Swadhin News Logo
সোমবার , ২৫ আগস্ট ২০২৫ | ২৮শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. best
  2. আন্তর্জাতিক
  3. কৃষি ও প্রকৃতি
  4. ক্যাম্পাস
  5. খেলাধুলা
  6. চাকরি
  7. জাতীয়
  8. জোকস
  9. তথ্যপ্রযুক্তি
  10. দেশজুড়ে
  11. ধর্ম
  12. নারী ও শিশু
  13. প্রবাস
  14. বই থেকে
  15. বিচিত্র নিউজ

অধ্যক্ষ থাকেন ঢাকায়, কলেজ চালান অফিস সহকারী!

প্রতিবেদক
Nirob
আগস্ট ২৫, ২০২৫ ৭:৪৩ অপরাহ্ণ
অধ্যক্ষ থাকেন ঢাকায়, কলেজ চালান অফিস সহকারী!

কলেজের অবকাঠামো আছে। জাতীয় পতাকা উত্তোলন হয় নিয়মিত। কিন্তু শিক্ষক-শিক্ষার্থীর উপস্থিতি নেই। কলেজে আসেন না অধ্যক্ষ। থাকেন ঢাকায় কিংবা নীলফামারীতে। কলেজের দায়িত্ব পালন বলতে শুধু অফিস সহকারী ও আয়া-পিয়নের দায়সারা পদচারণা। এভাবেই চলছে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার কিসমত উল্লাহ বালাজান কৃষি ও কারিগরি ইনস্টিটিউট নামে কলেজের কার্যক্রম।

উপজেলা পরিষদ থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরে মির্জাপাড়া এলাকায় রৌমারী-ঢাকা মহাসড়কের পাশে দুই একর জায়গা নিয়ে, চকচকে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে নামমাত্র কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। সাইনবোর্ডে লেখা ‘ সাংবাদিক ফোরাম কর্তৃক পরিচালিত’! তবে কোথাকার কোন সাংবাদিক ফোরাম তার হদিস নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চার বছর মেয়াদী কৃষি ডিপ্লোমা ট্রেড নিয়ে কলেজটি ২০০৪ সালে স্থাপিত হয়। ২০১৯ সালে অধ্যক্ষ, ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীসহ ৭ জন এমপিওভুক্ত হন। পরে আরও এক কর্মচারী এমপিওভুক্ত হলেও কোনও শিক্ষক এমপিওভুক্ত হননি। তবে সম্প্রতি এনটিআরসিএ কর্তৃক ৯ জন শিক্ষক প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়োগের সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, এমপিওভুক্ত হলেও অধ্যক্ষ আব্দুল মতিন নিয়মিত কলেজে আসেন না। প্রতিষ্ঠানটি পরীক্ষা কেন্দ্র হওয়ায় অধ্যক্ষ শুধু পরীক্ষা চলাকালে কলেজে হাজিরা দেন। খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে মাঝে মাঝে শ্রেণি কার্যক্রম চালানো হয়। এসব কিছুর দেখভাল করেন প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী আমজাদ হোসেন। তিনিই প্রতিষ্ঠানের ‘হর্তাকর্তা’। শিক্ষার্থী ভর্তি, ক্লাস কিংবা পরীক্ষা পরিচালনা সবই দেখভালের দায়িত্ব তার।

অধ্যক্ষ আব্দুল মতিন থাকেন ঢাকা এবং নীলফামারী জেলায় নিজ বাড়িতে। শুধু পরীক্ষার সময় আসেন। কলেজের ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট রফিকুল ইসলাম ঢাকা মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় অ্যাডভান্সড কেয়ার স্কিল ডেভলপমেন্ট ইনস্টিটিউট নামে একটি কোচিং সেন্টার চালু করেছেন। তিনিও সেখানেই থাকেন। প্রতিষ্ঠানের সব দায়িত্ব পালন করেন অফিস সহকারী আমজাদ হোসেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজটির সদ্য সাবেক এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘কলেজে ভর্তি হলেও ক্লাস করতে হয়নি। শুধু পরীক্ষার সময় পরীক্ষা দিয়ে সনদ নিয়েছি।’

কলেজ সংলগ্ন স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘শুধু পরীক্ষার সময় পরীক্ষা হলেও বছরের বাকি সময় কলেজটি কার্যত বন্ধ থাকে। কয়েকজন কর্মচারী ছাড়া কাউকে দেখা যায় না। অফিস সহকারী আমজাদ হোসেন এলাকার ছেলে। তার সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, প্রশাসনের লোকজনের সখ্যতা রয়েছে। কেউ মুখ খুললে মামলা-হামলার ভয় দেখানো হয়। ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে থাকা আমজাদের ভাই রফিকুল ঢাকায় থাকেন। আবার নিয়মিত কলেজের বেতন ভাতা নেন। প্রযুক্তি ব্যবহার করলে সব তথ্য উঠে আসবে। কিন্তু তদন্তই কে করবে আর ব্যবস্থাই বা কে নেবে? প্রশাসন টাকা নিয়ে চুপচাপ।’

অফিস সহকারী আমজাদ হোসেন কলেজ অধ্যক্ষের নিয়মিত কলেজে উপস্থিত না থাকার বিষয়টি স্বীকার করলেও অন্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, ‘খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে ক্লাস নেওয়া হয়। বর্তমানে বোর্ড পরীক্ষা শেষ হওয়ায় ক্লাস নেই। নতুন শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি চলছে। অধ্যক্ষ স্যার বর্তমানে না এলেও তিনি কলেজে আসেন।’

অধ্যক্ষের ঢাকা ও নীলফামারীকে অবস্থানের প্রশ্নে আমজাদ বলেন, ‘তার বাড়ি নীলফামারীতে। তিনি ঢাকাতেও থাকেন। তবে কলেজে এলে তিনি এলাকায় থাকেন।’

সাংবাদিক ফোরাম কর্তৃক পরিচালিত লেখা থাকার প্রশ্নে অফিস সহকারী বলেন, ‘কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি নজমুল হক সরকার ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিক পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক। তারাই কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। এ জন্য সাইনবোর্ডে ওভাবে লেখা রয়েছে।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে অধ্যক্ষ আব্দুল মতিনকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজ্জ্বল কুমার হালদার বলেন, ‘বিষয়গুলো আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে জানতে হবে। অনিয়ম থাকলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।’

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার অনুমোদিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। এর কোনও বিকল্প নেই। অধ্যক্ষ প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত না আসার সুযোগ নেই। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক

আপনার জন্য নির্বাচিত