ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে বাবাকে হত্যার দায়ে ছেলেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও লাখ টাকা জরিমানা করেছেন জেলা দায়রা জজ আদালত। আজ বুধবার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে আসামির উপস্থিতিতে এ রায় প্রদান করেন জেলা দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. শহিদুল ইসলাম।
মামলার বিবরণীতে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগর উপজেলার জিনদপুর ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে ২০২৩ সালের ১৪ আগস্ট দুপুর সোয়া ১২টার দিকে জমিতে পাট কাটা নিয়ে নিজ বাড়িতে বাবা লিল মিয়ার সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় লিপ্ত হন ছেলে মো. জসিম উদ্দিন। একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে কাঠ দিয়ে বাবা লিল মিয়ার মাথায় আঘাত করে ছেলে জসিম। এ সময় লিল মিয়া গুরুতর আহত হলে তাকে নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরে এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী মমতাজ বেগম ওই দিন সন্ধ্যায় নবীনগর থানায় ছেলে জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন পাটোয়ারী মামলাটি তদন্ত করে ২০২৪ সালের ৩০ এপ্রিল হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ এনে দণ্ডবিধির ৩০২ ও ৩২৩ ধারায় আদালতে পুলিশ প্রতিবেদন (চার্জশিট) দাখিল করেন। পরে মামলাটিতে ৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আদালত আসামি মো. জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে তার মায়ের আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ৩০২ ধারায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন। একই সঙ্গে আদালত তাকে এক লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন।
রায় ঘোষণার পর আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. নাজমুল হক রিটন জানান, তার আসামি (মো. জসিম উদ্দিন) মানসিক রোগী ছিলেন। বাদী এবং সাক্ষী সবাই আসামির আপনজন হওয়ায় অন্য কোনও সাক্ষী ছিল না। এর মধ্য দিয়ে আসামি ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। নিম্ন আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে তিনি উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।
অপরদিকে, আসামির উপস্থিতিতে রায় ঘোষণার পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফখর উদ্দিন আহম্মদ খান জানান, আসামি মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন না। তার বাবাকে সুস্থ মস্তিষ্কে, ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে। সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে মামলাটি পর্যালোচনা করে আদালত আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেছেন। এই রায়ের মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।