আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা) আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির দুঃসময়ের কাণ্ডারি আয়নাঘর নির্যাতনের শিকার লুৎফুল্লাহেল মাজেদ বাবু। তিনি উপজেলা বিএনপিরও আহ্বায়ক। দলীয় মনোনয়ন পেয়ে ইতিমধ্যে নির্বাচনি এলাকায় প্রচারণা শুরু করেছেন।
দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নেতাকর্মীদের নিয়ে নিজ নির্বাচনি এলাকায় প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন মাজেদ বাবু। এ সময় তিনি এলাকার মানুষের দ্বারে দ্বারে ও পথচারী, রিকশাচালক, দোকানদারদের কাছে গিয়ে ধানের শীষের জন্য ভোট চেয়ে দোয়া চাচ্ছেন।
দলীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, বিএনপির দুর্দিনে ছিলেন রাজপথের ত্যাগের প্রতিচ্ছবি। আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬ বছরের শাসনামলে অসংখ্য মামলা, হামলার শিকার নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। যে কারণে একাধিকবার তার বাসায় হামলা-ভাঙচুর করা হয়। জুলাই আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ৩০ জুলাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয়ে মাজেদ বাবুকে তার গুলশানের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। সিটিটিসির (পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম) একটি দল তাকে ‘আয়নাঘরে’ নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে আটকে রেখে নির্যাতন চালানো হয়। ‘আয়নাঘরে’ বন্দি থাকা মাজেদকে ৩০ মিনিট সময় বেঁধে দিয়ে গুলি করে হত্যার কথা জানানো হয়েছিল। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৬ আগস্ট মুক্তি পান। গুমসংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারিতে গুমের পর নির্মম নির্যাতনের ঘটনায় অভিযোগও দিয়েছেন। সবশেষে এবার প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় উচ্ছ্বসিত দলীয় নেতাকর্মীরা। মনোনয়ন ঘোষণার পরই নেতাকর্মীরা এলাকায় মিছিল করেছেন। সভা-সমাবেশও করছেন। ধানের শীষ প্রতীককে বিজয়ী করার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে প্রচারণা শুরু করেছেন মাজেদ বাবু।
ময়মনসিংহ উত্তর জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আমাদের সংসদীয় আসনে কোনও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। এই জনপদের বঞ্চিত মানুষ এবার মাজেদ ভাইকে ধানের শীষে ভোট দেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে। বিপুল ভোটে তিনি বিজয়ী হবেন বলে আশা করছি আমরা।’
বিএনপি মনোনীত প্রার্থী লুৎফুল্লাহেল মাজেদ বাবু বলেন, ‘আমাকে চোখ বেঁধে বাসা থেকে আয়নাঘরে নিয়ে মাত্র ৩০ মিনিট সময় দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে গুলি করে হত্যা করে আন্দোলনকারীদের গুলিতে আমার মৃত্যু হয়েছে বলে চালিয়ে দেওয়ার আলাপ করা হচ্ছিল। এর ভেতরে বলতে হবে আন্দোলনের জন্য কাদেরকে টাকা দিয়েছি। সে সময় উত্তরা থানা পুড়িয়ে দেওয়ার খবরে কিছুটা পিছপা হয় তারা। এরপর আমাকে প্রচণ্ড নির্যাতন চালায়। নির্যাতন শেষে আমাকে একটি স্টেটমেন্টে স্বাক্ষর করায়, সেখানে বলা হয় আমার নেতৃত্বে উত্তরা পূর্ব থানা পোড়ানো হয়েছে। সাংবাদিকরা আসলে যেন আমি বলি আমি ফান্ডিং করেছি এবং আরও কয়েকজনের নাম বলে দিয়ে তাদের নাম বলতে বলা হয়। আয়নাঘর থেকে বেঁচে ফেরত আসতে পারবো তা সে সময়ে কল্পনা করতে পারিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘শহীদ জিয়ার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে জাতীয়তাবাদী দলে আমার যাত্রা শুরু হয়। মামলা-হামলা এবং আয়নাঘরে নির্যাতিত হয়েও শহীদ জিয়ার আদর্শ থেকে কখনও বিচ্যুত হইনি। রাজনীতি করে আমার নেওয়ার কিছু নেই। আমার লক্ষ্য একটি শিক্ষিত সমাজ গড়ে ঈশ্বরগঞ্জকে আধুনিক ও সমৃদ্ধশালী উপজেলা হিসেবে গড়ে তোলা। আমার নেতা তারেক রহমান যে আত্মবিশ্বাসে আমাকে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী মনোনীত করেছেন আমি বিশ্বাস করি ঈশ্বরগঞ্জের মানুষ তার প্রতিফলন ঘটাবে।’

















