পোষ্য কোটা নিয়ে কর্মসূচিতে শিক্ষক লাঞ্ছনার অভিযোগে অনির্দিষ্টকালের জন্য শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। তবে শাটডাউনের আওতামুক্ত থাকায় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন ২৫ তারিখেই অনুষ্ঠিত হবে।
রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকালে জরুরি সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত শোনার পর এই ঘোষণা দেন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
রাবি অফিসার সমিতির সভাপতি মোক্তার হোসেন বলেন, ‘সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তে আমরা আশাহত হয়েছি। শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আমাদের শাটডাউন কর্মসূচি চলবে। রাকসু নির্বাচন, পানি, বিদ্যুৎ এবং পরিবহনের বাইরে সব সেবা বন্ধ থাকবে।’
এর আগে, রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকাল সোয়া ৫টায় জরুরি সিন্ডিকেট সভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতেখারুল আলম মাসউদ বলেন, ‘গতকাল পোষ্য কোটাকে কেন্দ্র করে শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীদের ধস্তাধস্তির ঘটনায় একটি পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি এবং একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধায় (পোষ্য কোটা) ভর্তি আপাতত স্থগিত থাকবে। এ বিষয়ে সিন্ডিকেটে রিপোর্ট করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সব বডির সঙ্গে আলোচনা শেষে অচিরেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে। এ ছাড়া, সিন্ডিকেট থেকে যথাসময়ে রাকসু নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনসহ শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়েছে।’
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এক জরুরি অ্যাকাডেমিক সভায় পোষ্য কোটা পুনর্বহালের পর থেকেই সাধারণ শিক্ষার্থীসহ সাবেক সমন্বয়ক ও রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের নেতারা এক হয়ে প্রতিবাদের ঝড় তোলেন। এদিন রাত ১১টা পর্যন্ত আন্দোলন চালান তারা। পরদিন শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে আমরণ অনশনে বসেন কয়েক শিক্ষার্থী।
রাতভর আমরণ অনশনের পর বিকাল সাড়ে ৩টায় তারা উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করেন। এ সময় তারা উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মাইন উদ্দিন খানের গাড়ি আটকায় এবং ভিক্ষা হিসেবে টাকা ছুড়ে মারেন। এরপর তারা উপ-উপাচার্যের বাসভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন। তিনি বাসভবনে প্রবেশ করতে না পারায় প্রক্টর মাহবুবুর রহমানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরি ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করলে আবারও শিক্ষার্থীদের বাধার সম্মুখীন হন। এ সময় কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষক, উপ-উপাচার্যের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের হাতাহাতি হয়। এই ধস্তাধস্তিতে শিক্ষার্থীসহ কয়েকজন সাংবাদিক আহত হন। এরপর কয়েক ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মাঈন উদ্দিন খান, রেজিস্ট্রার ইফতেখার আলম মাসউদ, প্রক্টর মাহবুবুর রহমান, রাকসু প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এনামুল হকসহ আরও অনেকে।
রাতভর এই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে রাত পৌনে ২টায় পোষ্য কোটার ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত করেন উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব এবং আজ রবিবার জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আশ্বাস দেন তিনি। এরপরই থেকে কর্মসূচি থেকে ধীরে ধীরে সরে আসেন শিক্ষার্থীরা। রাত সাড়ে ৩টার মধ্যে শিক্ষার্থীরা হলে ফিরে যান।
প্রসঙ্গত, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে চলতি বছরের গত ২ জানুয়ারি পোষ্যকোটা বাতিলের ঘোষণা দেন রাবি উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব। এরপর থেকেই শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পোষ্য কোটাকে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা দাবি করে একের পর এক আন্দোলন করেন। সর্বশেষ ১৭ সেপ্টেম্বর এক চিঠিতে ১৮ তারিখের মধ্যে দাবি আদায় না হলে ২১ সেপ্টেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পূর্ণদিবস কর্মবিরতির ঘোষণা দেন তারা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ সেপ্টেম্বর বিকালে এক জরুরি অ্যাকাডেমিক কমিটির সভা ডাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অ্যাকাডেমিক সভায় ১০ শর্তে পোষ্য কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।