নারায়ণগঞ্জে আদালতে হাজিরা দিতে এসে একটি মামলার বাদী ও তার পরিবারের সদস্যরা হামলার শিকার হয়েছেন। বাদীর অভিযোগ, বিবাদীপক্ষের আইনজীবী নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খানের নির্দেশে তার জুনিয়র আইনজীবী, মহুরি ও অনুসারীরা এ হামলা চালিয়েছেন। এতে তার স্ত্রী, পাঁচ বছরের শিশুসন্তানসহ পরিবারের চার সদস্য আহত হয়েছেন। এ ছাড়া শ্লীলতাহানিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ বাদীর।
রবিবার (২৬ অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে নারায়ণগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গণে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন নারায়ণগঞ্জের স্যানিটারি পণ্যের ব্যবসায়ী ও মামলার বাদী মো. ইরফান মিয়া (৫০), তার স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা এবং তাদের ছেলে মো. জিদান (১৮) ও আবদুল্লাহ (৫)। তারা নারায়ণগঞ্জের ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ঘটনায় ইরফানের স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা ফতুল্লা থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এতে সাখাওয়াত হোসেন ছাড়াও তার ল ফার্মের জুনিয়র আইনজীবী খোরশেদ আলম, আল-আমিন এবং সহকারী (মুহুরি) হিরণ বাদশাকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, স্যানিটারি পণ্য বিক্রি বাবদ ইসমাইল নামের এক ব্যবসায়ীর কাছে ২৫ লাখ টাকা পান ইরফান মিয়া। গত এক বছরেও ইসমাইল টাকা পরিশোধ করেননি। উল্টো টাকা চাইতে গেলে নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। এ ঘটনায় কয়েক মাস আগে ইরফান নারায়ণগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। ওই মামলায় ইসমাইলের পক্ষের আইনজীবী হিসেবে লড়ছেন বিএনপি নেতা সাখাওয়াত হোসেন।
রবিবার মামলার হাজিরার তারিখ থাকায় বাদী ও তার পরিবারের সদস্যরা নারায়ণগঞ্জ আদালতে আসেন। আদালত প্রাঙ্গণে বাদীপক্ষের লোকজনকে দেখতে পেয়ে সাখাওয়াত হোসেন ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তিনি বাদীকে আদালত থেকে চলে যেতে বলেন। এ নিয়ে তর্ক হলে সাখাওয়াত হোসেন খানের নির্দেশে তার অনুসারী আইনজীবী ও সহকারী মিলে ইরফান মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা চালান।
এরই মধ্যে আদালত প্রাঙ্গণে বাদীপক্ষকে মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে ইরফান মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের মারধর করা কয়েকজন ব্যক্তির মধ্যে সাখাওয়াত হোসেনের ঘনিষ্ঠ অনুসারী খোরশেদ আলম, আল-আমিন এবং মুহুরি হিরণ বাদশাকে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে ইরফানের ছেলে জিদান জানিয়েছেন, আদালত প্রাঙ্গণে তার বাবাকে দেখতে পেয়ে সাখাওয়াত হোসেন হুমকি-ধমকি দিতে শুরু করেন। পরে সাখাওয়াতের নির্দেশে তার ফার্মের জুনিয়র আইনজীবীরা তার বাবাকে মারধর করতে শুরু করেন। ঠেকাতে গেলে তারা তাকেও আঘাত করেন। একপর্যায়ে আদালতপাড়ায় দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা তাদের হেফাজতে নেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, ‘ওই ঘটনার সময় আমি আদালতে ছিলাম না। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমাকে অহেতুক জড়ানো হচ্ছে।’
সাখাওয়াতের অনুসারী আইনজীবী আল-আমিন বলেন, ‘আদালতপাড়ায় কয়েকজন আমাদের মুহুরিকে মারধর করছিলেন। এ সময় মারধর থামাতে গেলে ধস্তাধস্তি হয়।’
সাখাওয়াত হোসেনের ঘনিষ্ঠ অনুসারী আইনজীবী খোরশেদ আলম বলেন, ‘মূলত বাদী ও বিবাদীপক্ষের মধ্যে এ ঝামেলার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে তারা আমাদের মুহুরির ওপর হামলা চালান। তখন আমরা এই ঝামেলা মিটমাট করার চেষ্টা করি। কিন্তু এটি সমাধান করতে গিয়ে আমরা ফেঁসে গেছি।’ বাদীপক্ষের লোকজনকে মারধর করতে আপনাকেও দেখা গেছে ভিডিওতে এমন প্রশ্নের কোনও উত্তর দেননি খোরশেদ।
একই বিষয়ে জানতে চাইলে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘ভিডিওতে যাদের দেখা যাচ্ছে, তারা আমার পরিচিত হতে পারে, কিন্তু আমি তো আর সেখানে ছিলাম না। ভিডিওতে আমাকে দেখাও যাচ্ছে না। আমি আগামী সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। আমাকে বিতর্কিত করার জন্য এমনটি করা হয়েছে।’
ফতুল্লা থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এ ঘটনায় অভিযোগ করেছেন বাদীপক্ষ। বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি আমরা।’
ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘তদন্তের পর এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

















