নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় দুই পা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় প্লাস্টিকের ড্রামের ভেতর থেকে মো. নয়ন (৪৯) নামে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে তক্কারমাঠ এলাকায় ঝোপের মধ্যে স্থানীয় লোকজন ড্রামটি দেখে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ এসে ড্রামের ভেতর থেকে লাশটি উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। জেল থেকে বের হওয়ার ১৩ দিনের মাথায় নয়নের স্ত্রী ও তার প্রেমিক এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নিহত নয়ন ফতুল্লার ননন্দলালপুর এলাকার আব্দুস সালামের ছেলে। তিনি পেশায় মাদক কারবারি বলে জানিয়েছে পুলিশ। মাদকের এক মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হন। আড়াই বছর কারাভোগের পর কিছুদিন আগে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী, দুই মেয়ে ও স্ত্রীর প্রেমিকসহ পাঁচ জনকে আটক করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্ত্রী ও তার প্রেমিক হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। রাতে বাংলা ট্রিবিউনকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপারেশন) তারেক আল মেহেদী। আটককৃতরা হলেন- নিহতের দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিনা আক্তার (৪০), তার দুই মেয়ে (২০) ও (১৮) ও সাবিনার প্রেমিক রাসেল ওরফে ঠোঙ্গা রাসেল (৪৫) এবং স্থানীয় আরেক ব্যক্তি চয়ন (৪০)।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরে ফতুল্লার তক্কার মাঠ সংলগ্ন মাওয়া মার্কেটের পেছনের ঝোপে ড্রাম থেকে একটি অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তবে লাশের দুই পা বিচ্ছিন্ন ও অর্ধগলিত অবস্থায় ছিল। সেটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। পরে নাম-পরিচয় শনাক্ত করা হয়। এ ঘটনায় প্রথমে এলাকার মাদক কারবারি রাসেলকে আটক করে পুলিশ। তার দেওয়া তথ্যে সাবিনা ও তার দুই মেয়ে এবং চয়নকে আটক করা হয়। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাসেল ও সাবিনা হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। অন্যদের এ বিষয়ে এখনও জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
আটককৃতদের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, আড়াই বছর আগে মাদকের মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে নয়ন কারাগারে যাওয়ার পর সাবিনার সঙ্গে রাসেলের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। রাসেলও মাদক কারবারি। সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়ে দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিনার বাসায় আসেন। নয়নও সাবিনার দ্বিতীয় স্বামী। আটক দুই মেয়ে সাবিনার প্রথম ঘরের সন্তান। জামিন পেয়ে স্ত্রীর বাসায় আসার পর প্রেমের বিষয়টি জানতে পারেন নয়ন। এ নিয়ে সাবিনার সঙ্গে বাগবিতণ্ডার জেরে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এ অবস্থায় প্রেমিকের পরামর্শে নয়নকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত রবিবার রাতে নয়নকে হত্যা করা হয়। হত্যার পর লাশ ড্রামে ভরতে সমস্যা হয়। পরে দুই পা কেটে পলিথিনে মুড়িয়ে ড্রামে ভরা হয়। ওই দিন রাতেই ঝোপে ফেলে দেন। তবে পা দুটি কোথায় ফেলা হয়েছে, তা এখনও জানাননি আটককৃতরা।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপারেশন) তারেক আল মেহেদী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নয়নের বিরুদ্ধে মাদক ও হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। ১৫ দিন আগে জামিনে মুক্ত হয়ে দ্বিতীয় স্ত্রীর বাসায় এসে রবিবার রাতে হত্যার শিকার হন। এ ঘটনায় দ্বিতীয় স্ত্রীসহ পাঁচ জনকে আটক করা হয়েছে। তারা হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। নয়নের দুই স্ত্রী। তার দ্বিতীয় স্ত্রীর প্রেমের কারণে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। লাশের বিচ্ছিন্ন পা দুটি উদ্ধারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।’