চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র ইমতিয়াজ আহমেদ সায়েম মারাত্মকভাবে আহত হন। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় চট্টগ্রাম নগরীর পার্কভিউ হাসপাতালে নেওয়া হলে ওইদিন রাতেই তার অস্ত্রোপচার হয়। পরে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। চিকিৎসকরা জ্ঞান ফেরার সম্ভাব্য সময় দেন ৭২ ঘণ্টা। কিন্তু পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও জ্ঞান ফেরেনি সায়েমের। অপর শিক্ষার্থী সমাজতত্ত্ব বিভাগের মোহাম্মদ মামুনের মাথার খুলিতে গুরুতর জখম রয়েছে।
সায়েমের বর্তমান কনশাস লেভেল (চেতনার মান) এখন ৮-৯-এর মধ্যে আছে। তবে একজন স্বাভাবিক মানুষের কনশাস লেভেল থাকে ১৫। চিকিৎসকের মতে, ১০-এর ওপরে ওঠার আগপর্যন্ত তাকে আশঙ্কামুক্ত বলা যাবে না।
সায়েমের বিষয়ে বুধবার মেডিক্যাল বোর্ড বসিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সিটি স্ক্যানের রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে রাতের মধ্যে তাকে দ্বিতীয়বারের মতো অস্ত্রোপচার করানো হবে। বৃহস্পতিবার বাংলা ট্রিবিউনকে সায়েমের অস্ত্রোপচার হয়নি বলে নিশ্চিত করেন পার্কভিউ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এটিএম রেজাউল করিম।
সায়েমের বিষয়ে ডা. রেজাউল করিম বলেন, ‘সায়েম এখন মোটামুটি স্থিতিশীল আছে। আমরা মূলত গতকাল তার অস্ত্রোপচার করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সিটিস্ক্যানটা আগের মতোই আছে, রক্তক্ষরণটা বাড়েনি। সেজন্য আর অস্ত্রোপচার করানো হয়নি। তা ছাড়া সে কনশাস লেভেল ৩ নিয়ে ভর্তি হয়েছিল, এখন ৮-৯-এ আছে। আমরা তাকে ৭২ ঘণ্টা সময় দিয়েছি, কিন্তু সবকিছু তো আর সময় দিয়ে হয় না। ওর মস্তিষ্কের ইনজুরি বেশি ছিল। যে কারণে কিছু বলা যাচ্ছে না। এটা মূলত আল্লাহর রহমত, দেখা যাক না আল্লাহ কী করেন।’
ইমতিয়াজের ভাই আসাদুজ্জামান সজীব বলেন, ‘গত পরশুদিন এবং গতকাল যে সিটি স্ক্যান করা হয়েছিল, তার মধ্যে গতকালেরটা কিছুটা ভালো এসেছে। অর্থাৎ মাথায় যে রক্তক্ষরণ হয়েছিল তা কিছুটা কমে আসছে। রক্তক্ষরণ যদি বেশি হতো তাহলে অস্ত্রোপচার করানো লাগতো।’
ইমতিয়াজের বাড়ি কুমিল্লায়। তবে তার পরিবার থাকে বগুড়ায়। ছেলে আহত হওয়ার খবর পেয়ে সেখান থেকে সোমবার সকালে তার বাবা ও মা চট্টগ্রামে আসেন। ছেলে সুস্থ হয়ে ফিরবেন, সেই অপেক্ষায় আইসিইউর সামনে তাদের দিন কাটছে।
এদিকে, পার্কভিউ হাসপাতালে একই সময়ে ইমতিয়াজের সঙ্গে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয় আহত আরেক শিক্ষার্থী সমাজতত্ত্ব বিভাগের মোহাম্মদ মামুনকে। তারও মাথার খুলিতে জখম রয়েছে। অবস্থার উন্নতি হওয়ায় সোমবার বিকালে তার লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়া হয়। তাকে কেবিনে রাখা হয়েছে।
মামুনের বন্ধু আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘মামুনকে গতকাল বিকাল ৫টায় কেবিনে আনা হয়েছে। ডাক্তার বলেছেন, পুরোপুরি সুস্থ হতে দুই-তিন মাস সময় লাগবে। মামুনের মাথার খুলি খুলে ফ্রিজে রাখা হয়েছে, কয়েক মাস পর তা লাগানো হবে। স্বাভাবিক কথাবার্তা সে বলতে পারছে না।’
উল্লেখ্য, গত শনিবার দিবাগত রাত সোয়া ১২টা থেকে পরদিন রবিবার দুপুর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কয়েক দফা সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে মারধরের অভিযোগ থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত। সংঘর্ষে সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক কামাল উদ্দিন, প্রক্টর অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ ও অন্তত ২০০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। স্থানীয়দের দাবি, এ ঘটনায় ১০ থেকে ১২ জন স্থানীয় বাসিন্দা আহত হন।

















