গাজীপুরে ৫৭ জন শ্রমিককে সাময়িক বরখাস্তের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন মোহাম্মদিয়া গ্রুপের এমজি নিট ফ্লেয়ার এবং এমজি ফ্যাশন সোয়েটার লিমিটেড পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সদর উপজেলার ভবানীপুর এলাকায় কারখানার প্রধান ফটকের সামনে শতাধিক শ্রমিক এ কর্মসূচি পালন করেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত শ্রমিকরা কারখানার সামনে অবস্থান করছেন। তারা বলছেন, প্রয়োজনে এখানে মৃত্যু হবে। তবু দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কারখানা গেট থেকে সরবেন না।
ওই পোশাক কারখানা এলাকায় বিশৃঙ্খলা এড়াতে শিল্প পুলিশ, থানা পুলিশ এবং কলকারখানা অধিদফতরের কর্মকর্তারাও শ্রমিকদের সঙ্গে অবস্থান করছেন।
বিক্ষোভ ও মানববন্ধনে শ্রমিকদের হাতে, অবৈধ বহিষ্কার বন্ধ করো, শ্রমিকদের চাকরিতে বহাল করো, বেআইনি বহিষ্কার মানি না, মানেবা না, শ্রমিক বাঁচলে শিল্প বাঁচবে, চাকরি ফেরত দাও নইলে আন্দোলন তীব্র হবে লেখা সংবলিত বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
বিক্ষোভকারী শ্রমিকরা জানান, প্রায় চার-পাঁচ বছর ধরে কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রম আইনি অনুযায়ী সপ্তম কর্মদিবসে বেতন পরিশোধ করেনি তাদের। ২০২৪ সালে নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করলেও কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন করেনি। যেসব শ্রমিক চাকরি ছেড়ে চলে যায় তাদের পাওনা পরিশোধ করে না। যেসব নারী শ্রমিক মাতৃত্বকালীন অবস্থায় থাকে তাদের পাওনা পরিশোধ করে না। শ্রমিকের মৃত্যুজনিত টাকাও পরিশোধ করে না। এ অবস্থায় সপ্তম কর্মদিবসে বেতন পরিশোধসহ এসব দাবি নিয়ে কয়েকজন অপারেটর আগস্ট মাসের ৯ তারিখ কারখানার অপারেশন সেকশনের উপমহাব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলামের কাছে যান। তিনি তখন মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানাবেন বলেন। কিন্তু পরে আর জানাননি। ওই সময় তিন দিন অফিসে কাজ বন্ধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শ্রমিকরা। পরে কর্তৃপক্ষ ১২ আগস্ট বেতন দেওয়ার পর থেকে কাজ শুরু করেন শ্রমিকরা। ৩১ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শ্রমিকদের ডেকে কাজ বন্ধ করে দেয় কারখানা কর্তৃপক্ষ। সেইসঙ্গে কারখানা ছুটি দিয়ে গেটে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নোটিশ টানিয়ে দেয়। এর মধ্যে ১ সেপ্টেম্বর ৫৭ শ্রমিককে সাময়িক বরখাস্ত করে ছবিসহ নোটিশ টানিয়ে দেয়। এরপর থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা।
মোহাম্মদিয়া গ্রুপের প্রশাসনিক কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, ‘বেআইনিভাবে কাজ বন্ধ করে কারখানায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে ৫৭ শ্রমিককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্তের চিঠির জবাব দেওয়ার জন্য সময় দিলেও তারা জবাব দেননি। উল্টো ওসব শ্রমিক কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে অন্য শ্রমিকদের নিয়ে তাদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করছেন। চিঠির জবাব না দেওয়ার কারণে শ্রম আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তীতে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদ আহমেদ বলেন, ‘শ্রমিকরা বেলা সাড়ে ১১টা থেকে কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন। মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি আমরা। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যেই বিষয়টির সমাধান হবে।’
গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শক আব্দুল লতিফ বলেন, ‘সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। পুলিশসহ কলকারখানা অধিদফতরের প্রতিনিধিরা কারখানায় অবস্থান করছেন। বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে।’