গাজীপুরে বিনা কারণে শ্রমিকদের চাকুরিচ্যুতি, মারধর এবং নারী শ্রমিকদের লাঞ্ছিত করায় অশোভন ভাষায় গালিগালাজ ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে কারখানার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে। সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শ্রমিকরা এসব অভিযোগ করেন।
সোমবার সকাল ৮টার দিকে শ্রমিকরা কারখানার সামনে অবস্থান নেন। পরে বেলা ১১টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মেম্বারবাড়ী এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা। বিক্ষোভে তারা অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের অপসারণসহ নির্যাতনের বিচার দাবি করেন। গাজীপুর সদর উপজেলার বানিয়ারচালা (মেম্বার বাড়ী) এলাকায় অবস্থিত জায়ান্ট গ্রুপের জায়ান্ট টেক্সটাইলস লিমিটেড কারখানায় এ ঘটনা ঘটে।
এ সময় সড়কের উভয় পাশে দীর্ঘ যানজট লেগে যায়। খবর পেয়ে জয়দেবপুর থানা পুলিশ ও শিল্পপুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শ্রমিকদের দাবি নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দিলে আধা ঘণ্টা পর তারা সড়ক ছেড়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এদিকে, শ্রমিকদের এসব অভিযোগ কারখানা কর্তৃপক্ষ অস্বীকার করে উল্টো শ্রমিকদের বিরুদ্ধে তাদের মারধরের অভিযোগ করেন। কারখানার ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এবং শ্রমিকদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে কর্তৃপক্ষ রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধের নোটিশ দিয়েছে।
নির্যাতনের শিকার নারী শ্রমিক জুঁই আক্তার বলেন, ‘২০২৪ সালে জায়ান্ট টেক্সটাইলস লিমিটেড কারখানায় সুইং সেকশনে জেএসএম অপারেটর হিসেবে যোগদান করি। গত ছয় মাস কারখানার ভেতরে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কয়েকজন সদস্য বিভিন্ন সময় নারী কর্মীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করে আসছে। দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকদের একাংশ কর্মকর্তাদের ওইসব আচরণের ন্যায়সঙ্গত প্রতিবাদ করে আসছে। শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টার দিকে আমি কাজ করার জন্য কারখানায় প্রবেশ করি। এ সময় নারী কর্মীদের সহিত কর্মকর্তাদের অশালীন আচরণের প্রতিবাদে শ্রমিকরা একত্র হয়ে বিষয়টি সুষ্ঠু সমাধানের দাবি তোলে। আমিসহ আমার সহকর্মী প্রমা, কুসুম রানী তাদের দাবির সঙ্গে একমত হয়ে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করি। তখন কারখানার ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) সোহেল রানা অজ্ঞাত ৩০-৪০ জন লোক নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়ে বিচার চাওয়া শ্রমিকদের উদ্দেশে করে অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একপর্যায়ে শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) সোহেল রানা এবং রক্ষণাবেক্ষণ শাখার (মেইনটেন্যান্স) সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক (এজিএম) কাউসারসহ অজ্ঞাত ৩০-৪০ জন লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাকেসহ আমার সঙ্গে থাকা কর্মীদের এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করে। সোহেল রানা ও কাউসার এক নারী শ্রমিকের পরনের পোশাক টেনেহিঁচড়ে ছিঁড়ে ফেলে এবং অশোভন আচরণ করে। সহকর্মীদের সহযোগিতায় আহত শ্রমিকরা গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে।’
কারখানার শ্রমিক আল হাদী বলেন, ‘কারখানার কর্মকর্তাসহ বহিরাগত লোকজন শ্রমিকদের ওপর হামলা করেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকালে বিক্ষোভ মিছিল করে শ্রমিকরা।’
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের গাজীপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক জালাল হাওলাদার এবং অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘মালিকপক্ষের লোকজন শ্রমিকদের মারধর করার পাশাপাশি নারী শ্রমিকদের লাঞ্ছিত করে। রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে শ্রমিকরা কারখানার সামনে গিয়ে দেখে কারখানা বন্ধ। পরে শ্রমিকরা কারখানা চালু করার দাবি এবং শ্রমিকদের মারধর ও নারী শ্রমিকদেরকে লাঞ্ছিত করার বিচারের দাবি করেন।’
জায়ান্ট টেক্সটাইলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) সোহেল রানার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘শ্রমিকেরা অযৌক্তিক দাবি তোলে, অতিরিক্ত ওভারটাইম নেয়, কার্ড পান্স করে চলে যায়। কোনও শ্রমিককে বরখাস্ত করলে তাদের কাজে যোগদানের জন্য চাপ সৃষ্টি করে।’
জায়ান্ট টেক্সটাইলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আনেয়ারুল হক রিপন বলেন, ‘আমাদের কারখানা শতভাগ কমপ্লায়েন্স নিয়নে পরিচালিত হয়। কোনও শ্রমিককে কখনও গালিও দেওয়া হয় না। এক শ্রমিককে পুনরায় নিয়োগ করার দাবিতে তার কতিপয় শুভাকাঙ্ক্ষী আমাদের বাধ্য করতে ব্যর্থ হয়। পরে তারা অযৌক্তিক দোষারোপ করে একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। পরে শ্রমিকরা আমাদের বিভিন্ন সেকশনের কর্মকর্তাদের মারধর করে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬-এর ১৩ (১) ধারা মোতাবেক কারখানার সব কার্যক্রম রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) থেকে লে-অফ ঘোষণা করে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানায় বন্ধের নোটিশ টানিয়ে দেয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরে নোটিশ দিয়ে কারখানা খোলার তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে।’

















