চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়া এক্সেস রোডে ছাত্রদল কর্মী মো. সাজ্জাদকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় যুবদলের আরও দুই কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার (২৯ অক্টোবর) রাতে মহানগর ও পটিয়া উপজেলায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন- রিয়াজ করিম (৩৩) ও মো. ইউসুফ ওরফে হিরন (২৫)। তাদের কাছ থেকে সাজ্জাদ হত্যায় ব্যবহৃত বিদেশি পিস্তল, তাজা গুলি, গুলির খোসা ও ধারালো বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বিকালে বাংলা ট্রিবিউনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইখতিয়ার উদ্দিন। এর আগে একই ঘটনায় যুবদলের আট কর্মীকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। এ নিয়ে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হলো।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গ্রেফতার রিয়াজ ও ইউসুফ যুবদলের কর্মী। যদিও ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগে তারা যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন।
ওসি ইখতিয়ার উদ্দিন বলেন, ‘ছাত্রদল কর্মী সাজ্জাদ হত্যায় ব্যবহৃত বিদেশি পিস্তল, তাজা গুলি, গুলির খোসা ও ধারালো বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রসহ রিয়াজ এবং ইউসুফকে গ্রেফতার করা হয়।’
এ নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকালে প্রেস ব্রিফিং করেছে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি)। নগরের চেরাগি মোড়ে সিএমপির উপপুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে উপপুলিশ কমিশনার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘সাজ্জাদ হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেফতারে বুধবার রাতে নগরসহ জেলার পটিয়া থানা এলাকায় অভিযান চালানো হয়। এর মধ্যে পটিয়ার জঙ্গলখাইন এলাকা থেকে সাজ্জাদ হত্যায় জড়িত এজাহারনামীয় আসামি রিয়াজ এবং চান্দগাঁও থানার মীরবাড়ি এলাকা থেকে ইউসুফকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র-গুলি উদ্ধার করা হয়। এ মামলায় এখন পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেফতার করা হলো। তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’
এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে বাকলিয়া থানায় মামলা করেন নিহতের বাবা মোহাম্মদ আলম। গত সোমবার দিবাগত রাত ২টার দিকে বাকলিয়া এক্সেস রোডের বগার বিলমুখ এলাকায় গুলিতে নিহত হন ছাত্রদল কর্মী সাজ্জাদ। তিনি নগর যুবদলের বিলুপ্ত কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক (বহিষ্কৃত) এমদাদুল হক বাদশার অনুসারী ছিলেন।
মামলায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া অজ্ঞাত ৪০ জনকে আসামি করা হয়েছে। নাম উল্লেখ করা আসামিরা হলেন—চকবাজার থানা ছাত্রদলের সাবেক সাহিত্য সম্পাদক ও বর্তমানে যুবদলের পদপ্রত্যাশী বোরহান উদ্দিন, পটিয়ার জঙ্গলখাইন ইউনিয়ন তাঁতী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম; বোরহানের সহযোগী মো. মিল্টন, ছোট বাদশা, মো. ইউসুফ, সবুজ ইসলাম, সাইদুল ইসলাম, এমরান হোসেন, মোহাম্মদ দিদার, রিয়াজ করিম, মো. জিহান, তামজিদুল ইসলাম, মো. আরাফাত, বোরহান ওরফে ছোট বোরহান, মো. মোজাহের, এহতেশামুল হক ওরফে ভোলা ও মো. নাঈম উদ্দিন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, সিটি মেয়র ও নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি শাহাদাত হোসেন তার ছবি ব্যবহার করে নগরের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজদের টানানো ব্যানার তুলে ফেলার নির্দেশ দেন। এরপর বাকলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় লাগানো কিছু ব্যানার খুলে ফেলেন মো. জসিম নামের এক যুবদল কর্মী। এর মধ্যে শাহাদাত ও সিরাজের ছবিসহ বোরহানের একটি ব্যানারও ছিল। ব্যানার ছেঁড়ার কারণে রাতে জসিমকে ৮ থেকে ১০ জনের একটি দল তুলে নিয়ে যায়। আটকে রেখে মারধর করা হয়। জসিমকে আটকে রাখার খবর ছড়িয়ে পড়লে ছাড়িয়ে আনতে যান ছাত্রদল-যুবদলের কিছু নেতাকর্মী। এ সময় বাকলিয়া এক্সেস রোডে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন বোরহানের লোকজন। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে সাজ্জাদের মৃত্যু হয়।
আসামিরা বাকলিয়া এলাকায় জায়গা দখল, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম করে আসছেন বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়। প্রধান আসামি বোরহান একসময় যুবলীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। ৫ আগস্টের পর গাজী সিরাজের ছবি দিয়ে যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সফলতা কামনা করে বেশ কিছু ব্যানার টানান তিনি।
















