Swadhin News Logo
সোমবার , ২৫ আগস্ট ২০২৫ | ১২ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. best
  2. cassinoBR
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কৃষি ও প্রকৃতি
  5. ক্যাম্পাস
  6. খেলাধুলা
  7. চাকরি
  8. জাতীয়
  9. জোকস
  10. তথ্যপ্রযুক্তি
  11. দেশজুড়ে
  12. ধর্ম
  13. নারী ও শিশু
  14. প্রবাস
  15. বই থেকে

‘শুধু বলুক সন্তানরা জীবিত নাকি মারা গেছে’, সেই ১৮২ জন কোথায়?

প্রতিবেদক
Nirob
আগস্ট ২৫, ২০২৫ ১০:৪০ অপরাহ্ণ
‘শুধু বলুক সন্তানরা জীবিত নাকি মারা গেছে’, সেই ১৮২ জন কোথায়?

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গাজী টায়ার কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার এক বছর অতিবাহিত হলেও নিখোঁজ ১৮২ জনের সন্ধান এখনও মেলেনি। নিখোঁজদের সন্ধানের দাবিতে স্বজনরা কিছুদিন পর পর পুলিশ ও প্রশাসনের অফিসে অফিসে তাগাদা দিচ্ছেন। তবে পুলিশ বলছে, নিখোঁজদের মধ্যে ৭৫ জন ঘটনাস্থলে যাওয়ার আলামত পেয়েছে পুলিশ। বাকিদের বিষয়ে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন।

গত বছরের ২৫ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গাজী টায়ার কারখানায় অগ্নিকাণ্ড ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। ভবনটিতে ২১ ঘণ্টা ধরে আগুন জ্বলার ফলে ঝুকিপূর্ণ ভবন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ফলে ভবনের ভেতরে উদ্ধার অভিযান চালায়নি কর্তৃপক্ষ। তবে ১৫ খণ্ড হাড় পাওয়া গেছে। গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর গাজী টায়ার কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে ৮ সদস্যের তদন্ত কমিটি। সেখানে বলা হয়েছে, ১৮২ জন নিখোঁজ রয়েছেন।

এদিকে এ ঘটনার এক বছর পর এসে নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনেরা বলছেন, নিখোঁজরা বেঁচে আছে নাকি মরে গেলো তা জানতে চান তারা।

নিখোঁজ রাকিবের বাবা মজিবর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিগত এক বছর ছেলেকে দেখি না। একই ঘটনায় আমার ভাতিজা মাসুদও নিখোঁজ রয়েছে। তাকেও পাওয়া যায়নি। আমার ছেলে রাকিব সংসারের হাল ধরেছিল। হোটেলের ব্যবসা করে সংসার চালাতো, সে নিখোঁজ হওয়ার পর এখন খুব কষ্টে আছি। সংসারের খরচ বহন করতে আমাকে ছেলের হোটেল চালাতে হচ্ছে। এই বৃদ্ধ বয়সে এখন আর কাজ করতে পারি না। তারপরও পেটের দায়ে কাজ করতে হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নিখোঁজ ছেলে ও ভাতিজার সন্ধানে পুলিশের দুয়ারে দুয়ারে অনেক ঘুরেছি। আমাদের শুধু একটাই প্রশ্ন, সন্তানরা বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে তা একটা বলে দেন। কিন্তু এই কথাটুকু কেউ বলতে পারেনি। পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তার কাছে গিয়ে এ বিষয়ে কোনও উত্তর পাইনি। তাই এখন আশা ছেড়ে দিয়েছি।’

নিখোঁজ আমানুল্লাহর মা রাশিদা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে আমানুল্লাহ তার বন্ধু নাহিদকে সঙ্গে নিয়ে ওই দিন গাজী কারখানা দেখতে গিয়েছিল। সেই যে গেলো আর ফিরে আসেনি। আমর ছেলে গার্মেন্টে কাজ করে সংসারের খরচ চালাতো। এখন ওর ছোট ভাই সংসারের হাল ধরেছে। কিন্তু এই বাজারের এক জনের উপার্জন দিয়ে সংসার ভালোভাবে চলে না। ফলে খুব কষ্টে আছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেকদিন আগে এক ব্যক্তি আমাদের কাছে ফোন করে জানায়, আমার ছেলেসহ নিখোঁজ সবাই বেঁচে আছে। ফোন করে এক ব্যক্তি সে তথ্য জানিয়েছে। আমার ছেলের আকার ও গায়ের রঙ বলেছে। ফোনে আমার ছেলের কান্নার শব্দ পেয়েছি। তবে কোথায় তাদের রাখা হয়েছে তা জানা নেই। এ বিষয়ে পুলিশ-প্রশাসনকে জানিয়েছি। কিন্তু এখনও কেউ সন্ধান দিতে পারেনি।’

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ ঘটনার সময়ে আমি এ জেলায় ছিলাম না। আমি এখানে যোগদান করার পর নিখোঁজের স্বজনরা আমার কাছে একবার এসেছিল। বিষয়টি পুলিশকে গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্য আমার কাছে লিখিত আবেদন করে অনুরোধ করেছিল। আমি তাদের সেই আবেদনের কাগজে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্য পুলিশকে লিখে দিয়েছি। এ বিষয়ে পুলিশ বলতে পারবে।’

নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আলমগীর হুসাইন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে অনেক আগে। এরপর বিষয়টি নিখোঁজদের মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে শনাক্ত করা ও তদন্ত করার জন্য জেলা পুলিশকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। তারা এ বিষয়ে বলতে পারবে।’

নিখোঁজদের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিষয়টি আমরা এখনও তদন্ত করে দেখছি। গাজী টায়ার কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের সময়ে নিখোঁজদের মধ্যে ৭৫ জন সেখানে গিয়েছিল তা শনাক্ত করতে পেয়েছি। ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে গিয়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে। বাকিদের বিষয়ে তদন্ত চলছে।’

উদ্ধার হওয়া হাড়-গোড়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ফরেনসিক পরীক্ষা করে কারও ডিএনএর সঙ্গে ম্যাচ করেনি। তবে নিখোঁজদের অনেক স্বজন ডিএনএ পরীক্ষা করাতে আগ্রহ দেখায় না। এ বিষয়েও তদন্ত চলছে।’

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৫ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গাজী টায়ার কারখানায় অগ্নিকাণ্ড ও লুটপাটের ঘটনায় গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে আট সদস্যের তদন্ত কমিটি।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৫ আগস্ট কারখানাতে লুটপাটের ঘটনা ঘটে। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ স্থানীয় কিছু ব্যক্তিকে অর্থের বিনিময়ে কারখানা পাহারার দায়িত্ব দেন। কয়েকদিন পর পাহারার দায়িত্ব নেওয়াকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। একটি পক্ষ পাহারার জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে অতিরিক্ত টাকা দাবি করে। এতে কারখানা কর্তৃপক্ষ অস্বীকৃতি জানায়। এরপর হুমকি দিয়ে গত ২৫ আগস্ট কারখানা ত্যাগ করে।

এদিকে গাজী টায়ার কারখানার মালিক গোলাম দস্তগীর গাজী (সাবেক সংসদ সদস্য) গ্রেফতার হওয়ার খবর মিডিয়াতে প্রচার হওয়ার পরে গত ২৫ আগস্ট এলাকার লোকজন আনন্দ মিছিল বের করেন। বেলা সাড়ে ১১টায় খাদুন উত্তরপাড়া জামে মসজিদ (খাঁ পাড়া) থেকে ঘোষণা আসে বিকাল ৩টায় রূপসী মোড় ও খাদুন মোড়ে জড়ো হওয়ার জন্য। এক পর্যায়ে লুটপাট করার উদ্দেশে দুষ্কৃতিকারীরা দুপুর ১২টায় কারখানায় প্রবেশ করে প্রায় ১৮০ শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারখানা থেকে বের করে দেয় এবং লুটপাট শুরু করে। বিকাল সাড়ে ৪টায় আরেক দল দুষ্কৃতিকারী কারখানায় প্রবেশ করে লুটপাট শুরু করে।

পরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। দুষ্কৃতিকারীরা একাধিক দলে ভাগ হয়ে বিকালে কারখানার মধ্যে লুটপাট শুরু করে। লুটপাটকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে কারখানার ৬ষ্ঠ তলা বিশিষ্ট একটি পাকা মিক্সিং ভবনে ভয়াবহ আগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ভবনের প্রতিটি তলায় থাকা বিভিন্ন মালামালসহ যন্ত্রপাতি পুড়ে যায়।

তাছাড়া গত ৫ আগস্ট থেকে কারখানাটি বন্ধ ছিল, ফলে অগ্নিকাণ্ডের সময়ে প্রতিষ্ঠানে কোনও কর্মকর্তা ও কর্মচারী সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। এমনকি কোনও কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিখোঁজ নেই। অগ্নিকাণ্ডের ওই দিন থেকে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে গ্যাস ও বৈদ্যুতিক সংযোগের কারণে বর্ণিত অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়নি।

ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে, অধিক পরিমাণে দাহ্য পদার্থ থাকার কারণে ভবনটিতে ২১ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ৩০ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টা ৫৫ মিনিটের সময় আগুন সম্পূর্ণভাবে নির্বাপণ করা হয়। ভবনে আগুন লাগার পরে ১০-১৫ জন ব্যক্তি দ্রুত বের হয়ে পালিয়ে যায়। ভবন থেকে পরে কোনও লাশ উদ্ধার করা যায়নি। তবে ১ সেপ্টেম্বর ভবনের ভেতর থেকে দেহের বিভিন্ন অংশের ১৫ খণ্ড হাড় পাওয়া যায়।

ফায়ার সার্ভিস কর্তৃক ভবনটিতে উদ্ধার কাজ পরিচালনার জন্য মতামত চাওয়া হলে বুয়েট টিমসহ নারায়ণগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগের প্রতিনিধি সরেজমিনে ফায়ার সার্ভিসের টিটিএল এবং ড্রোন দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের বিভিন্ন ফ্লোর পরিদর্শন করেন। ভবনের চার ও পাঁচ তলার ছাদ ধসে তিন তলার ওপর পতিত হয়েছে এবং কলামগুলো ফেটে গেছে। আগুনের তীব্রতা বেশি থাকায় ভবনের আরসিসি পিলার, বিম ও ছাদের ঢালাই খসে পড়ে যেতে দেখা গেছে। অত্যধিক তাপমাত্রার কারণে বিভিন্ন ফ্লোরের বিম এবং ছাদের রড গুলো বাঁকা এবং এলোমেলো অবস্থায় আছে। ইটের দেয়ালগুলো বাঁকা হয়ে হেলে পড়ে গেছে। ফলে ভবনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। উদ্ধার কাজ করা উচিত হবে না এবং ভবনটি অপসারণ করতে হলে পরিকল্পনা মাফিক কাজ করতে হবে বলে কমিটি জানিয়েছেন। ফলে ভবনের ভেতরে উদ্ধার কাজ চালানো সম্ভব হয়নি।

এরপর অনেকেই স্বজন নিখোঁজ রয়েছে বলে দাবি করেন। এ নিয়ে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, শিক্ষার্থী ও তদন্ত কমিটি কর্তৃক গণশুনানিতে ভিন্ন ভিন্ন তালিকা তৈরি করা হয়। তালিকা গুলো একত্রিত করে মোট ১৮২ জন নিখোঁজ ব্যক্তির ঠিকানা পাওয়া যায়।

সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক