রংপুরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের উপস্থিতিতে বিভাগীয় পর্যালোচনা সভার ভার্চুয়াল প্রেজেন্টেশনের সময় শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার ছবি প্রদর্শনের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় তড়িঘড়ি করে সেখান থেকে সটকে পড়েন অনুষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ বিভাগের রংপুর বিভাগীয় কর্মকর্তা প্রকল্প পরিচালক গোলাম রব্বানী। রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রংপুরের আরডিআরএস মিলনায়তনে পশুপালন ও দুগ্ধ উন্নয়ন প্রকল্পের বিভাগীয় অগ্রগতি পর্যালোচনা কর্মশালায় এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতারা নিন্দা জানিয়েছেন। অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘এটি গ্রহণযোগ্য নয়, ফ্যাসিবাদের অনেক রূপ আমরা লক্ষ করছি।’
কর্মশালায় অংশ নেওয়া প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রবিবার দুপুরে রংপুরের আরডিআরএস মিলনায়তনে পশুপালন ও দুগ্ধ উন্নয়ন প্রকল্পের বিভাগীয় অগ্রগতি পর্যালোচনা কর্মশালার আয়োজন করে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। কর্মশালা শুরুর পর বিভাগীয় অগ্রগতি পর্যালোচনা নিয়ে একটি ভার্চুয়াল প্রেজেন্টেশন দেন প্রকল্প পরিচালক গোলাম রব্বানী। প্রেজেন্টেশনে দেখা যায়, মনিটরে স্ক্রিপ্টের ওপরে শোভা পাচ্ছে শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার ছবি এবং তাদের বাণী। বিষয়টি দেখে উপদেষ্টাসহ কর্মকর্তারা হতভম্ব হয়ে পড়েন। এ নিয়ে হইচই শুরু হয়। তড়িঘড়ি করে ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন গোলাম রব্বানী।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের রংপুরের পরিচালক মো. আবদুল হাই সরকার বলেন, ‘এটি পাঁচ বছর আগের একটি প্রকল্প ছিল। প্রকল্পটি মূল্যায়ন করতে গিয়ে অসাবধানতাবশত এটি হয়ে গেছে। তিনি (প্রকল্প কর্মকর্তা) এটি ইচ্ছাকৃতভাবে করেননি। এ ঘটনার জন্য তিনি ক্ষমা চেয়েছেন।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করে গোলাম রব্বানীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পরে এ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, ‘এতগুলো মানুষের রক্ত দেওয়ার পরও তাদের ছবি কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। ফ্যাসিবাদের অনেক রকম রূপ থাকে। তার কিছুর প্রতিফলন নানাভাবে ঘটে। আমরা যখন যেটা টের পাই, সেটার ব্যাপারে ব্যবস্থা নিই। আমাকে তিনি (প্রকল্প পরিচালক) জানিয়েছেন, এটা ভুলক্রমে হয়ে গেছে। তিনি ক্ষমা চেয়েছেন। আমি তার ক্ষমাটাকে সবার কাছে উপস্থাপন করলাম। ব্যাপারটা আমাকে আর একটু ভালো করে জানতে হবে। আমি অবশ্যই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবো।’
এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগর কমিটির সাবেক যুগ্ম সদস্যসচিব মুহাম্মদ রাজিমুজ্জামান বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তে রঞ্জিত দেশের মানুষ স্বৈরাচার ও পরিবারতন্ত্রকে চিরতরে প্রত্যাখ্যান করেছে। অথচ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাকে বসিয়ে প্রেজেন্টেশনে দেখানো হলো শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার ছবি। এর আগে রংপুর টাউন হলে তথ্য মেলায় শেখ হাসিনার বাণী সংবলিত লিফলেট বিতরণ করে জেলা মৎস্য কার্যালয়। নেসকোর (নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি) একটি অনুষ্ঠানে মুজিব বর্ষের লোগো দেখা যায়। রংপুরের কিছু সরকারি কার্যালয়ে ফ্যাসিবাদের প্রেতাত্মারা ঘুরপাক খাচ্ছে। অবশ্যই এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’