রাজশাহীতে বরখাস্ত হওয়া ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শককে (এসআই)মাহবুব হাসানকে (৩৫)গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। শনিবার (২৩ আগস্ট) রাত ১১টার দিকে নগরীর হজোর মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নগরীর চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী মাসুদ এ তথ্য জানান।
ওই এসআই’র বিরুদ্ধে মানুষকে হয়রানি ও ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। তাকে পুলিশে দেওয়ার সময় ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন জামায়াতে ইসলামীর রাজশাহী মহানগরীর সাংগঠনিক সেক্রেটারি জসিম উদ্দিন সরকার ও ছাত্রশিবিরের মহানগরের সাবেক সভাপতি খাইরুল ইসলাম।
সে সময় জসিম উদ্দিন বলেন, হাসান মানুষকে কখনও গাঁজা, কখনও হেরোইন, কখনও ইয়াবা দিয়ে মিথ্যা মামলায় কারাগারে পাঠাতো। আমার সামনে সোহাগ নামে যে আছে তাকে মারতে মারতে উলঙ্গ করে মিথ্যা মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছিল। আমাদের রাতুলকেও মেরে আহত করে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠায়। ৫ আগস্টের পরে মানুষের কথা বলার সুযোগ হয়েছে, কথা বলছে। এই অপরাধী ঘাপটি মেরে শহরে অবস্থান করছিল।
তিনি বলেন, হাসান অসংখ্য বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী হত্যা মামলার আসামি। কিন্তু তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছিল না। তাই তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আগামী দিনে আদালতের মাধ্যমে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
জানা গেছে, হাসান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। ২০১৩ সালে এসআই নিয়োগে তার চাকরি হয়। প্রশিক্ষণ শেষে তিনি রাজশাহী নগরীর মতিহার থানায় ছিলেন। পরে ২০১৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) যোগদান করেন। চাকরিজীবনের শুরু থেকেই বেপরোয়া ছিলেন তিনি। তার বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়দের ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছাত্রলীগ করতেন হাসান। পরে দলীয় প্রভাবে পুলিশে চাকরি নেন এবং ডিবিতে যোগ দিয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে দমন-নিপীড়ন চালান। হাসান রাজশাহীতে বিএনপি, জামায়াত, ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে জখম ও পঙ্গু করেছেন। ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলামকে আটক করে অস্ত্রসহ মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানোর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। শুধু রাজনৈতিক নেতাকর্মীই নয়, সাধারণ মানুষকেও চাঁদাবাজি ও মামলা বাণিজ্যের ফাঁদে ফেলেছিলেন তিনি। এসব অপকর্মের মাধ্যমে প্রচুর টাকা হাতিয়ে নেন বলে ভুক্তভোগীদের দাবি। রাজশাহীর রেলগেট এলাকার রাজিব আলী রাতুল ছিলেন এমন এক ভুক্তভোগী। তাকেও মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ আছে।
হাসিনা সরকারের পতনের পর হাসানের বিরুদ্ধে মামলা করেন রাতুলের বাবা মাসুদ রানা। এজাহারে বলা হয়, ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর তৎকালীন এসআই মাহবুব হাসান সাদা পোশাকে মাসুদ রানার বাড়িতে গিয়ে তার ছেলে রাজীব আলীর মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে শিমলা বাগানে তুলে নিয়ে যান। এরপর মাসুদ রানাকে ফোন করে জানানো হয়, তাৎক্ষণিকভাবে পাঁচ লাখ টাকা না দিলে রাজীবকে ক্রসফায়ারে দেওয়া হবে। শিমলা বাগানে গেলে মাসুদ রানাকে ওই টাকা হাসানের হাতে তুলে দিতে হয়। এ সময় হাসান আশ্বাস দেন, রাজীবকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে। কিন্তু পরদিন তাকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।
ওসি মেহেদী মাসুদ বলেন, আটকের পর হাসানকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আমাদের থানায় তার নামে মামলা নেই। তাই তাকে বোয়ালিয়া থানা-পুলিশের কাছে হাসপাতালেই হস্তান্তর করে দেওয়া হয়েছে।
বোয়ালিয়া থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ জানান, তার থানায় হাসানের বিরুদ্ধে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজির মামলা আছে। ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হবে। পরে অন্য কোনও মামলায় তার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে সেটিতেও গ্রেফতার দেখানো হবে।
রাজশাহী নগর পুলিশের মুখপাত্র গাজিউর রহমান জানান, মাহবুব হাসান সর্বশেষ নগর ডিবিতে ছিলেন। তারপরই তিনি বরখাস্ত হন। হাসানের বিষয়ে তিনি বিস্তারিত এখনও জানেন না।