কারও কপালে জখম, কারও হাতে, বুকে-পিঠে আবার কারও পায়ে জখম। সহপাঠী বন্ধুদের কাঁধে ভর করে একে একে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে আসতে থাকেন সংঘর্ষে আহত শিক্ষার্থীরা। রবিবার (৩১ আগস্ট) বিকাল থেকে চমেক হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি বিভাগের সামনে ভিড় আহত এবং তাদের স্বজন-সহপাঠীদের। আহত শিক্ষার্থীরা হাসপাতাল থেকে বের হচ্ছেন হাতে-মাথায়-পায়ে ব্যান্ডেজ মোড়ানো অবস্থায়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে শনিবার রাতে প্রথম দফা সংঘর্ষের পর রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুনরায় সংঘর্ষ ঘটে। এ সময় উভয়ের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। সংঘর্ষ থেমে থেমে চলে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত। পরে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বহু শিক্ষার্থী আহত আহত হন।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আলাউদ্দিন তালুকদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় মোট ১০৮ জন শিক্ষার্থী চিকিৎসার জন্য এসেছেন। এর মধ্যে শনিবার রাতে প্রথম দফায় সংঘর্ষে আহত ৩০ শিক্ষার্থী চিকিৎসা নেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে ভর্তি করা হয়। আজ দুপুরে দ্বিতীয় দফা সংঘর্ষের ঘটনায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৭৮ জন আহত শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিয়েছেন। অধিকাংশই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। গুরুতর আহত ২০ থেকে ২৫ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। এর বাইরেও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে কেউ কেউ চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে শুনেছি। তাদের পরিসংখ্যান আমাদের কাছে নেই। তবে দুজন ছাত্র বেসরকারি দুটি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে একজন ন্যাশনাল হাসপাতালে অপরজন পার্ক ভিউ হাসপাতালে রয়েছেন।’
চবি মেডিক্যাল সেন্টারে দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. ফারহানা বলেন, ‘আজ সকাল থেকে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়ে চবি মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কমপক্ষে ২৫ জনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আমার কর্মজীবনে এত সংখ্যক শিক্ষার্থী একসঙ্গে হতাহতের ঘটনা ঘটতে দেখিনি।’
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন পরিস্থিতিতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারার আদেশ জারি করেছেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মুমিন।
এর আগে শনিবার রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থীকে বাসার দারোয়ান কর্তৃক মারধরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকায় সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়, যা রাতভর চলতে থাকে। এতে আহত হন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী।