গাজীপুরের টঙ্গীর টিঅ্যান্ডটি কলোনি জামে মসজিদের খতিব মুফতি মোহাম্মদ মোহেববুল্লাহ মিয়াজী (৬০) অপহৃত হয়েছেন বলে থানায় যে মামলা করেছেন, তা সঠিক নয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ জানিয়েছে, মোহেববুল্লাহ মিয়াজী পায়ে শিকল লাগিয়ে নিজেই অপহরণের নাটক সাজান। স্বেচ্ছায় পঞ্চগড়ে গিয়েছিলেন বলে পুলিশের তদন্ত এবং প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন মোহেববুল্লাহ।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গাজীপুর মহানগর পুলিশের সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) মোহাম্মদ তাহেরুল হক চৌহান। গত ২৩ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৬টার দিকে পঞ্চগড় সদর ইউনিয়নের সিতাগ্রাম হেলিপ্যাড এলাকায় পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়কের পাশ থেকে মুফতি মোহেববুল্লাহ মিয়াজীকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় দুই পা শিকল দিয়ে বাঁধা ছিল। পরে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় গত ২৪ অক্টোবর টঙ্গী পূর্ব থানায় একটি মামলা করেন মোহেববুল্লাহ মিয়াজী। মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, ২২ অক্টোবর সকালে হাঁটতে বের হলে একটি অ্যাম্বুলেন্সে তার পথ রোধ করা হয়। তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ করে অ্যাম্বুলেন্সে ওঠানো হয়। কালো কাপড়ে চোখ বেঁধে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। পরে পঞ্চগড়ের স্থানীয় লোকজন জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল করলে সদর থানা পুলিশ উদ্ধার করে। পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে টঙ্গী পূর্ব থানার পুলিশের সহায়তায় পঞ্চগড় থেকে গাজীপুরে নিজের বাসায় ফেরেন তিনি।
এ নিয়ে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে গাজীপুর মহানগর পুলিশ। সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘মুফতি মোহেববুল্লাহ মিয়াজীকে অপহরণ করা হয়েছিল—এমন অভিযোগে গত ২৪ অক্টোবর টঙ্গী পূর্ব থানায় মামলা করেন তিনি। মামলার তদন্তকারী টিম টিঅ্যান্ডটি কলোনির নিজ বাসা থেকে অর্থাৎ যে সময় ও স্থান থেকে তুলে নেওয়ার কথা বলেছেন, সেখান থেকে পঞ্চগড় পর্যন্ত এসব এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে অপহরণের কোনও প্রমাণ পায়নি। এমনকি তদন্তকালে এবং পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মোহেববুল্লাহ মিয়াজী জানান, নিজ বাসা থেকে বের হয়ে একাকি হেঁটে নিমতলী সিএনজি পাম্প পার হয়ে পূবাইল থানাধীন মাজুখান এলাকা দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যান। বাদী মামলার এজাহারে চার-পাঁচ জন ব্যক্তি অ্যাম্বুলেন্সে করে তুলে নিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করলেও ওই সময়ে তিন ঘণ্টার মধ্যে কোনও অ্যাম্বুলেন্সের চলাচল সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখা যায়নি। গত ২২ অক্টোবর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মোহেববুল্লাহর অবস্থান ঢাকা মহানগরীর সোবাহানবাগ এলাকার আশপাশে দেখা যায়। ওই দিন বেলা ২টার দিকে ঢাকার গাবতলী শ্যামলী কাউন্টার থেকে নিজে টিকিট কেটে পঞ্চগড়গামী শ্যামলী পরিবহনের বাসে ওঠেন। বগুড়ার শেরপুর থানার পেন্টাগন হোটেলে মাগরিবের নামাজের জন্য সন্ধ্যা ৫টা ৪০ মিনিটে যাত্রাবিরতি দিলে বাস থেকে নেমে হোটেলে নামাজ পড়ে দ্রুত আবার বাসে ওঠেন। পেন্টাগন হোটেলের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে এর প্রমাণ পাওয়া গেছে।’
তাহেরুল হক চৌহান আরও বলেন, ‘ওই দিন রাত সাড়ে ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে মোহেববুল্লাহ পঞ্চগড়ের সর্বশেষ বাসস্টেশনে নেমে হাঁটতে থাকেন। সিসিটিভি ফুটেজে তাকে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও জেলা পুলিশ লাইনসের আশপাশে দেখা যায়। সেখান থেকে কিছুদূর এগিয়ে অন্ধকার একটি জায়গায় রাস্তার পাশে প্রস্রাব করতে যান। এ সময় শারীরিক অসুস্থতার কারণে পায়জামা ও পাঞ্জাবি ভিজে যায়। এ অবস্থায় নিজেই কাপড় খুলে ফেলেন। তখন কিছুটা ঠান্ডা অনুভব করায় এবং শরীর কাঁপতে থাকায় অবচেতন মনের কারণে তার পক্ষে পায়জামা-পাঞ্জাবি পরিধান করা সম্ভব হয়নি। ফলে রাস্তার পাশে সোনালী রঙের একটি ছোট তালাযুক্ত শিকল পেয়ে পায়ে জড়িয়ে রাস্তার পাশেই ঘুমিয়ে পড়েন। ঘুম থেকে জেগে দেখেন, পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে আছেন। কিছুটা সুস্থবোধ করার পর আশপাশে থাকা পুলিশ ও স্থানীয় আলেমরা তাকে নানা প্রশ্ন করলে অবচেতন মনে বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা বলেন।’
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, ‘বর্তমানে মামলাটি তদন্তাধীন। ওই ব্যক্তির বক্তব্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এ ঘটনায় অন্য কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠী জড়িত কিনা বা কী উদ্দেশ্যে, কারও প্ররোচনায় তিনি এ কাজ করেছেন কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়। অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে পুরো বিষয় স্পষ্ট করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপপুলিশ কমিশনার মো. জাহিদ হোসন ভূঁইয়া, মো. মহিউদ্দিন আহমেদ ও এস এম শফিকুল ইসলাম।

















