গাজীপুর সাফারি পার্কে থাকা সর্বশেষ জিরাফটিও মারা গেছে। আর এর মাধ্যমেই জিরাফশূন্য হয়ে পড়েছে পার্কটি। টিবি রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ জিরাফটি মারা যায়। শনিবার (২৫ অক্টোবর) বিকাল ৩টায় সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী বন সংরক্ষক তারেক রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত সোমবার (২০ অক্টোবর) বিকাল ৪টায় গাজীপুর সাফারি পার্কের অভ্যন্তরে আফ্রিকান সাফারি বেষ্টনীতে পূর্ণ বয়স্ক অসুস্থ স্ত্রী জিরাফ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। ওই দিন জিরাফটির মৃত্যু হলেও শনিবার (২৫ অক্টোবর) গণমাধ্যম কর্মীদের তথ্যটি জানান পার্ক কর্তৃপক্ষ।
সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী বন সংরক্ষক তারেক রহমান জানান, ২০১৩ সালে পার্কটি প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুর বছর থেকে দুই দফায় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ১০টি জিরাফ আনা হয়। ফ্যালকন ট্রেডার্স নামে আন্তর্জাতিক প্রাণী বিপণন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এগুলো আমদানি করা হয়েছিল। এরপর ২০১৭ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে আরও চারটি জিরাফ বাচ্চা দেয়। অন্যদিকে ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে রোগাক্রান্ত হয়ে বেশ কিছু জিরাফ মারা যায়। পরে ২০২৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর আরেকটি জিরাফ মারা গেলে স্ত্রী জিরাফটি সঙ্গীহীন অবস্থায় ছিল। সেটিও সোমবার বিকাল ৪টায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
মৃত্যুর চারদিন পর শুক্রবার পার্কের বন্যপ্রাণী পরিদর্শক রাজু আহমেদ এ ঘটনায় শ্রীপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। সরকারি কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে জিডি করতে বিলম্ব হয়েছে বলে জানায় সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ।
পার্কের বন্যপ্রাণী পরিদর্শক রাজু আহমেদ জানান, সাফারি পার্কের একমাত্র স্ত্রী জিরাফটি অসুস্থ হয়ে পড়লে ১৪ অক্টোবর (মঙ্গলবার) সকাল ১০টায় পার্কের অসুস্থ বন্যপ্রাণীর চিকিৎসা সেবা ও পরামর্শ প্রদানে বিশেষজ্ঞ মেডিক্যাল বোর্ডের জরুরি সভা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি মেডিসিন অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. গোলাম হায়দারকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়।
কমিটির অপর সদস্যরা হলেন- কেন্দ্রীয় ভেটেরিনারি হাসপাতালের পরিচালক ডা. আব্দুল আজিজ আল মামুন, কেন্দ্রীয় রোগ অনুসন্ধান গবেষণাগারের প্রিন্সিপাল সায়েন্টিফিক অফিসার ড. গোলাম আজম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় পশু হাসপাতালের প্রাক্তন চিফ ভেটেরিনারি অফিসার ডা. এ বি এম শহীদ উল্লাহ, গাজীপুর সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি অফিসার ডা. হাতেম সাজ্জাত ও জুলকার নাইন।
পার্কের বিশেষজ্ঞ মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা উপস্থিত থেকে মৃত জিরাফের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন। তারা তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, জিরাফটি টিউবারকিউলোসিস (টিবি) রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। পার্কের ভেতরেই মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে।
গাজীপুর ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক কামাল হোসেন জানান, জিরাফ মৃত্যুর ঘটনায় একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়েছে। যা ইতিমধ্যে কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।
শ্রীপুর থানার ওসি মহম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, জিরাফের মৃত্যুর ঘটনায় একটি জিডি করেছে পার্ক কর্তৃপক্ষ। ডায়েরিতে অসুস্থতার কথা উল্লেখ করা হয়েছ।

















