সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চলের স্থানীয় খাদ্যভান্ডার ও অচাষকৃত উদ্ভিদ সংরক্ষণে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কলমিশাকের মেলা ও রান্না প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নের ধুমঘাট আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিকের সহযোগিতায় সবুজ সংহতি ও স্থানীয় জনসংগঠন এ মেলার আয়োজন করে।
সিক্সটিন ডেজ অব গ্লোবাল অ্যাকশন অন অ্যাগ্রোইকোলজি-২০২৫ ও বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এ মেলায় শীলতলা গ্রামের স্থানীয় পাঁচটি জনসংগঠনের ১০ জন সদস্য অচাষকৃত উদ্ভিদের প্রদর্শনী এবং ১০ জন রান্না প্রতিযোগিতায় অংশ নেন।
প্রদর্শনীতে থানকুনিপাতা, হেলেঞ্চা, শাপলা, গাদোমনি, আদাবরুন, পেপুল, ইপিলইপিল, দুর্বা, তুলশি, সেঞ্চি, বামনআঁটি, বিলকুমারি, কলমি, কচুশাক, নাটা, অশ্বগন্ধা, শিষাকন্দা, ঘুমশাক, ডুমুর, আকন্দ, মাটিফোড়া, তিত বেগুন, নিমুখা, বৌনুটি, ধুতরাসহ ৯০ প্রজাতির অচাষকৃত শাক ও উদ্ভিদ স্থান পায়।
এ সময় অংশগ্রহণকারীরা এসব অচাষকৃত শাক ও উদ্ভিদের গুণাগুণ, প্রাপ্তিস্থান, কোন মৌসুমে পাওয়া যায়, কোনটি মানুষ ও প্রাণীর খাবার এবং কীভাবে খাওয়া যায়; তা তুলে ধরেন। এ ছাড়া রান্না প্রতিযোগিতায় স্থানীয় নারীরা বিভিন্ন শাক, মূল ও কন্দজাত উপাদান দিয়ে ঐতিহ্যবাহী খাবার তৈরি করেন। পাঁচ সদস্যের বিচারক স্বাদ, পুষ্টিগুণ ও উপস্থাপনার ভিত্তিতে সেরা প্রতিযোগী নির্ধারণ করেছেন।
কলমিশাকের মেলায় সর্বোচ্চ সংখ্যক অচাষকৃত শাক ও উদ্ভিদ প্রদর্শন করে প্রথম স্থান অধিকার করেন মালতি রানী, দ্বিতীয় হন শিখা রানী এবং তৃতীয় হন পৃথা রানী। এ ছাড়া রান্নায় প্রতিযোগিতায় প্রথম হন ইতি রানী, দ্বিতীয় হন রিংকু রানী এবং তৃতীয় হয়েছেন অঞ্জলী রানী।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সবুজ সংহতির সভাপতি জিল্লুর রহমান। এতে বক্তব্য রাখেন ওই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুল আলিম, স্থানীয় ইউপি সদস্য কমলা রানী মৃধা, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাজীব বাছাড়, কৃষাণী অল্পনা রানী, মিতা রানী, কৃষক চিত্তরঞ্জন, বারসিক কর্মকর্তা রামকৃষ্ণ জোয়ারদার প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে জাতীয় কৃষিপদক প্রাপ্ত কৃষাণী অল্পনা রানী মিস্ত্রি বলেন, ‘উপকূলীয় অঞ্চল চাষ করা ও অচাষ করা নানা শস্য ফসলে ভরা ছিল। বর্তমানে আধুনিক কৃষি ও বাজারনির্ভর খাদ্যাভ্যাস, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, লবণাক্ততা অচাষকৃত শাক ও উদ্ভিদের প্রাপ্তিস্থান বিলুপ্ত করেছে। রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে এগুলো বিলুপ্তির পথে। কিন্তু এগুলোই গ্রামীণ মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টির প্রধান উৎস। এসব শাক ও উদ্ভিদবৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও ব্যবহারে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।’