নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় তিন লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবায় ছয় জন চিকিৎসক কর্মরত রয়েছেন। জনবল সংকটে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে ৫০ শয্যার ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। চিকিৎসক না থাকায় মারাত্মক সংকটে পড়েছে স্বাস্থ্যসেবা।
৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৫-৬ হাজার রোগী যাওয়া আসা করেন। চিকিৎসক না থাকায় সিংহভাগ রোগীকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। বহির্বিভাগে শতশত রোগী লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে চিকিৎসা না নিয়ে বাধ্য হয়ে ফিরতে হয়।
বহির্বিভাগে সেবা নিতে আসা আবু মোতালেব বলেন, সেই সকাল বেলা টিকিট হাতে নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও ডাক্তার দেখাতে পারিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ডাক্তার ভেতরে রোগী দেখার পর বাইরের রোগী দেখতে বসে, তারপর ২০-২৫ জন রোগী দেখার পর আর সিরিয়াল নেয় না। অফিস বন্ধ করে দেয়। মানুষের ভোগান্তির শেষ নাই। নামেই ৫০ শয্যার হাসপাতাল।
২০১০ সালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও, দীর্ঘ ১৪ বছর পেরিয়ে গেলেও সেবার মান নিয়ে নানা প্রশ্ন স্থানীয়দের। উপজেলার প্রায় তিন লাখ মানুষ কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, এখানে ৩২ চিকিৎসকের পদ অনুমোদিত থাকলেও বাস্তবে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ছয় জন। এর মধ্যে একজন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচঅ্যান্ডএফপিও), একজন আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ও চার জন মেডিক্যাল অফিসার। এই বৃহৎ জনসংখ্যার তুলনায় চিকিৎসকের সংখ্যা অত্যন্ত অপ্রতুল। ফলে সাধারণ মানুষ সঠিক সময়ে সঠিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, রোগী ও রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী, বহির্বিভাগে সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে দুপুর ১টার পর ডাক্তার আর রোগী দেখা না। এ ছাড়াও বিকালে আন্তঃবিভাগে ভর্তি রোগীদের সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও চিকিৎসক আর হাসপাতালে আসে না। হাসপাতালে চিকিৎসক সংকটে ভর্তি রোগীদের চিকিৎসাসহ পরীক্ষা নিরীক্ষার মান ভালো নয় বলেও অভিযোগ রয়েছে রোগীর স্বজনদের।
তাদের দাবি, এখানে নিয়মিত ডাক্তার পাওয়া যায় না। ওষুধ পাওয়া যায় না, ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়। বিদ্যুৎ চলে গেলে জেনারেটরের ব্যবস্থা নেই। শৌচাগারের বেহাল অবস্থা। নেই ব্রেস্টফিডিং কর্নার। নানা ভোগান্তিতে পড়েন রোগীরা। কিছু চিকিৎসক হাসপাতালের বাইরে ব্যক্তিগত চেম্বার ও প্রসূতি রোগীদের সিজার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
রোগীর স্বজন মকবুল ইসলাম বলেন, পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় অনেক সময় রোগীদেরকে ইমার্জেন্সি সেবা পেতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। জায়গার সংকটে মেঝে বা বারান্দায় শুয়ে চিকিৎসা নিতে হয়, আবার অনেকেই চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হন।
ডিমলা সদর এলাকার বাসিন্দা ইলিয়াস হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এত বড় এলাকায় যদি মাত্র ছয় জন ডাক্তার থাকেন, তাহলে আমরা যাবো কোথায়? চিকিৎসা নিতে এসে শুধু হয়রানি আর অবহেলা পাচ্ছি। এখানে জরুরিভাবে আরও চিকিৎসক নিয়োগ করার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাই।
উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চরখড়িবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রশিদ বলেন, ডিমলা হাসপাতালে শুধু প্রাথমিক চিকিৎসা পাওয়া যায়। একটু বড় কোনও সমস্যা হলেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। আমাদের যদি প্রচুর টাকা থাকতো, তাহলে এখানে না এসে সরাসরি রংপুরেই চিকিৎসা নিতে যেতাম। তবে এখানে হাসপাতাল আছে চিকিৎসক নাই, বিছানা নাই, ওষুধ নাই।
ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান বলেন, এখানে জনবল ও চিকিৎসকের সংকট রয়েছে। ওষুধ নেই এই অভিযোগ সত্য নয়। সরকারিভাবে যে ওষুধ পাই, সেগুলো দেওয়া হয়, আর যেগুলো নেই, চিকৎসার ক্ষেত্রে সেসব কিনতেই হবে। তারপরও আমরা আমাদের সাধ্যমতো চিকিৎসা সেবা দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা কম চিকিৎসক দিয়েও রোগীদের পর্যাপ্ত সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে থাকি।