রংপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও জাতীয় পার্টির (জাপা) কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেছেন, ‘আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি অংশ নেবে এবং ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেবে। ইতোমধ্যে রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করার কাজ শেষ পর্যায় রয়েছে। বেশিরভাগ আসনেই জাপা প্রার্থীরা জয়ী হবে বলে আশা প্রকাশ করছি।’
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রংপুর নগরীর সেন্ট্রাল রোডস্থ জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে রংপুর বিভাগীয় জাতীয় পার্টির বিশেষ জরুরি সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টি নির্বাচনমুখী দল। বিগত সকল নির্বাচনে জাতীয় পার্টি অংশগ্রহণ করেছে। শুধু ৯৫-এর ১৫ ফ্রেরুয়ারির নির্বাচন ছাড়া। অনেক জায়গায় প্রার্থী চূড়ান্ত করে ফেলা হয়েছে। কিছু প্রার্থী সিলেকশন বাকি রয়েছে। জেলা কমিটিগুলোর মতামতের ওপর ভিত্তি করে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।’
মোস্তফা বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। আমরা চাই নির্বাচনের পরিবেশ আর লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। যাতে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল ও তাদের স্ব স্ব দলের প্রার্থীরা নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ পায়। ইনশাআল্লাহ জাতীয় পার্টি ভালো ফলাফল করবে। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) অংশ নিতে পারছে না। এক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে জনগণ তাদের পছন্দের তালিকার প্রথমেই রাখবে।’ সারা দেশে জাতীয় পার্টি অনেক আসনে বিজয়ী হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা সারা দেশে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবো। এক্ষেত্রে ফরিদপুর, গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত এলাকায় যদি আওয়ামী লীগের ক্লিন ইমেজের নেতা থাকে, তারা যদি জাতীয় পার্টিতে যোগ দিতে চায় এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনও সহিংসতার মামলা না থাকে এবং যোগ্য প্রার্থী হয় তাহলে জাতীয় পার্টি অবশ্যই তাদের দলে নেবে এবং মনোনয়ন দেবে। আমরা আমাদের প্রার্থীদের ক্রাইসিস ওভারকাম করার জন্য অবশ্যই দলে নেবো।’
আরেক প্রশ্নের উত্তরে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ‘জাতীয় পার্টির প্রার্থীর চাইতে যদি ভালো প্রার্থী পাওয়া যায় এবং তাদের যদি ক্লিন ইমেজ থাকে। তাদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় জড়িত না থাকার কোনও অভিযোগ না থাকে অবশ্যই আওয়ামী লীগের হলেও আমরা দলে নেবো এবং তাদের মনোনয়ন দেবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘রংপুর বিভাগের গাইবান্ধা, লালমনিরহাট আর ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুরে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে হামলা করে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। অন্যান্য জেলায় যাতে দলীয় কার্যালয়ে হামলা না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ এবং প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আগাম অবহিত করার জন্য জেলার নেতাদের বলা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশে এখন মব সন্ত্রাস চলছে। মুক্তিযোদ্ধাদের লাঞ্ছিত, গলায় জুতার মালা পরানো, মারধর করাসহ তাদের অপমান-অপদস্থ করা হচ্ছে। স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত, নিবন্ধনবিহীন দল এনসিপি এর পেছনে রয়েছে। আমরা স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য সব ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। ৭১-কে যারা অস্বীকার করে তাদের সঙ্গে জাতীয় পার্টি কোনোদিন থাকবে না।
তিনি ঢাকায় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দ্বিতীয় দফায় হামলার নিন্দা জানান এবং সেইসঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে দলের কার্যালয়ে যারা হামলা আর মব সন্ত্রাস চালাচ্ছে তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় জাপা কার্যালয়ে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
সভা সূত্রে জানা গেছে, দলীয় কার্যালয়ে রুদ্ধদ্বার সভায় বিভিন্ন জেলা থেকে আসা জাতীয় পার্টির নেতারা বলেন, ‘জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনে অংশ নিলে রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনের মধ্যে ২৫টিতেই জয়ী হবে। মব সন্ত্রাসের কারণে এনসিপি-জামায়াত জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। সাধারণ মানুষ বুঝতে পারছে দেশে কী চলছে।’ ফলে জাতীয় পার্টির পক্ষে ব্যালট বিপ্লব হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়।
সভায় রংপুর বিভাগের ৮ জেলার সভাপতি-সম্পাদক ছাড়াও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। তারা বিশেষ জরুরি সভায় বক্তব্য দেন। সভায় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মহানগর সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর জেলা আহ্বায়ক আজমল হোসেন লেবু, সদস্যসচিব আব্দুর রাজ্জাকসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

















