চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদের নির্বাচিত প্রার্থীরা শপথ নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় তারা শপথ নেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের (ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভবন) মিলনায়তনে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তবে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে ফেসবুক পোস্ট দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়া চাকসুর নির্বাহী সদস্য আকাশ দাস শপথ অনুষ্ঠানে আসেননি।
অনুষ্ঠানের শুরুতে গণঅভ্যুত্থানে শহীদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শহীদ হৃদয় চন্দ্র তড়ুয়া ও শহীদ মো. ফরহাদ হোসেনের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার চাকসুর নির্বাচিত প্রার্থীদের শপথ পড়ান। আর হল সংসদের প্রতিনিধিদের শপথ পড়ান সংশ্লিষ্ট আবাসিক হলের প্রাধ্যক্ষ।
শপথ গ্রহণ করেন চাকসুর নবনির্বাচিত সহসভাপতি (ভিপি) মো. ইব্রাহীম হোসেন রনি, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সাঈদ বিন হাবিব, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) আইয়ুবুর রহমান তৌফিকসহ নির্বাচিতরা। এ ছাড়া শপথ গ্রহণ করেন হল সংসদের নির্বাচিত ভিপি, জিএস ও এজিএসসহ অন্য সদস্যরা। তবে সম্প্রতি বুয়েটে ঘটে যাওয়া ধর্ষণের ইস্যুতে বিতর্কিত পোস্ট দেওয়া নিয়ে ছাত্রসংসদের (চাকসু) নবনির্বাচিত নির্বাহী সদস্য আকাশ দাসকে শপথ অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি। আকাশ দাস শিবির-সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল থেকে নির্বাচিত হন।
অনুষ্ঠান শেষে উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় নেতা তৈরির কারখানা নয়, সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। আমরা অনেক কাজ করেছি বিনা টাকায়। হলে হলে ওয়াশিং মেশিন দিয়েছি, ই-কার দিয়েছি। আমাদের মাথার মধ্যে একটি ফিকিরই আছে ছাত্রদের আমরা সেবা দেবো। যারা আজকে বিজয়ী হয়েছে চাকসুতে আমরা সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে মিলেমিশে কাজ করবো। আপনারা ভালো কাজগুলো অব্যাহত রাখবেন। একটা কথা মাথায় রাখবেন বিশ্ববিদ্যালয় নেতা তৈরির কারখানা নয়, ভালো ছাত্রছাত্রী তৈরির কারখানা। টেন্ডারবাজ, চাঁদাবাজদের আপনারা জাদুঘরে পাঠান। এটাই আমার চাওয়া।’
চাকসু ও হল সংসদের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন বলেন, ‘চাকসু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য জরুরি একটি অঙ্গ। দীর্ঘদিন ধরে চাকসু ছিল না। শিক্ষার্থীরা বিভিন্নভাবে তাদের দাবি তুলে ধরেছেন। এখন তারা নিয়মতান্ত্রিকভাবে তাদের যেসব চাওয়া রয়েছে, সেগুলো সম্পর্কে কথা বলতে পারবেন এবং এর মাধ্যমে তাদের পরস্পরের মধ্যে যে সহমত ও শ্রদ্ধাবোধ, সেগুলো জাগ্রত হবে।’
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, সহ-উপাচার্য (প্রশাসনিক) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন, প্রক্টর অধ্যাপক হোসেন শহীদ সরওয়ার্দী, চাকসুর সাবেক ভিপি আ ম শামসুজ্জামান (হিরা), এস এম ফজলুল হক, মাজহারুল হক শাহ, মো. জসিম উদ্দিন ও জিএস আ ফ ম মাহমুদুর রহমান প্রমুখ।
অনুষ্ঠান শেষে চাকসুর ভিপি মো. ইব্রাহীম হোসেন রনি বলেন, ‘সাংবাদিকরা আমাকে প্রশ্ন করেন আপনি তো ভিপি, আপনি প্রথমেই কী চমক দেখাতে চান? আমাদের চমকের জায়গা বলতে আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কাজ করতে চাই। কোনও চমক দেখানোর জন্য নির্বাচন হয়নি বরং গত ৩৫ বছর আমাদের শিক্ষার্থীদের যেসব দাবি-দাওয়া বাস্তবায়িত হয়নি, সেগুলো বাস্তবায়ন করতে চাই।’
গত ১৫ অক্টোবর চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভিপি ও জিএস পদে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিতরা নির্বাচিত হন। এ ছাড়া এজিএস পদে ছাত্রদলের আয়ুবুর রহমান নির্বাচিত হন। এর বাইরে বাকি ২৩টি পদের ২২টিতেও ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা জয়ী হন।
এদিকে, বুয়েটের এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে ফেসবুকে নিজের আইডি থেকে পোস্ট করে সমালোচিত হওয়ার পর শপথে অনুপস্থিত ছিলেন আকাশ দাস। বুধবার বিকাল ৩টার দিকে তিনি এ পোস্ট দিয়েছিলেন।
আকাশ দাসের দেওয়া পোস্টে তিনি ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনায় ভুক্তভোগীকেও দায়ী করেন। এ ছাড়া তদন্ত করলে ভুক্তভোগী ব্যক্তির দোষ বেশি পাওয়া যাবে বলেও উল্লেখ করেন। যদিও এক ঘণ্টার মধ্যে তিনি পোস্ট মুছে দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন। তবে এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর রাতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ হয়। পাশাপাশি চাকসু ও হল সংসদের নির্বাচিত নেতারাও আকাশ দাসের সঙ্গে শপথ নিতে আপত্তি জানান।
শপথ অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে আকাশ দাস বলেন, ‘যেহেতু আমি শপথ অনুষ্ঠানে গেলে সংঘাতমূলক পরিস্থিতি হতো, তাই আমি যাইনি।’
অনুপস্থিত থাকা প্রতিনিধিদের শপথ কীভাবে নেওয়া হবে, তা জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার মনির উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের কাজ ছিল নির্বাচিত করা। আমরা নির্বাচিত করে দিয়েছি, বাকিটা প্রশাসনের দায়িত্ব।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসনিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সংসদের জয়ী প্রার্থীরা চাকসুর সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আলাদাভাবে শপথ নিতে পারবেন।’