মরমি সাধক ও মানবতাবাদী দার্শনিক ফকির লালন সাঁইয়ের ১৩৫তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার আখড়ায় শুরু হয়েছে তিন দিনের ‘লালন তিরোধান দিবস’ অনুষ্ঠান। শুক্রবার থেকে বিকাল ৪টায় আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে উদ্বোধন হয় অনুষ্ঠানের। প্রথমবারের মতো জাতীয় দিবস হিসেবে আয়োজিত এ অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মুস্তাফা সরয়ার ফারুকী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন– মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মফিদুর রহমান, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি রেজাউদ্দিন স্ট্যালিন। মুখ্য আলোচক ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান লেখক ও গবেষক অধ্যাপক গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক। সভাপতিত্ব করেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আবু হাসান মোহাম্মদ আরেফিন।
অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক গায়ত্রী চক্রবর্তী বলেন, ‘লালন ফকির ছিলেন একজন অসাম্প্রদায়িক চেনতার মানুষ। যিনি সবকিছুর ঊর্ধ্বে মানুষকে স্থান দিয়েছেন, মানুষকে ভালোবেসেছেন। লালন তার চিন্তা-চেতনা দিয়ে বিশ্ব পরিমণ্ডলে মানুষের ভাবনা-চিন্তার খোরাক জুগিয়েছেন। এ মাটিতে লালন শুয়ে আছেন।’
চিন্তক, কবি ও লেখক ফরহাদ মজহার বলেন, ‘এবার জাতীয়ভাবে লালনের তিরোধান দিবস পালন হচ্ছে। এটি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতেও মিশে গেছে। গায়ত্রী চক্রবর্তী এ মাটিতে আসার মাধ্যমে এবার লালন দিবস আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে চলে গেছে। লালনকে নিয়ে গবেষণার অনেক কিছু বাকি আছে। এ ধামে একটি আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাকেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে। যাতে মানুষ তার চিন্তার জগতকে পরিবর্তন করতে পারে।’
মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা বারবার এ মাটিতে ফিরে আসি। যতদিন বেঁচে থাকবো, ততদিন আসবো।’ ফরিদা পারভিনকে স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘আজ ফরিদা ফারভীন আমাদের মাঝে নেই। তিনি লালনের গানকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়ে গেছেন।’
সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তার বক্তব্যে বলেন, ‘লালন ছিলেন একজন সহজ মানুষ। তাকে সারা বিশ্বের মানুষ আজ চেনে। এবার জাতীয়ভাবে অনুষ্ঠান হচ্ছে। এটি আগামীতে আরও বড় পরিসরে পালন হবে।’
আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে গান পরিবেশন করে শিল্পীরা।
১২৯৭ বঙ্গাব্দের পহেলা কার্তিক উপমহাদেশের প্রখ্যাত মরমি সাধক ফকির লালন সাঁই দেহত্যাগের পর থেকে তার স্মরণে লালন একাডেমি ও জেলা প্রশাসন এই স্মরণোৎসব উদযাপন করে আসছে। তবে এবারই প্রথম দিবসটি জাতীয়ভাবে পালন করা হবে। প্রতিবারের মতো এবারও দেশ-বিদেশের হাজারো লালনভক্ত, অনুসারী আর দর্শনার্থীরা তার আখড়ায় এসে জড়ো হয়েছেন। ভাবের আদান-প্রদানে মেতে উঠেছেন সাধু-ভক্তরা। স্মরণোৎসব শুরুর কয়েকদিন আগে থেকেই লালন ধামে আসতে শুরু করেছেন তারা। লালন ফকিরের মাজার প্রাঙ্গণ, মাঠ, কালি নদীর পাড়ঘেঁষে অস্থায়ীভাবে তৈরি করেছেন আস্তানা। চলছে লালন ভক্ত-অনুরাগীদের ভাব বিনিময়। স্মরণোৎসব ঘিরে বাউল সাধুদের গানে গানে মুখরিত হচ্ছে আখড়া।

















