সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া দুটি নৌযানসহ বাংলাদেশি ১৫ জন জেলেকে ধাওয়া করে ধরে নিয়ে গেছে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় কক্সবাজারের টেকনাফের সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে সাগরের ‘সীতা’ নামক এলাকা থেকে তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়।
তবে জেলেদের নাম-ঠিকানা জানা যায়নি। বুধবার রাত ৯টার দিকে বিষয়টি বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন টেকনাফের কায়ুকখালী ঘাট ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি সাজ্জাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারের সময় বাংলাদেশি জেলেদের ধাওয়া করে আরাকান আর্মি। এ সময় কায়ুকখালী ঘাটের ইউনুস এবং দেলোয়ারের মালিকানাধীন দুটি ট্রলারসহ ১৫ জেলেকে ধরে নিয়ে যায় তারা। এ ছাড়া ঘাটের অনেক জেলে ট্রলার নিয়ে সাগরে মাছ শিকারে বের হয়েছেন। এর মধ্যে অনেকের ট্রলারের জেলেদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে আছি।’
এদিকে, মিয়ানমারভিত্তিক গ্লোবাল আরাকান নেটওয়ার্ক (জিএএন) নামের একটি ওয়েবসাইটে পাঁচটি ট্রলারসহ ৪০ জন বাংলাদেশি জেলেকে আটকের খবর প্রচার করা হয়েছে। বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে জিএএনের ওয়েবসাইটে পাঁচটি ট্রলারসহ ৪০ জন বাংলাদেশি জেলেকে আটকের খবর প্রচার করা হয়। তিন দফায় পাঁচটি ট্রলারে ৪০ জন জেলে তাদের জলসীমানায় অনুপ্রবেশ করায় আটকের বিষয়টি জানানো হয়।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফয়জুল ইসলাম বলেন, ‘সাগরে মাছ ধরার সময় ট্রলারসহ ১৫ জেলেকে আরাকান আর্মি ধরে নিয়ে গেছে বলে শুনেছি। এ ঘটনায় স্থানীয় জেলে ও ট্রলার মালিকদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা হয়েছে। তবে কয়টি ট্রলারে ঠিক কতজন জেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সেটি এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আপাতত ১৫ জন শুনছি।’
কায়ুকখালী ঘাট ট্রলার মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, গত ২৩ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয়টি ট্রলারসহ ৬৪ জন জেলেকে ধরে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি। এর মধ্যে গত ১ সেপ্টেম্বর তিনটি নৌযানসহ বাংলাদেশি ১৮ জন জেলেকে ধরে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি। জেলেদের নিরাপদে ফেরাতে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জরুরি হস্তক্ষেপ চেয়েছেন ট্রলার মালিক সমিতির নেতারা।
ট্রলার মালিক সমিতি ও বিজিবি সূত্রে জানা যায়, গত আট মাসে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নাফ নদ সংলগ্ন এলাকা থেকে অন্তত ৩১৮ জেলেকে অপহরণ করেছে আরাকান আর্মি। এর মধ্যে বিজিবির সহায়তায় প্রায় ২০০ জনকে ফেরত আনা হলেও বাকি জেলেরা এখনও তাদের হেফাজতে রয়েছেন। এর মধ্যে গত কয়েক দিনে আরও ৬৪ জন জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে সশস্ত্র এই গোষ্ঠী।
জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি জেলেদের পরিবার ও জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে শুনেছি। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। জেলেদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’