বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে চার বছরের শিশু মেহেদী হাসান ডোবার পানিতে ডুবে মারা যায়নি। খেলা নিয়ে শিশুদের মধ্যে ঝগড়ার প্রতিশোধ নিতে তাকে নির্মমভাবে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। গ্রেফতার প্রতিবেশী সুইটি বেগম (২৩) এ বিষয়ে বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার বিকালে সারিয়াকান্দি থানার ওসি জামিরুল ইসলাম এ তথ্য দিয়েছেন। তিনি জানান, আদালত নির্দেশ দিলে শিশুটির লাশ কবর থেকে তোলা হবে।
পুলিশ, এলাকাবাসী ও মামলা সূত্র জানায়, বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার সদর ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর গ্রামের আনারুল ইসলামের ছেলে আরিফ হোসেন প্রায় ছয় বছর আগে পার্শ্ববর্তী নারচী ইউনিয়নের কুপতলা মধ্যপাড়া গ্রামের জাহাঙ্গীর মোল্লার মেয়ে মিষ্টি আক্তারকে বিয়ে করেন। তাদের সংসারে শিশু মেহেদী হাসানের জন্ম হয়। দাম্পত্য কলহে গত এক বছর আগে তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।
এরপর মিষ্টি আক্তার ঢাকায় গার্মেন্টে চাকরিতে যান। এর আগে তিনি ছেলে মেহেদী হাসানকে উপজেলার নারচী গ্রামে তার মা মুন্নী বেগমের কাছে রেখে যান। গত ২১ সেপ্টেম্বর বিকালে শিশু মেহেদী হাসান নিখোঁজ হয়। পরে বাড়ির কাছে একটি ডোবার পানি থেকে তার ভাসমান লাশ উদ্ধার করা হয়।
সবাই ধারণা করেন, মেহেদী খেলার সময় ডোবার পানিতে পড়ে ডুবে মারা গেছে। মা মিষ্টি আক্তার ঢাকা থেকে ফেরার পরদিন রামকৃষ্ণপুর গ্রামে দাদার বাড়ির কাছে শিশুটিকে দাফন করা হয়।
এদিকে বুধবার সকালে উপজেলার নারচী ইউনিয়নের কুপতলা মধ্যপাড়া গ্রামের হবিবর রহমানের মেয়ে সুইটি বেগম স্বজনদের কাছে স্বীকার করেন যে, তিনি তার ছেলেকে মারধরের প্রতিশোধ নিতে শিশু মেহেদী হাসানকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছেন। দুপুর ২টার এলাকাবাসি সুইটি বেগমকে আটক করে সারিয়াকান্দি থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। এরপর নিহত শিশুর মা থানায় তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। বিকালে সুইটি বেগমকে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করলে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
সারিয়াকান্দি থানার ওসি জামিরুল ইসলাম জানান, শিশু মেহেদী হাসানের মৃত্যুর পর কোন অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়। বুধবার সুইটি বেগম শিশুটিকে হত্যার কথা স্বীকার করায় এলাকাবাসি তাকে আটক করে পুলিশে দেন। তিনি হত্যার কথা স্বীকার ও কারণ উল্লেখ করলে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে সন্ধ্যার দিকে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে তাকে বগুড়া জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ওসি আরও জানান, আদালতের নির্দেশ পেলে শিশু মেহেদী হাসানের মরদেহ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্ত করা হবে।
পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিতে সুইটি বেগম জানান, গত এক মাস আগে মেহেদী হাসানের সঙ্গে তার ছেলে জিসান মিয়ার (৪) খেলা নিয়ে মারামারি হয়। এরপর সুইটির সঙ্গে মেহেদীর নানি মুন্নী বেগমের ঝগড়া হয়েছিল। এর প্রতিশোধ নিতে মেহেদীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। গত রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকালে গ্রামের একটি বাগানে মেহেদীকে একা পেয়ে তিনি তার মুখ চেপে ধরেন। এরপর বুকের ওপর হাঁটু দিয়ে চেপে ধরে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। এরপর এটি স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে চালিয়ে দিতে লাশ ডোবার পানিতে ফেলে দেন।