদী শাসন মিলিয়ে মোট ব্যয় হয় ৯২৫ কোটি টাকা। ১ হাজার ৪৯০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯ দশমিক ৬০ মিটার প্রস্থের সেতুটি দুই লেনের এবং মোট ৩১টি স্প্যান।
এলজিইডির সূত্রে জানা যায়, সেতুটি চালু হওয়ায় কুড়িগ্রামের চিলমারী থেকে ঢাকার দূরত্ব কমবে ৯৩ কিলোমিটার। এতে সময় সাশ্রয় হবে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন লিমিটেড’ সেতু তৈরির কাজের দায়িত্ব পায়। এটি নির্মাণে বাংলাদেশ সরকার (জিওবি), সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ওফিড) অর্থায়ন করে।