বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভেটেরিনারি অনুষদের উদ্যোগে উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হয়েছে ‘বিশ্ব ডিম দিবস-২০২৫’।
শুক্রবার (১০ অক্টোবর) সকাল ১০টায় ভেটেরিনারি অনুষদ ভবন-২-এর সামনে বেলুন উড়ানোর মাধ্যমে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. বাহানুর রহমান।
এরপর ডিম দিবস উপলক্ষে একটি বর্ণাঢ্য র্যালির আয়োজন করা হয়। র্যালিটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে সৈয়দ নজরুল ইসলাম সম্মেলনকক্ষে গিয়ে শেষ হয়। র্যালিতে ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও পোল্ট্রি উদ্যোক্তারা অংশ নেন। র্যালি শেষে অনুষদীয় গেটসংলগ্ন একটি স্টলে শিক্ষার্থী, পথচারী ও শ্রমজীবী মানুষদের মধ্যে বিনা মূল্যে ডিম বিতরণ করা হয়।
রিকশাচালক মো. শফিক বলেন, ‘আমরা তো প্রতিদিন কষ্ট করে রিকশা চালাই, ডিম কিনে খাওয়ার সুযোগ হয় না সব সময়। আজ বিনা মূল্যে ডিম পেয়ে খুব ভালো লাগছে। এমন আয়োজন যদি আরও হতো, আমাদের মতো মানুষ অনেক উপকার পেতো।’
শিক্ষার্থী আরাফাত হোসেন বলেন, ‘ডিম শুধু একটা খাবার না, এটা একটা শক্তির উৎস। আজকের কর্মসূচিতে অংশ নিতে পেরে গর্ববোধ করছি। আমরা চাই, সবাই যেন প্রতিদিন অন্তত একটা ডিম খায়।’
ডিম দিবস উপলক্ষে মোট আড়াই হাজার ডিম বিতরণ করে ভেটেরিনারি অনুষদ। এর মধ্যে ময়মনসিংহের আল মানার এতিমখানা ও চর নিলিক্ষিয়ার মোট ৩টি এতিমখানায় এক হাজার ডিম বিতরণ করা হয়েছে এবং দুটি স্কুলে আগামী রবিবার পাঁচশ ডিম বিতরণ করা হবে।
পরবর্তীতে বেলা ১১টায় সৈয়দ নজরুল ইসলাম সম্মেলনকক্ষে ‘শক্তিশালী ডিম: প্রাকৃতিক পুষ্টিতে ভরপুর’ প্রতিপাদ্যে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে বক্তারা ডিমের পুষ্টিগুণ ও দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় এর গুরুত্ব তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ডিম দিবস উদযাপন কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফেরদৌসুর রহমান খান। এ ছাড়া সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিম দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. সিদ্দিকুর রহমান, মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ও ইন্টারডিসিপ্লিনারি ইনস্টিটিউট অব ফুড সিকিউরিটির পরিচালক ড. মো. মাহবুব আলম, প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ও ভেটেরিনারি অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. মো. মকবুল হোসেনসহ অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী।
সেমিনারে বাংলাদেশে ডিম উৎপাদন ও পোল্ট্রি খামার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য তিন জন খামারিকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। তারা হলেন- ভিএনএফ অ্যাগ্রো লিমিটেডের চেয়ারম্যান ডা. মোহাম্মদ কামরুজ্জামান মাসুদ, এসএস অ্যাগ্রোভেটের স্বত্বাধিকারী ডা. মো. শাহাদাত হোসেন ও মুক্তাগাছার খামারি মো. আলমগীর কবির।
এ ছাড়া ভেটেরিনারি অনুষদের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের মোট ২৯ জন শিক্ষার্থী ডিম দিবস উপলক্ষে একটি পোস্টার প্রেজেন্টেশনে অংশগ্রহণ করেন। বিজয়ী ১১ জন শিক্ষার্থীকে সেমিনারে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
সেমিনারে ডিন অধ্যাপক ড. মো. বাহানুর রহমান বলেন, ‘ডিম এমন এক খাবার, যেখানে প্রায় সব প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান আছে। এটি শুধু শরীরের শক্তির জোগান দেয় না, শিশু থেকে বৃদ্ধ-সব বয়সের মানুষের সুস্থতা নিশ্চিত করে। আমরা চাই প্রতিটি মানুষ বুঝুক, প্রতিদিন একটি ডিম খাওয়া মানে নিজের ও পরিবারের পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এই সচেতনতা ছড়িয়ে দিতেই আমাদের এই আয়োজন।’