Swadhin News Logo
শুক্রবার , ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ৮ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. best
  2. cassinoBR
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কৃষি ও প্রকৃতি
  5. ক্যাম্পাস
  6. খেলাধুলা
  7. চাকরি
  8. জাতীয়
  9. জোকস
  10. তথ্যপ্রযুক্তি
  11. দেশজুড়ে
  12. ধর্ম
  13. নারী ও শিশু
  14. প্রবাস
  15. বই থেকে

চট্টগ্রাম বন্দরে ১০ হাজার কনটেইনারের ভয়াবহ জট, নিলামে ধীরগতি

প্রতিবেদক
Nirob
সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৫ ৮:০১ পূর্বাহ্ণ
চট্টগ্রাম বন্দরে ১০ হাজার কনটেইনারের ভয়াবহ জট, নিলামে ধীরগতি

চট্টগ্রাম বন্দরে নিলামযোগ্য কনটেইনারের স্তূপ জমেছে। বছরের পর বছর ধরে পড়ে আছে ১০ হাজারের বেশি নিলামযোগ্য কনটেইনার। যেগুলো বন্দরের জায়াগা দখল করে স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে। এসব কনটেইনার বন্দর এলাকা থেকে দ্রুত অপসারণ করে জায়গা খালি করার জন্য একাধিকবার কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তারপরও কোনও কাজ হয়নি। রয়েছে নিলামে ধীরগতি। 

বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ৫৯ হাজার কনটেইনার ধারণক্ষমতার চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে প্রতিদিন কনটেইনারের সংখ্যা ৪২ হাজার থেকে ৪৫ হাজার পর্যন্ত গিয়ে ঠেকছে। এতে বন্দরে জট তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে ১০ হাজারের বেশি আছে নিলামযোগ্য। তার মধ্যে ১০ বছরের পুরোনো (২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সাড়ে পাঁচ হাজার রয়েছে। বাকি সাড়ে চার হাজার আগে ও পরে জমেছে। এসব কনটেইনার ভর্তি পণ্য ডলার ব্যয় করে আমদানি হলেও পরবর্তীতে নানা জটিলতার কারণে আমদানিকারকরা ছাড় নেননি। নির্দিষ্ট সময়ে এসব পণ্য নিলামে না তোলায় অনেক পণ্য নষ্ট হয়ে গেছে।

কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিভিন্ন মামলা ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে এতদিন এসব কনটেইনার নিলামে তোলা সম্ভব হয়নি। ফলে বন্দরের নিরাপত্তা কার্যক্রম এবং অবকাঠামোর ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান সরকারের নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার নির্দেশে এসব কনটেইনার পর্যায়ক্রমে নিলামে তোলা হচ্ছে। তবে নিলাম কার্যক্রমে ধীরগতির কারণে এগুলো থেকেই যাচ্ছে।

বন্দর সূত্র জানিয়েছে, বন্দরে নিলামযোগ্য কনটেইনারে আছে মেশিনারিজ, ফেব্রিক্স, সুতাসহ বিভিন্ন আমদানি পণ্য। এ ছাড়া বিভিন্ন শেড ও ইয়ার্ডে পড়ে আছে ৪০০টির বেশি কেমিক্যালবাহী নিলামযোগ্য কনটেইনার। যার অনেকগুলোই মেয়াদোত্তীর্ণ। এসব কনটেইনারের কারণে বন্দরের জন্য তৈরি হয়েছে ভয়াবহ ঝুঁকি।

চলতি বছরের ১৪ মে পণ্য জট নিরসন ও খালাস প্রক্রিয়া সহজ করতে চট্টগ্রাম বন্দরে দ্রুত নিলাম, বিলিবন্দেজ ও ধ্বংস কার্যক্রম সংক্রান্ত বিশেষ আদেশ জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ওই আদেশে এনবিআর জানায়, দ্রুত পণ্য খালাস, শ্রম, অর্থ ও কর্মঘণ্টা সাশ্রয়, রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় রোধ, নিরাপত্তা ঝুঁকি নিরসন, ভৌত অবকাঠামো, জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং কনটেইনার জট হ্রাসসহ বন্দরের সামগ্রিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে এই আদেশ জারি করা হয়েছে।

এতে বলা হয়, ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অখালাসকৃত কনটেইনার জট বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করছে। দীর্ঘদিনের পুরোনো কেমিক্যাল ও বিপজ্জনক পণ্য বিস্ফোরণ ঝুঁকিসহ বন্দরের সামগ্রিক নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করেছে। ঝুঁকি নিরসনে বিদ্যমান প্রমিত নিলাম প্রক্রিয়ায় সময়ক্ষেপণ এড়ানো সম্ভব হয় না। শর্তযুক্ত বা নিয়ন্ত্রিত পণ্য খালাসে জটিলতা, অনিষ্পন্ন মামলা, নিলামের দরদাতা কর্তৃক পণ্য খালাস না করা, লজিস্টিকসের অভাবসহ নানাবিধ কারণে কর্তৃপক্ষ স্বল্পতম সময়ে নিলাম প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিলাম ও নিষ্পত্তিযোগ্য পণ্যের (যানবাহন ব্যতীত) বিক্রয়, ব্যবস্থাপনা ও ধ্বংস কার্যক্রম প্রক্রিয়া সহজীকরণে নিম্নবর্ণিত নির্দেশনা সম্বলিত বিশেষ আদেশ জারি করা হয়েছে। নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে- নিষ্পত্তিযোগ্য পণ্যসমূহের সংরক্ষিত মূল্য নির্ধারণ ব্যতীত প্রথম নিলামে (বিশেষ ক্ষেত্র ব্যতীত) প্রাপ্ত সর্বোচ্চ মূল্যে বিক্রয় করা যাবে।

