খুলনার ডুমুরিয়ায় যুবদল নেতা এস এম শামীম হোসেনকে পারিবারিক কলহের জেরে খুন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় তার স্ত্রী ফাতেমা আক্তার ও শ্যালককে (১৭) গ্রেফতার করা হয়েছে। হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ফাতেমা আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) সকালে প্রেস ব্রিফিং করে এসব তথ্য জানিয়েছেন খুলনার পুলিশ সুপার টি এম মোশাররফ হোসেন।
গত শুক্রবার রাতে ডুমুরিয়ার আঠারোমাইল এলাকার তিনতলায় নিজ বাড়িতে খুন হন যুবদল নেতা শামীম হোসেন (৩৬)। তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে হত্যা করা হয়। শামীম সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ইসলামকাটি ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।
পুলিশ জানায়, শামীমকে হত্যার জন্য যে ছুরিটি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি কয়েকদিন আগে শামীম স্ত্রীর কাছে রেখেছিলেন। হত্যার পর সেই ছুরি বাড়ির পাশের জলাশয়ে ফেলে দেওয়া হয়, পরে উদ্ধার করা হয়।
খুলনা জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ‘শামীম ডুমুরিয়া উপজেলার বেতাগ্রামে বসবাস করতেন। গত শুক্রবার রাত পৌনে ১০টা থেকে সোয়া ১১টার মধ্যে নিজ বাড়িতে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা গলা কেটে হত্যা করে। খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গত রবিবার বিকালে নিহত যুবদল নেতার মা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রশিদা বেগম অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে ডুমুরিয়া থানায় মামলা করেন। এরপর ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত এবং হত্যার রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে পুলিশ। সোমবার বিকালে আঠারোমাইল এলাকায় নিজ বাড়ি থেকে শামীমের স্ত্রী ও শ্যালককে গ্রেফতার করে পুলিশ ও র্যাব।’
খুলনা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সি-সার্কেল) আবির সিদ্দিকী জানিয়েছেন, শামীমের স্ত্রী ফাতেমা বলেছেন—শামীম দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত এবং বেকার। আগে তার যে গ্যারেজটা ছিল, সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে। এসব বিষয় নিয়ে শামীম তার স্ত্রীর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতেন। একপর্যায়ে তিনি স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এই কাজের জন্য তার ফুফাতো ভাইকে বাড়িতে ডেকে আনেন। ঘটনার রাতে বাড়ির তিনতলায় বসে ইয়াবা সেবন করছিলেন শামীম। সে সময় স্ত্রী পাশে বসে ছিলেন। তখন তার ভাইকে ফোন দিয়ে তিনতলায় ডাকেন। শামীমের শ্যালক তিনতলায় এলে স্ত্রী ওয়াশরুমে যাওয়ার অজুহাতে রুমের বাইরে দাঁড়ান। এ সময় ভাইকে ইশারা করলে বড় একটা ছুরি দিয়ে সে শামীমকে কোপ মারে। ছুরিটা শামীম কিছুদিন আগে এনে স্ত্রীর কাছে রাখতে দিয়েছিলেন। ফাতেমার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী বাড়ির পাশের জলাশয় থেকে ছুরিটি উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় অধিকতর তদন্ত অব্যাহত আছে।’
ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুদ রানা বলেন, ‘শামীম হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে স্ত্রী ও শ্যালককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার স্ত্রী স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। শ্যালককে যশোর কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছে।’

















