ফরিদপুরে ভাড়া চাওয়ায় হাসান প্রামাণিক (২৭) নামে এক রিকশাচালককে তুলে নিয়ে পিটিয়ে আহত করেছেন এক বিএনপি নেতা ও তার ছেলে। নির্যাতনের শিকার রিকশাচালক বর্তমানে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি ফরিদপুর পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের আদমপুর এলাকার ইউসুফ প্রামাণিকের ছেলে। অভিযুক্ত মো. আব্দুর রহমান শেখ ওই ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক পদে রয়েছেন।
রিকশাচালকের অভিযোগ, আদমপুর গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রহমান শেখ বিভিন্ন সময় রিকশায় উঠে ভাড়া না দিয়ে চলে যান। গতকাল বুধবার সকাল ১০টার দিকে আমার রিকশায় ওই নেতা উঠতে চাইলে নিতে অপরাগতা জানাই। এ সময় তাকে বলেছিলাম, ‘আপনি তো প্রতিদিন ভাড়া না দিয়েই চলে যান।’ এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই নেতার ছেলে রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে আমাকে তুলে নিয়ে আদমপুর বাজারে তার দোকানের পেছনের কক্ষে আটকে কাঠের লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করেন। পরে আমার চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।’
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) বিকালে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, পুরুষ সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছেন হাসান প্রামাণিক। হাত-পা ও পিঠে জখমের চিহ্ন দেখিয়ে নির্যাতনের বর্ণনা দেন হাসান। এ সময় তার পাশে বসে ছিলেন মা নিলুফা বেগম ও বাবা ইউসুফ প্রামাণিক।
হাসান বলেন, ‘আব্দুর রহমান মাঝেমধ্যে আমার রিকশায় উঠেন। কিন্তু ভাড়া দেন না। বুধবার উঠতে চাইলে আমি বলেছিলাম, “আপনি তো ভাড়া দেন না। ভাড়া না দিয়েই চলে যান। আজ নিতে পারবো না। আগের ভাড়া আগে দেন।” এই কথা পাশে থেকে তার ছেলে রফিকুল শুনেছিল। কিছুক্ষণ পর দুজন লোক মোটরসাইকেলে এসে বলেন, তোকে রফিকুলের দোকানে যেতে হবে, তখন আব্দুর রহমান এসে জোর করে আমাকে তাদের মোটরসাইকেলে উঠিয়ে দেন। এরপর রফিকুলের দোকান বন্ধ করে আমাকে কাঠ দিয়ে মারতে থাকে রফিকুল। তার পা জড়িয়ে ধরে মাফ চাইলেও মারতে থাকে।’
ইউসুফ প্রামাণিক জানিয়েছেন, প্রায় ২০ বছর আগে পদ্মা নদীর ভাঙনের শিকার হয়ে আদমপুর এলাকায় ওই বিএনপি নেতার বাড়ির পাশে এক আত্মীয়ের জমিতে ঘর তুলে বসবাস করে আসছে ইউসুফের পরিবার। তার তিন ছেলের মধ্যে হাসান মেজো এবং ছোট ছেলে মানসিক রোগী। তিন বছর আগে হাসানের একটি কিডনি বিকল হয়ে যায়। এরপর ভারতে নিয়ে কিডনিটি অপসারণ করা হয়। এতে চার লক্ষাধিক টাকা খরচ হওয়ায় নিঃস্ব হয়ে পড়ে পরিবারটি। পরে পরিবারের হাল ধরতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালানো শুরু করে হাসান।
ইউসুফ প্রামাণিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা অসহায় ও গরিব মানুষ। ভাড়া চাওয়ায় আমার অসুস্থ ছেলেকে তুলে নিয়ে মারধর করেছে তারা। আমি এর কঠিন বিচার চাই।’
এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে ও বিচার চেয়ে একই এলাকার বাসিন্দা সিদ্দিক প্রমাণিক বলেন, ‘আব্দুর রহমান আগে আওয়ামী লীগ করতেন, এখন বিএনপির নেতা সেজেছেন। তার ছেলেও ছাত্রলীগ করতো। এলাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে তারা। একজন নিরীহ ছেলেকে নির্যাতন করেছে, আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা আব্দুর রহমান বলেন, ‘ওই রিকশাচালক আমাকে একটি খারাপ কথা বলায় আমার ছেলে রাগে ঘটনাটি ঘটিয়েছে। পরে আমি নিজে চিকিৎসার জন্য খরচ দিয়ে এসেছি।’
এ ঘটনায় বুধবার রাতে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী রিকশাচালকের বাবা। এ বিষয়ে জানতে কোতোয়ালি থানার পরিদর্শককে (তদন্ত) একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি। তবে অভিযোগপত্রের তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক নূর হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটি তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’