গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তা থেকে ব্যাংক কর্মকর্তা মোকসেদ আলীকে (৫৮) অপহরণের পর ৯০ হাজার টাকা মুক্তিপণ নিয়ে চার ঘণ্টা পর ছেড়ে দিয়েছে অপহরণকারীরা। বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনা চৌরাস্তা উড়াল সেতুর উত্তর পাশের (পল্লী বিদ্যুৎ) মোড় থেকে তাকে অপহরণ করা হয়।
মোকসেদ আলী ইসলামী ব্যাংক শ্রীপুর উপজেলার মাওনা শাখার জেনারেল ব্যাংকিং ইনচার্জ ও ফার্স্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট (এফএভিপি) হিসেবে কর্মরত। তিনি গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা (পালের মাঠ) এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন।
অপহরণের শিকার ব্যাংক কর্মকর্তা মোকসেদ আলী মোবাইল ফোনে এ প্রতিনিধিকে জানান, অফিস ছুটির পর বাসায় যাওয়ার জন্য উড়াল সেতুর উত্তর পাশে (পল্লী বিদ্যুৎ) মোড়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তার সঙ্গে আরও দুই যাত্রী দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাদের মধ্যে একজন সালনা ও একজন গাজীপুর যাবে। প্রায় ২০ মিনিটের মতো দাঁড়িয়ে থাকার পরও কোনও যানবাহন আসছিল না। এ সময় সাদা একটি প্রাইভেটকার তাদের সামনে এসে দাঁড়ায়। ওই প্রাইভেটকারে আগে থেকেই চালকের সঙ্গে একজন বসা ছিল। তার সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকা দুই যাত্রী প্রাইভেটকার চালকের সঙ্গে যাওয়ার জন্য ভাড়া নিয়ে কথা বলছিল।
সালনার যাত্রী ৮০ টাকা ও অপর যাত্রী ১০০ টাকায় ভাড়া নির্ধারণ করে। যেহেতু প্রাইভেটকার চালক যাত্রী ওঠাচ্ছে তাদের সঙ্গে তিনিও গাজীপুর যাওয়ার জন্য ভাড়া নির্ধারণ করে প্রাইভেটকারে উঠে বসেন। তিনি পেছনে মাঝখানে বসেন এবং অপর দুই যাত্রী তার দুই পাশে বসেন। উড়াল সেতুর ওপর দিয়ে প্রাইভেটকার গাজীপুরের দিকে ছেড়ে আসে। এ সময় চালক পেছনের দুই যাত্রীকে বস বস বলে কী যেন বলতে থাকলো।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘের বাজার পার হওয়ার পর তার সঙ্গে থাকা দুই যাত্রী ব্যাংক কর্মকর্তা মোকসেদ আলীর চোখ এবং হাত-পা বেঁধে ফেলে। এসময় অপহরণকারীরা প্রাইভেটকারের ভেতর তাকে মারতে মারতে বাসায় কে কে আছে জিজ্ঞাসা করতে থাকে। এক পর্যায়ে মোকসেদ আলীর বলেন, বাসায় আমার স্ত্রী আছে। পরে তার মোবাইল দিয়ে মোকসেদ আলীর স্ত্রীর কাছে কল করে ২০ মিনিট সময় দিয়ে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ চায়। অপহরণকারীরা তার স্ত্রীকে বলে এই বিকাশ (০১৭৫৭-০৪৯৫৫২) নম্বরে ২০ মিনিটের মধ্যে পাঁচ লাখ টাকা না পাঠালে তার স্বামীর হাত-পা কেটে ফেলবে অথবা তাকে হত্যা করে লাশ জঙ্গলে ফেলে দেবে। পরে তিনি প্রতিবেশী এক ব্যক্তির মাধ্যমে অপহরণকারীদের দেওয়া বিকাশ নম্বরে ৬০ হাজার টাকা পাঠান। পরে তারা বাকি টাকার জন্য বারবার চাপ দিতে থাকলে আরও ৩০ হাজার টাকা একই বিকাশ নম্বরে পাঠান।
রাত সাড়ে ১০টার দিকে অপহরণকারীরা ব্যাংক কর্মকর্তা মোকসেদ আলীকে হাত-পা ও চোখ বেঁধে ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার সিডস্টোর থেকে পশ্চিমের দিকে নিয়ে তার কাছ থেকে ২টি মোবাইল, তার সাথে থাকা নগদ ৭ হাজার টাকা রেখে তাকে জঙ্গলে ফেলে রেখে চলে যায়। ফেলে দেওয়ার সময় অপহরণকারীরা তাকে বলে কোনও ধরনের চিৎকার দিবি না, পেছনে আমাদের লোকজন তোকে ফলো করতেছে। পরে তিনি নিজেই চোখ এবং হাত-পায়ের বাঁধন খুলে মহাসড়কের পশ্চিম পাশ থেকে পূর্ব পাশে আসেন। পরে এক অটো চালককে বলে সিডস্টোর বাসস্ট্যান্ডে এসে পাবলিক বাসে গাজীপুরের বাসায় পৌঁছান।
মাওনা হাইওয়ে থানার ওসি আইয়ুব আলী বলেন, এরকম ঘটনা আমার জানা নেই।
শ্রীপুর থানার ওসি মুহম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, আমরা ঘটনার রাতেই মৌখিক অভিযোগ পেয়েছিলাম। পরে শুনেছি অপহৃত ব্যক্তি রাত ১২টার দিকে বাসায় ফিরেছেন। কিন্তু ভুক্তভোগী এখনও অভিযোগ দেননি। তিনি অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
গাজীপুর হাইওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপার (এসপি) ড. আ. ক. ম. আক্তারুজ্জামান বসুনিয়া বলেন, এরকম কোনও ঘটনা আমার জানা নেই। স্থানীয় থানায় যোগাযোগ করতে পারেন।