‘আমার নয় মাসের গর্ভের সন্তানকে দেখে যেতে পারলো না ওর বাবা। ও জন্মানোর আগেই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলো। এখন তিন ছেলে-মেয়েকে নিয়ে কীভাবে আমার সংসার চলবে? কীভাবে তাদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করবো? একমাত্র আয়ের উৎসই ছিল আমার স্বামীর চাকরি। আমার শ্বশুর-শাশুড়িও বৃদ্ধ, তারা কিছু করতে পারে না। আমি এখন চোখে অন্ধকার দেখছি। কী হবে কিছুই বুঝতে পারছি না।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসব কথা বলছিলেন গাজীপুরের টঙ্গীতে কেমিক্যাল কারখানার গুদামে আগুনে দগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী ফায়ারফাইটার নুরুল হুদার ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের ধামাইল গ্রামের বাড়িতে স্ত্রী আসমা আক্তার।
তিনি আরও বলেন, ‘গেলো শুক্রবার বাড়িতে এসেছিল নুরুল হুদা। জুমার নামাজ শেষ করে এসে ছেলে-মেয়ে পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করেছে। যাওয়ার আগে আমাকে বলে গেছে সন্তানদের দেখো, আমার বাবা-মারে দেখে রেখো। এখন আমি কী করবো? এই পরিবারের সবাইকে কীভাবে দেখে রাখবো?’
নুরুল হুদার বাবা আবুল মনসুর বলেন, ‘আমার সংসারের আয়ের একমাত্র উৎসই ছিল ছেলে নুরুল হুদার চাকরি। এর তিন বছর আগে আমার বড় ছেলে শামসুল হুদা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায়। এখন রইলো মাত্র দুই মেয়ে। বয়স হয়েছে এখন কোনও কাজকাম করতে পারি না। কীভাবে সংসার চলবে আর নুরুল হুদার ছেলে-মেয়েদের কীভাবে লেখাপড়া করাবো? আমার বউমা আসমা আক্তার এসএসসি পাস। সরকার ইচ্ছা করলে নুরুল হুদার জায়গায় তার স্ত্রীকে চাকরি দিতে পারে। আসমার চাকরি হলে সংসারটা বেঁচে যাবে।’
নুরুল হুদার মা শিরীন আক্তার বলেন, ‘আগে বড় ছেলেরে হারাইলাম, তিন বছর পরে ছোট ছেলেকেও আল্লাহ নিয়ে গেলো। এখন দুই মেয়ে ছাড়া আর কেউ রইলো না। নাতি-নাতনি, বউমা সবাইরে নিয়ে কীভাবে সংসার চলবো এই নিয়ে ভেবে পাচ্ছি না।’
স্থানীয়রা জানান, নুরুল হুদা খুব সহজ-সরল ভালো মানুষ ছিলেন। তার চাকরির আয়ে পরিবারের খরচ চলতো। যে কেমিক্যাল কারখানায় আগুন লেগেছে সেই কারখানা বিরুদ্ধে সরকার আইনিব্যবস্থা নিক। ক্ষতিপূরণ দেওয়াসহ নুরুল হুদার স্ত্রীকে ফায়ারফাইটার হিসেবে চাকরি দিলে এই অসহায় সংসারটা বেঁচে যাবে।
গেলো মধ্যরাতে ঢাকা থেকে ফায়ারফাইটার নুরুল হুদার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে আসে। বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় নিজ বাড়ির সামনে নামাজে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
প্রসঙ্গত, নুরুল হুদা ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ ফায়ারফাইটার হিসেবে ফায়ার সার্ভিসে কর্মজীবন শুরু করেন। গেলো সোমবার বিকালে টঙ্গীর সাহারা মার্কেটের সেমিপাকা টিনশেড কেমিক্যাল কারখানার গুদামে অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। বুধবার দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।