গত দেড় মাস ধরে কমিটি ছাড়াই চলছে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপি। এর ফলে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে না। তবে দ্রুত যোগ্য ও ত্যাগীদের নিয়ে কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা।
এদিকে, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির কমিটিতে স্থান পেতে লবিং-তদবির শুরু করেছেন উত্তর জেলার অনেক নেতাকর্মী। তাদের মধ্যে গত ১৭ বছর আন্দোলন, রাজপথে থাকা এবং একাধিক মামলার আসামি হয়ে কারাভোগ করা নেতাকর্মীরা যেমন আছেন, তেমনি ওই সময়ে ঝিমিয়ে পড়া নিষ্ক্রিয় নেতাকর্মীরাও পদ-পদবি পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
আহ্বায়ক হিসেবে আলোচনায় আছেন অন্তত এক ডজন বিএনপি নেতা। যারা উত্তর চট্টগ্রামের বাসিন্দা। আলোচনায় আছেন- চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা, বিলুপ্ত উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বা্্য়ক এম এ হালিম, ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন, নূরুল আমিন, অধ্যাপক ইউনুছ চৌধুরী, নূর মোহাম্মদ, সরোয়ার আলমগীরসহ রাঙ্গুনিয়া উপজেলা বিএনপি নেতা কুতুব উদ্দিন বাহার।
এদিকে, উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হিসেবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা। চট্টগ্রাম উত্তর জেলার আওতাধীন উপজেলাগুলোতে তার বেশ জনপ্রিয়তা আছে। শাকিলা ফারজানা চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের প্রাক্তন চিফ হুইপ মরহুম সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের মেয়ে। তিনি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক এবং চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিগত সময়ে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলার পাশাপাশি তিনি দীর্ঘদিন কারাভোগ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা বলেন, ‘চট্টগ্রাম উত্তর জেলায় সভাপতি কিংবা আহ্বায়ক কে হচ্ছেন সেটা দলীয় সিদ্ধান্ত। দল চাইলে আমি দায়িত্ব পালন করবো।’
সদ্য বিলুপ্ত চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘যেদিন কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছিল সেদিন একই চিঠিতে বলা হয় শিগগিরই নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হবে। অথচ গত দেড় মাস পার হলেও নতুন করে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়নি। চট্টগ্রামের ৭টি উপজেলা এবং ৯টি পৌরসভা নিয়ে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা। এখানে সংসদীয় আসন সংখ্যাও সাতটি। কমিটি না থাকায় গুরুত্বপূর্ণ এ জেলায় মিছিল-মিটিং কিংবা কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় কোনও কর্মসূচি পালন করা যাচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘নতুন কমিটিতে যাতে দলের যোগ্য ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের স্থান দেওয়া হয়। যারা ১৭ বছর রাজপথে আন্দোলনে ছিল। জেল-জুলুম সহ্য করেছে তাদেরকে এ কমিটিতে রাখা প্রয়োজন। তবে কেউ কেউ বর্তমানে সুসময়ে সক্রিয় হয়েছে। অথচ তারা গত ১৭ বছর আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে চলেছে। এ ধরনের ব্যক্তিদের যাতে এ কমিটিতে স্থান দেওয়া না হয় এটাই আমার দবি।’
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, ‘চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির কমিটি যেকোনও দিন ঘোষণা করা হবে। এ সংক্রান্ত প্রস্তুতিও শেষ পর্যায়ে। আশা করছি যোগ্য ও ত্যাগী নেতাকর্মীরাই এতে স্থান পাবে।’
এর আগে, গত ২৯ জুলাই গোলাম আকবর খন্দকার ও গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীদের মধ্যে রাউজান উপজেলায় সংঘর্ষ ও গোলাগুলির পর ওই দিন রাতে উত্তর জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর সই করা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজ চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। অতি শিগগিরই চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হবে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২০২০ সালের ২২ ডিসেম্বর গোলাম আকবর খন্দকারকে আহ্বায়ক করে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির ৪৪ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। এই কমিটিতে সদস্যসচিব ও যুগ্ম আহ্বায়ক রাখা হয়নি। কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকা ৯ জনকে পরে যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। এই কমিটি কোন্দল থামাতে পারেনি, উল্টো বেড়ে যায়। সর্বশেষ কোন্দল নিরসনে নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটিকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমানের সঙ্গে পরামর্শ ও মতামতের ভিত্তিতে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয় কেন্দ্র থেকে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।