এসএসসির উত্তরপত্র পুনর্নিরীক্ষণের ফল জালিয়াতি, খাতা গায়েবসহ বিভিন্ন অভিযোগের তদন্তে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে অভিযান পরিচালনা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে দুদকের সহকারী পরিচালক সাঈদ মোহাম্মদ ইমরান হোসেনের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অভিযান শেষে দুদকের কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের জানান, এবার এসএসসির পুনর্নিরীক্ষণের ৩৪টি উত্তরপত্রে ফল জালিয়াতি চেষ্টা হয়েছে বলে একটি অভিযোগ দুদকের কাছে আসে। অভিযোগ পেয়ে শিক্ষা বোর্ডের বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছেন দুদক কর্মকর্তারা। এ ছাড়া আরও কিছু অভিযোগ ছিল। সেগুলোর নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে ২০২৫ সালের মাধ্যমিক এসএসসি পরীক্ষার পুনর্নিরীক্ষণের ফলে অসংগতির অভিযোগ ওঠায় ১১ সেপ্টেম্বর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বোর্ড কর্তৃপক্ষ। বোর্ডের হিসাব ও নীরিক্ষা শাখার উপপরিচালক মুহাম্মদ একরামূল হককে প্রধান করে এই তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। ১৮ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন জমার কথা থাকলেও সময় ১৫ কর্মদিবস বাড়ানো হয়েছে।
শিক্ষা বোর্ড জানায়, উত্তরপত্র পুনর্নিরীক্ষণের ফলাফল তৈরির সময় ৩৪টি উত্তরপত্রে অসংগতি ধরা পড়ে। উত্তরপত্রে থাকা নম্বর ও কম্পিউটারে ইনপুট দেওয়া নম্বরের গরমিল পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে দুদকে একটি অভিযোগ জমা পড়ে। সেটি তদন্তে বোর্ড থেকে প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংগ্রহ করেছে দুদক।
শুধু তাই নয়, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের গুদাম থেকে ৬ লাখ পরীক্ষার খাতা এবং সাড়ে ৪ লাখ লুজ শিট উধাও হয়ে গেছে। গুদামে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বিশেষায়িত খাতা থাকার কথা ছিল ১৬ লাখ ৪৫ হাজার ১৮৯টি। কিন্তু গণনার পর ১০ লাখ ৪৭ হাজার খাতা পাওয়া গেছে। একইসঙ্গে ১২ লাখ ৪৮ হাজার ৭৯০টি অতিরিক্ত খাতা বা লুজশিটের স্থলে পাওয়া যায় সাড়ে ৮ লাখ খাতা। এসব বিষয়ও খতিয়ে দেখছে দুদক।
অভিযোগ আছে, এক ছাত্রীর নাম পরিবর্তন করে ছেলের পরীক্ষা দেওয়ারও। গত ৩ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইলিয়াছ উদ্দিন আহাম্মদের কাছে নাঈম চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি এমন অভিযোগ করেন। অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে খাগড়াছড়ির শহীদ লেফটেন্যান্ট মুশফিক হাইস্কুলের পরীক্ষার্থী সাদিয়া জাহান লাভলীর নাম পরিবর্তন করে পিয়াল আশরাফ শান্তর নামে প্রবেশপত্র তৈরি করা হয়েছে। অভিযোগটি তদন্ত করছে শিক্ষা বোর্ড। এসব বিষয়েও খোঁজ নিচ্ছে দুদক।
এ প্রসঙ্গে বোর্ডের চেয়ারম্যান ইলিয়াছ উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, ‘দুদকের কর্মকর্তারা বিভিন্ন তথ্য চেয়েছেন। আমরা সেভাবে সহযোগিতা করেছি। বিষয়টা গুরুত্ব দিয়েই বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। আমরাও তদন্ত কমিটি করেছি। পরীক্ষাসংক্রান্ত ব্যস্ততায় হয়তো কমিটির প্রতিবেদন দিতে দেরি হচ্ছে।’
এর আগে গত ১০ আগস্ট এসএসসি পরীক্ষার উত্তরপত্র পুনর্নিরীক্ষণের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। পুনর্নিরীক্ষণে ১ হাজার ৬৬৯ জনের ফলাফল পরিবর্তন হয়েছে। খাতায় নম্বর পরিবর্তন হয়েছে ১ হাজার ৭৪২ জনের। জিপিএ পরিবর্তন হয়েছে ৬৪৬ জনের। ফেল থেকে পাস করেছে ৬৪ জন। নতুন জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬৫ জন। নতুন ফল অনুযায়ী চট্টগ্রামে এবার পাস করেছে ১ লাখ ১ হাজার ২৪৫ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১১ হাজার ৯০৮ জন।
গত ১০ জুলাই এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এর পরদিন অর্থাৎ ১১ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত উত্তরপত্র পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করে শিক্ষার্থীরা। ১০ জুলাইয়ের ফলাফল অনুযায়ী, পাস করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ১৮১ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১১ হাজার ৮৪৩ জন। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে চট্টগ্রাম ছাড়া কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলায় সব মিলিয়ে এবার পরীক্ষার্থী ছিল ১ লাখ ৪১ হাজার ৩৩ জন।