দীর্ঘ ৩৫ বছর পর আগামীকাল বুধবার (১৫ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিরাজ করছে সাজ সাজ রব। ক্যাম্পাসে বইছে নির্বাচনি আমেজ। শিক্ষার্থীদের মাঝে দেখা গিয়েছে উৎসাহ-উদ্দীপনা।
বুধবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সকাল থেকে মোতায়েন থাকবেন বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন বলেন, ‘চাকসু নির্বাচনের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ভোটাররা নির্বিঘ্নে তাদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট প্রদান করবেন।’
এবার চাকসুর সপ্তম নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ২৭ হাজার ৫১৬ জন। যাতে ভিপি-জিএসসহ কেন্দ্রীয় সংসদে পদ আছে ২৬টি। ১৫ হল ও হোস্টেল সংসদে পদসংখ্যা ১৪টি করে। যার বিপরীতে প্রার্থী ৯০৮ জন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদে ১৩টি প্যানেল ও স্বতন্ত্র মিলে প্রার্থী ৪১৫ জন। ৫টি অনুষদ ভবনের ১৫টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে ৬০টি কক্ষে।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা পরিদর্শন করেন র্যাব-৭-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাফিজুর রহমান। এ সময় তিনি এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন ঘিরে নিরাপত্তা নিয়ে তেমন কোনও হুমকি দেখছি না। শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে কোনও হুমকি নেই। শুধু বাইরে থেকে ইন্ধন না এলে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনে এপিবিএন প্রচুর পরিমাণে নিয়োগ থাকবে এবং আমাদের র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) কমপক্ষে আটটি টহল দল সব সময় থাকবে এবং অতিরিক্ত রিজার্ভ ফোর্স আমরা রাখবো, প্রয়োজন হলে তারাও আসবে। এ ছাড়াও আমাদের সাদা পোশাকে বেশকিছু গোয়েন্দা সংস্থা থাকবে, গোয়েন্দার লোকজন থাকবেন। এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক মনে হয়েছে। আশা করি, নির্বাচনটা খুব সুন্দরভাবে, সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে।’
১৯৬৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে মাত্র ছয়বার। এর মধ্যে প্রথম নির্বাচনটি হয় ১৯৭০ সালে। আর সর্বশেষ নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯০ সালে। ফলে এখন যারা ভোট করছেন, তাদের কেউই আগের সংসদ দেখার সুযোগ পাননি। যদিও ১৯৭৩ সালের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, প্রতি বছর চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি।
ফিরে দেখা ৬ বারের চাকসু নির্বাচন
১৯৭০ সালের প্রথম চাকসু নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হন ছাত্রলীগের মোহাম্মদ ইব্রাহিম এবং জিএস হন ছাত্রলীগের আবদুর রব। ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়াতে তৎকালীন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সামনে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন চাকসু জিএস আবদুর রব। ১৯৭২ সালে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় চাকসু নির্বাচন। এ নির্বাচনে ছাত্র ইউনিয়নের শামসুজ্জামান হীরা ভিপি এবং জাসদ ছাত্রলীগের মাহমুদুর রহমান মান্না জিএস নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালের তৃতীয় চাকসু নির্বাচনে জাসদ ছাত্রলীগের এস এম ফজলুল হক ভিপি ও গোলাম জিলানী চৌধুরী জিএস নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালের চতুর্থ চাকসু নির্বাচনে ভিপি হন জাসদ ছাত্রলীগের মাজহারুল হক শাহ চৌধুরী এবং জিএস হন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ছাত্রলীগের জমির চৌধুরী। ১৯৮১ সালে চাকসুর পঞ্চম নির্বাচনে ভিপি ও জিএস পদে নির্বাচিত হন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সে সময়ের নেতা জসিম উদ্দিন সরকার ও আবদুল গাফফার। ১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ চাকসু নির্বাচনে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের প্রার্থী জাতীয় ছাত্রলীগের নাজিম উদ্দিন ভিপি নির্বাচিত হন। আর জিএস নির্বাচিত হন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি আজিম উদ্দিন আহমদ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে পদের সংখ্যা ২৬টি, এখানে মোট প্রার্থী হয়েছেন ৪১৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ প্রার্থী ৩৬৮ জন এবং নারী প্রার্থী ৪৭ জন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ১৪টি আবাসিক হল ও ১টি হোস্টেল রয়েছে। এর মধ্যে নয়টি ছাত্রদের এবং পাঁচটি ছাত্রীদের। এর বাইরে শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেল রয়েছে। এই ১৫টি আবাসনের নামে একটি করে ভোটকেন্দ্র থাকছে এ নির্বাচনে। নির্বাচনে ১৪ হল ও ১টি হোস্টেলে ২০৬টি পদ আছে। প্রতি হলে পদ আছে ১৪টি করে। হোস্টেলে পদ আছে ১০টি। মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৪৯৩ জন। এর মধ্যে ৯টি ছাত্র হলের প্রার্থীসংখ্যা ৩৫০ জন এবং ৫টি ছাত্রী হলে প্রার্থীসংখ্যা ১২৩ জন। এ ছাড়া শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেলে প্রার্থী হয়েছেন ২০ জন।