আমদানি নীতি বা রফতানি নীতি অনুযায়ী শর্তসাপেক্ষে, নিয়ন্ত্রিত বা নিষিদ্ধ অথবা পণ্যের গুণগতমান নষ্ট হওয়ার কারণে বা অন্য কোনও কারণে নিলামের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা সম্ভব নয়; অথবা সম্ভব হয় নাই তা ধ্বংস বা নিষ্ক্রিয়করণের লক্ষ্যে নিলাম ব্যতীত বিশেষায়িত সংস্থা বা প্রযুক্তিগত সক্ষমতা সম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের নিকট বিনামূল্যে হস্তান্তর করা যাবে।

দুটি নিলামের মাধ্যমেও কোনও পণ্য বিক্রয় করা সম্ভব না হলে অথবা দরপত্র পাওয়া না গেলে তৃতীয় নিলাম ব্যতিরেকে ব্যাপক প্রচার প্রচারণাপূর্বক পণ্য গ্রহণে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের কাছে সর্বোচ্চ প্রস্তাব মূল্যে বিক্রয় এবং পরীক্ষণ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ব্যবহার উপযোগিতা রয়েছে। প্রত্যয়নকৃত মেয়াদোত্তীর্ণ বিপজ্জনক পণ্য বা কেমিক্যাল জাতীয় পণ্যসমূহ প্রকৃত ব্যবহারকারী বা বিশেষায়িত সংস্থা বা প্রযুক্তিগত সক্ষমতা সম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের নিকট সর্বোচ্চ অফার মূল্যে বিক্রয়ের বিধান রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট খায়রুল আলম সুজন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নিলাম প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। সম্প্রতি এনএনবিআর এ বিষয়ে একটি বিশেষ আদেশ জারি করেছে। এনবিআরএর এই প্রক্রিয়াকে আমরা সাধুবাদ জানায়। কোনও জটিলতার কারণে কোনও পণ্য আমদানিকারক যদি ছাড় না নেন, তাহলে দ্রুত নিলামে তোলা প্রয়োজন। তা না হলে কনটেইনারে থাকা পণ্য নষ্ট হওয়া সম্ভাবনা থাকে। নিলাম প্রক্রিয়ায় দেরি হলে ক্রেতা পাওয়া যায় না। একইভাবে দামও ভালো পাবে না কাস্টমস। দ্রুত নিলাম প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলে ক্রেতাদের চাহিদা যেমন থাকবে পাশাপাশি শিপিং লাইনগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের কনটেইনারগুলো বুঝে পাবে। তখন তারা অন্য কাজে এসব কনটেইনার ব্যবহার করতে পারবেন।’  

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের নিলাম শাখার সহকারী কমিশনার মো. সাকিব হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বন্দর থেকে ছয় হাজারের মতো নিলামযোগ্য কনটেইনার পেয়েছি। এগুলোর নিলাম প্রক্রিয়া চলছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েক বছর ধরে পড়ে থাকা ২৯৭টির খালাস প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। চলতি মাসে ৫০৩টি কনটেইনার ভর্তি পণ্য তিনটি পৃথক নিলামে বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে গত ৯ সেপ্টেম্বর একটি বড় নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ১২৬টি কনটেইনার ভর্তি পণ্য নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। বাকি দুটি নিলাম হবে ২৮ সেপ্টেম্বর ও ৩০ সেপ্টেম্বর।’

একটি নিলাম প্রক্রিয়া শুরু থেকে শেষ করতে অন্তত দুই মাস লেগে যায় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এজন্য আমরা মাসে কয়েকটি নিলাম আয়োজন করছি। নিলামযোগ্য কনটেইনারগুলোতে মেশিনারিজ পণ্য, ফেব্রিক্স, সুতাসহ বিভিন্ন পণ্য রয়েছে।’

বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘বন্দরে নিলামযোগ্য কনটেইনার আছে ১০ হাজার। এসব কনটেইনার বছরের পর বছর জায়গা দখল করে আছে। এগুলো ধ্বংস কিংবা খালাসের বিষয়টি দেখভাল করে থাকে কাস্টমস। তাদের নিলাম কিংবা ধ্বংস করে জায়গা খালি করার জন্য একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে।’

সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক