সীমান্ত অতিক্রম করে মিয়ানমার জলসীমায় ঢুকে পড়া টেকনাফে ১৯টি ট্রলারসহ কোস্টগার্ডের হাতে আটক ১২২ জেলেকে জলসীমা অতিক্রম না করার অঙ্গীকারে স্ব স্ব মালিক ও পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ট্রলারে থাকা ৯৩ জন রোহিঙ্গাকে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার এবং ক্যাম্পের এপিবিএন পুলিশের মাধ্যমে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে। বাকি ২৯ জন বাংলাদেশি জেলে ও ১৯ ট্রলার পুলিশের মাধ্যমে স্ব স্ব মালিক ও পরিবারকে হস্তান্তর করা হয়।
শনিবার (৩০ আগস্ট) সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করেন টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) আবু জায়েদ মো. নাজমুন নূর।
তিনি বলেন, ‘শনিবার সকালে তাদেরকে পুলিশের হেফাজতে দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক , শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এপিবিএন পুলিশের সিদ্ধান্ত অনুসারে ক্যাম্পে পাঠানো হয়।’
ওসি আরও বলেন, ‘বাকি ২৯ জন বাংলাদেশি জেলে ও ১৯ ট্রলার কোস্টগার্ডের সিদ্ধান্তে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাকিব হাসান চৌধুরীর উপস্থিতিতে সামাজিক বিচারের মাধ্যমে ট্রলার মালিক সমিতির নেতা ও মালিকগণের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে জলসীমা অতিক্রম না করার অঙ্গীকার দেওয়ায় জেলেদের সতর্ক করে স্ব স্ব পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।’
কোস্টগার্ড সদর দফতরের গণমাধ্যম কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক জানান, গত শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়া থেকে শাহপরীর দ্বীপ মোহনা পর্যন্ত নাফ নদের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মিয়ানমার জলসীমায় ঢোকা ১৯ ট্রলারসহ ১২২ জেলেকে ফেরত এনেছিল কোস্টগার্ড সদস্যরা।
তিনি আরও বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাতের কারণে সীমান্তের বড় অংশ এখন বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। এর ফলে শূন্যরেখা অতিক্রম করে মিয়ানমারে ঢুকলেই জেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ অবস্থায় জেলেদের ফেরত আনতে গিয়ে কোস্টগার্ডসহ সীমান্তে নিয়োজিত বাহিনীকে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। এতে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, মাদক ও অস্ত্র পাচার রোধেও চ্যালেঞ্জ বাড়ছে।’
ফেরত আনা জেলেদের শাহপরীর দ্বীপ কোস্টগার্ড স্টেশনে হেফাজতের পর তাদের থানা পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছিল।
ট্রলার মালিকদের দাবি, সাগরে মাছ ধরতে গেলে সাগরে ডুবোচরের কারণে নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্ট দিয়েই যাতায়াত করতে হয়। তা না হলে সাগরে মাছ ধরা বন্ধ হয়ে যাবে।
ট্রলার মালিক সমিতি ও বিজিবি সূত্রে জানা যায়, গত আট মাসে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে নাফ নদসংলগ্ন এলাকা থেকে অন্তত ৩০০ জেলেকে অপহরণ করেছিল আরাকান আর্মি। তাদের মধ্যে বিজিবির সহায়তায় ২০০ জনকে কয়েক দফায় ফেরত আনা হয়। বাকি ১০০ জন জেলে এখনও আরাকান আর্মির হেফাজতে রয়েছেন। এর মধ্যে গত চার দিনে ৪৬ জেলেকে ধরে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি।

















