সম্প্রতি বুয়েটে ঘটে যাওয়া ধর্ষণের ঘটনার বিস্তারিত না জেনেই সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) নবনির্বাচিত নির্বাহী সদস্য আকাশ দাশ। তার এমন মন্তব্যের প্রতিবাদে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ মিছিল করেন নবনির্বাচিত প্রতিনিধিরা এবং বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এতে বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) শপথ অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণাও দিয়েছেন বেশকিছু নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দ।
বুধবার (২২ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৯টার দিকেবিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। পরে রাত ১০টার দিকে মিছিল নিয়ে কাটাপাহাড় হয়ে স্লোগান দিতে দিতে শহীদ মিনারের সামনে এসে অবস্থান নেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের ‘এই ক্যাম্পাসে হবে না, আকাশ দাসের ঠিকানা’, ‘আকাশ দাসের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে শোনা যায়।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগকে কেন্দ্র করে আকাশ দাস তার পোস্টে লেখেন, ‘সম্প্রতি বুয়েটের ধর্ষণ কাণ্ড নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে… কিন্তু আমি যতটুকু বুঝি, একতরফাভাবে কখনও কাউকে দায়ী করা যায় না। ছেলেটা যদি দোষী প্রমাণিত হয় তাহলে অবশ্যই তার শাস্তি আমি দাবি করছি। কিন্তু মেয়েটা যে নির্দোষ এমনটাও তো নয়।’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘বরং যে ধরনের ধর্ষণ কাণ্ডগুলো ঘটে থাকে, বেশিরভাগ মেয়েরাই ছেলেদের ফাঁসানোর জন্য ধর্ষণকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। এখানেও এমনটা ঘটেছে কি না সেটিও তদন্তের আওতায় আনা উচিত বলে আমি মনে করি। ছেলের দোষ যদি ৭০% থেকে থাকে তাহলে আমি বলবো মেয়েটার দোষ ৩০% হলেও আছে। হয়তোবা মেয়েটার মনের মতো ছিল না বলে ছেলেটাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে।’
আরও লেখেন, ‘বিগত ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করলে এমনটাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঘটেছে। বিষয়টা হলো এমন, নিজের মনমতো হলে বন্ধু বা বয়ফ্রেন্ড আর মনমতো না হলে ধর্ষক। এ জন্য সবারই বন্ধু নির্বাচনে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত। একটা মেয়েকে কখনও জোরপূর্বক ঘর থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা সম্ভব হবে না, যদি না মেয়েটার আগ্রহ থাকে। এই দেশে নারী নির্যাতন আইন থাকলেও পুরুষ নির্যাতন আইন এখনও নাই।’
বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীরা আকাশ দাসের এমন বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানান এবং তার সদস্যপদ বাতিলের দাবি তোলেন।
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও শাখা নারী অঙ্গনের সংগঠক সুমাইয়া শিকদার আকাশ দাসের মন্তব্যকে ধর্ষকের হয়ে সাফাই হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘সে সাফাই গাইতে গিয়ে নারীদের নিয়ে কুমন্তব্য করেছেন এবং ধর্ষিত নারীর ওপর দোষ চাপিয়ে দিয়েছেন।’ তিনি অবিলম্বে আকাশ দাসের সদস্যপদ বাতিল করার দাবি জানান।
নওয়াব ফয়জুন্নেছা হলের নব-নির্বাচিত ভিপি পারমিতা চাকমা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আকাশ দাসের মতো র্যাপিস্টদের পক্ষে থাকা মানুষদের সঙ্গে শপথ গ্রহণ করতে চাই না।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা আকাশ দাসের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করলাম এবং আমরা স্পষ্টভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়ে দিতে চাই, অবিলম্বে আকাশ দাসের সদস্যপদ বাতিল করুন অন্যথায় আমরা মনে করব আপনারা আকাশ দাসের চিন্তাধারা ধারণ করেন।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্যসচিব আল মাসনূন, ইসলামী ছাত্র মজলিসের সভাপতি সাকিব মাহমুদ, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সহ-সাধারণ সম্পাদক উম্মে সাবাহ্ তাবাসসুম, ছাত্রদলের শাফায়েত হোসেন সহ বিভিন্ন হল সংসদে নির্বাচিত চাকসু প্রতিনিধি ও শতাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী।