বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) বহরে চলতি বছরেই যুক্ত হবে আরও দুটি নতুন জাহাজ। বিএসসির নিজস্ব অর্থায়নে জাহাজ দুটি কেনা হচ্ছে। দুই জাহাজের প্রত্যেকটি ৫৫-৬০ হাজার টন পণ্য বহন করতে সক্ষম। জাহাজ দুটি চীনা শিপইয়ার্ডে নির্মিত হলেও দুটির সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে আমেরিকান। যে কারণে জাহাজগুলো ভবিষ্যতে বিশ্বের কোনও বন্দরে নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়তে হবে না। বহরে যুক্ত হলে জাহাজ দুটি থেকে বছরে ১৫০ কোটি টাকা লাভ আসবে বলে জানিয়েছেন বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মাহমুদুল মালেক।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) চট্টগ্রাম বিএসসির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘বর্তমানে বিএসসির বহরে পাঁচটি জাহাজ রয়েছে। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সংস্থাটি সর্বোচ্চ ২৪৯ কোটি ৬১ লাখ টাকা বার্ষিক মুনাফা অর্জন করেছে। এ বছর নতুন দুটি যুক্ত হচ্ছে। আরও তিনটি কেনার জন্য সরকার অনুমোদন দিয়েছে। এ তিনটির জন্য সরকারের তরফ থেকে বিদেশি ঋণে অর্থায়ন করা হবে। পাশাপাশি জিটুজি পদ্ধতিতে চীন থেকে আরও পাঁচটি জাহাজ কেনা হচ্ছে। বর্তমানে থাকা ৫টি জাহাজে কোনও বিদেশি ক্রু নেই।’ নতুন যেসব জাহাজ বহরে যুক্ত হবে সেগুলোতেও শতভাগ দেশীয় ক্রু নিয়োগ দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। আগামী ৫ বছরে বিএসসির বহরে মোট ১৪টি জাহাজ যুক্ত হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘এরই মধ্যে আমরা জাহাজ দুটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। এর মধ্যে একটির ৮৫-৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে একটি আগামী সেপ্টেম্বর মাসের শেষ কিংবা অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে আমাদের সরবরাহ করা হবে। অন্যটির কাজ প্রায় ৪৫-৫০ শতাংশ শেষ হয়েছে। এটিও আগামী নভেম্বর মাসের শেষের দিকে অথবা ডিসেম্বর মাসের শুরুতে সরবরাহ করার কথা জানিয়েছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি। জাহাজ দুটি চীনের নেন ইয়াং শিপইয়ার্ডে নির্মিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের হেলেনিক ড্রাই বাল্ক ভেঞ্চারস এলএলসি নামের প্রতিষ্ঠানটি দরপত্রে সর্বনিম্ন দরদাতা নির্বাচিত হয়েছে। ৯৩৬ কোটি টাকায় (৭৬ দশমিক ৬৯৮ মিলিয়ন ডলার) জাহাজ দুটি কেনা হচ্ছে। এতে দাফতরিক প্রাক্কলিত মূল্যের চেয়ে ৫৫ কোটি টাকা কমে জাহাজ দুটি কেনা হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতি জাহাজের মূল্য ৩৮.৩৪৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা সরকারি প্রাক্কলিত মূল্যের তুলনায় ৪.৬০ শতাংশ কম। বাংলাদেশি মুদ্রায় একটি জাহাজটির মূল্য প্রায় ৪৬৭ কোটি টাকা।’
কমোডর মাহমুদুল মালেক বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশি পতাকাবাহী ১০৫টি জাহাজের মধ্যে এ জাহাজ দুটিই সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সমন্বিত এবং জ্বালানি সাশ্রয়ী। একই ওজনের অন্য জাহাজে বর্তমানে দৈনিক গড়ে ২৪ মেট্রিক টন জ্বালানি ব্যবহার হলেও জাহাজ দুটিতে দৈনিক ২০ মেট্রিক টন জ্বালানি ব্যবহৃত হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএসসির নির্বাহী পরিচালক (বাণিজ্য) মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা, নির্বাহী পরিচালক (প্রযুক্তি) ইঞ্চিনিয়ার মোহাম্মদ ইউসুফ, সচিব আবু সাফায়াৎ মুহাম্মদ শাহেদুল ইসলাম, মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) সাজিয়া পারভীন প্রমুখ।
১৯৭২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি যাত্রা শুরু করে বিএসসি। বিএসসির বহরে প্রথম জাহাজ যুক্ত হয় ‘বাংলার দূত’। ১৯৭৩ সালে ‘বাংলার সম্পদ’ নামের আরেকটি জাহাজ যুক্ত হয়। এরপর থেকে মোট ৪৪টি জাহাজ সংগ্রহ করা হলেও বয়স এবং দুর্ঘটনার কারণে ২০২৪ সালের মধ্যে ৩৯টি জাহাজ বিক্রি করা হয়।

















