বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, ‘আমাদের দেশে দক্ষ প্রকৌশলী না থাকায় বাইরে থেকে লোক এসে সড়ক, রেলপথ বানিয়ে দিয়ে যায়। অথচ আমাদের দেশে বুয়েট থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার ইঞ্জিনিয়ার বের হয়। এটা অনেক লজ্জার বিষয়। সুতরাং বিদেশিদের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে দেশে দক্ষ প্রকৌশলী তৈরির চেষ্টা করতে হবে।’
রবিবার (২৪ আগস্ট) সকালে গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া-বাইপাস এলাকায় ভোগড়া থেকে নারায়ণগঞ্জের মদনপুর পর্যন্ত ৪৮ কিলোমিটার ঢাকা বাইপাস সড়কের ১৮ কিলোমিটার অংশের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
ঢাকা বাইপাস এক্সপ্রেসওয়ের (এন-১০৫) প্রথম ধাপের ১৮ কিলোমিটার অংশ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে। উদ্বোধনের আগে বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) দুপুর ১২টা থেকে এই অংশ পরীক্ষামূলকভাবে তিন দিন টোল ফ্রি গাড়ি চলাচল করে।
ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘আর কতকাল বাইরে থেকে লোক এসে আমাদের সড়ক বানিয়ে দিয়ে যাবে। আর কতকাল বাইরে থেকে লোক এসে আমাদের সেতু ও রেলপথ বানিয়ে দিয়ে যাবে? রেলের জন্য একটি ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি করবে টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর ওই রাস্তাতে। আমি বললাম এটার দরকার নেই। ওখানে একটা রেলের অলরেডি রাস্তা আছে। সেখানে এত হাজার হাজার কিলোমিটার রেলপথ হলো এখন তোমরা এটার ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি করতে পারবা না- মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে? তাহলে আমাদের এত ইঞ্জিনিয়ার থেকে লাভ কী? এসবের জন্য প্রকৌশলীদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। প্রকৌশলীরা এ কারণেই বেকার। বুয়েট থেকে পাস করে একটা ছেলে যখন একটা মেধাবী ছাত্র হয়- তখন এটা জাতির জন্য লজ্জার। এ জন্য ইঞ্জিনিয়ারদেরক বলবো, নিজেরাই একটি রাস্তা করে দেখান, নিজেরা একটা পাওয়ার প্লান্ট করে দেখান, নিজেরা একটা ট্রান্সমিশন লাইন করে দেখান। এটাই আমাদের উত্তরণের পথ। আমাদেরকে বিদেশ নির্ভরশীলতা থেকে মুক্ত হয়ে আসতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘সেতু মন্ত্রণালয় থেকে আমরা একটা উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা একটি মাল্টি মডেল ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান করতেছি। এ জন্য প্ল্যানের মধ্যে সব কিছুকে একত্র করে দেখবো। সড়ক পথকে দেখবো, রেলপথকে দেখবো, নদী পথকে দেখবো। আমরা সবগুলোকে একত্র করবো। যেখানে যেটার উপযুক্ত আমরা সেখানেই জোর দেবো। যেখানে নদীপথের মুভমেন্ট সহজতর হবে সেখানে নদীপথের ওপর জোর দেওয়া হবে। যেখানে রেলের যাতায়াতের জন্য সহজতর হবে সেখানে আমরা রেলের ওপর জোর দেবো। শুধুমাত্র সড়কের ওপর দিয়ে নির্ভরতা আমাদের কমাতে হবে। আমাদের দেশে তো জায়গা নেই। এই যে ভূমি অধিগ্রহণ এটা একটা দীর্ঘ এবং অত্যন্ত ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া। এ জন্য আমাদের সড়কের ওপর যে চাপ এর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আশেপাশের দেশের তুলনায় আমাদের দেশের সড়কের নির্মাণ ব্যয় অনেক বেশি, এগুলো কমাতে হবে। আপনারা জানেন যে রাস্তাঘাট এটা দুর্নীতির একটা বড় ক্ষেত্র। দুর্নীতি কমালে এবং প্রকৌশলে যারা আছেন তারা যদি দায়িত্ব নিয়ে করেন তাহলে বিশ্বাস ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ব্যয় কমানো সম্ভব। সড়ক খাতে বর্তমানে যে অব্যবস্থা চলতেছে এই অব্যবস্থা থেকে আমাদেরকে পরিত্রাণ পেতে হবে।’
এদিকে যানবাহনের ধরন অনুযায়ী ওই এক্সপ্রেসওয়েতে টোল নির্ধারণ করা হয়েছে। ১৮ কিলোমিটার অংশে আংশিকভাবে টোল আদায় শুরু হচ্ছে। টোল হার হচ্ছে- বড় ট্রাক (ট্রেলার, ৬-এক্সেল, ১৫-২৫ টন) ৭৪০, ভারী ট্রাক (২-৩ এক্সেল, ৭+ টন) ৬১০, মাঝারি ট্রাক (৫-৭ টন) ৪০০, বড় বাস (৩১ সিট বা তদূর্ধ্ব) ৩১০, ছোট ট্রাক (৩ টন) ২৬০, ছোট বাস (৩১ সিটের নিচে) ২১০, মাইক্রোবাস ১৯০, পিকআপ, জিপ, রেকার, ক্রেন (৩ টন) ১৮০ ও প্রাইভেটকার ১৫০ টাকা।
প্রকল্পের সেফটি প্রকৌশলী ফারদিন ইমাম জানান, ১৮ কিলোমিটার অংশের নির্মাণ প্রায় শেষ, তাই যান চলাচলের জন্য তা খুলে দেওয়া হচ্ছে। তবে নিরাপত্তা ও গতি নিশ্চিত করতে এক্সপ্রেসওয়েতে সিএনজি অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একইসঙ্গে এই অংশে কোনও ইউটার্ন থাকবে না বলেও জানানো হয়। এ সড়কের বিভিন্ন অংশে দুটি রেলওয়ে ওভারপাস (ধীরাশ্রম ও মীরের বাজার) এবং কাঞ্চন, নাগদা , উলুখোলাসহ ৮টি সেতু নির্মাণকাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। কাঞ্চন থেকে ভুলতা পর্যন্ত অংশে টোল সড়কের নির্মাণকাজ চলমান আছে। ভুলতা থেকে মদনপুর পর্যন্ত অংশে মাটি ভরাটসহ অন্য কাজ চলমান রয়েছে।
ঢাকা বাইপাস সড়ক প্রকল্পের চিফ অপারেটিং অফিসার শফিকুল ইসলাম আকন্দ বলেন, সড়কে প্রাথমিক ব্যয় ছিল সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। বিভিন্ন জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির কারণে হয়তো পরিশেষে আমাদের ব্যয় বাড়বে কিছুটা। এখন পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার সম্পূর্ণ শেষ হয়েছে, আরও ৪২ কিলোমিটার পর্যন্ত সার্ভিস লোড শেষ হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমাদের অগ্রগতি ৭৫%। নারায়ণগঞ্জ অংশে ভূমি অধিগ্রহণ ও ইউটিলিটি শিফটিং ডিসেম্বরের মধ্যে সমাপ্ত হলে আগামী বছরের জুন মাসে প্রকল্পের নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ শেষে হয়ে যাবে। মানুষ যে কষ্ট ভোগ করতো এই সড়ক না হওয়ার কারণে। এই ১৮ কিলোমিটার চালু হওয়ার পর এটা তো সম্পূর্ণ সুবিধা পাবেই, তারা এখান থেকে মদনপুর পর্যন্ত আগে যেখানে ৫ থেকে ৭ ঘণড়া লাগতো, এখন মাত্র ৪০ মিনিটে যেতে পারবে। ১৮ কিলোমিটার দিয়ে ২০ মিনিটের মধ্যে কাঞ্চন পর্যন্ত চলে যেতে পারবে।