নারায়ণগঞ্জে আদালত প্রাঙ্গণে মামলার বাদী ও পরিবারের সদস্যদের মারধরের ঘটনায় মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন খানের বিরুদ্ধে অবশেষে মামলা নিয়েছে পুলিশ। বুধবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে ফতুল্লা মডেল থানার পুলিশ মামলাটি নেয়। মামলায় সাখাওয়াত হোসেন ছাড়াও আট জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও পাঁচ জনকে আসামি করেছেন বাদী রাজিয়া সুলতানা।
অপর আসামিরা হলেন- ইসমাঈল হোসেন (৪৬), হিরণ (৩৮), শাহ আলম (৪৮), টিটু (৫০), রাসেল ব্যাপারী (৩৫), খোরশেদ আলম, আল আমিন ও বিল্লাল হোসেন। এর মধ্যে খোরশেদ আলম ও আল আমিন হলেন সাখাওয়াত হোসেনের ল ফার্মের জুনিয়র আইনজীবী এবং হিরণ আইনজীবীর সহকারী (মুহুরি)।
এর আগে ফতুল্লা মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও বিএনপি নেতা সাখাওয়াত হোসেনের নাম থাকায় মামলা নিতে পুলিশ গড়িমসি করে বলে অভিযোগ করেছিলেন রাজিয়া সুলতানা ও তার পরিবারের সদস্যরা। এ ঘটনায় রাজিয়া সুলতানা তার পরিবার নিয়ে থানার সামনে অবস্থান নেন। সাখাওয়াত হোসেন নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসনের বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি।
ফতুল্লা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা, মারধর, চুরি ও শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলাটি করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’
এজাহারে বাদী রাজিয়া সুলতানা উল্লেখ করেন, তার স্বামী ইরফান ভুঁইয়া দীর্ঘদিন ধরে ইসদাইর এলাকার ইসমাইলের কাছে ২৫ লাখ টাকা পাওনা ছিলেন। এক বছর ধরে টাকা ফেরত না পেয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। এর জের ধরে সাখাওয়াত হোসেনের হুকুমে আসামিরা তাদের হুমকি দিয়ে আসছিলেন। পাওনা টাকার জন্য তারা আদালতে মামলা করেন। ওই মামলার জেরে ২৬ অক্টোবর দুপুর ১২টার দিকে তিনি (বাদী) ও তার স্বামী ইরফান মিয়া আদালতপাড়া এলাকায় উপস্থিত হলে প্রধান অভিযুক্ত সাখাওয়াত হোসেন খানের নির্দেশে ইসমাইলসহ আরও কয়েকজন তাদের ওপর হামলা চালান। হামলাকারীরা তাকে ও তার স্বামীকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন, পরে এলোপাতাড়ি কিলঘুষি ও লাথি মেরে রক্তাক্ত জখম করেন। হামলার সময় বাদীর জামাকাপড় ছিঁড়ে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করা হয়। হামলাকারীরা তার স্বামীর কাছ থেকে নগদ ৬৫ হাজার ৫২৭ টাকা, দুটি মোবাইল ফোন এবং তার গলা থেকে সোনার চেইন ছিনিয়ে নেন। এ সময় তাদের চিৎকার শুনে ছেলে জিদান (১৭) ও আবদুল্লাহ (৫) এগিয়ে এলে তাদেরও পিটিয়ে আহত করা হয়।
এর আগে সোমবার দুপুরে বাদী, তার সন্তানসহ পরিবারের চার সদস্যকে সাখাওয়াত হোসেনের অনুসারী আইনজীবী ও সহকারীর মাররের ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। ঘটনার সময় আমি সেখানে ছিলাম না। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে আমি কোথাও নেই।’
এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘বাদী ও তার পরিবারের সদস্যদের মারধরের ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলা করার পর যা যা প্রক্রিয়া অনুসরণ করা দরকার, তার সবই করা হবে।’

















