ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি দুটি মামলা হয়েছে। পৃথক দুই মামলায় ২২৬ জনের নাম উল্লেখসহ ৮৭৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে এসব মামলায় এখন পর্যন্ত কোনও আসামিকে গ্রেফতার করা হয়নি বলে থানার ওসি জানিয়েছেন।
রবিবার (৯) দুপুর দেড়টার দিকে মামলা দুটির বিষয়ে নিশ্চিত করেন বোয়ালমারী থানার ওসি মাহামুদুল হাসান।
তিনি বলেন, গতকাল শনিবার পৃথক দুটি অভিযোগ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাতেই বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা দুটি রুজু হয়েছে। এখনও কোনও আসামি গ্রেফতার নেই, তবে অভিযান অব্যাহত আছে।
মামলা দুটিতে সাবেক দুই সংসদ সদস্যসহ ফরিদপুর-১ আসনের বিএনপি দুই মনোনয়ন প্রত্যাশীকেও আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও মনোনয়ন প্রত্যাশী খন্দকার নাসিরুল ইসলাম এবং অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনু।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, একটি মামলার বাদী হয়েছেন মজিবুর রহমান। তিনি উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন এবং সহ-সভাপতি শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনুর সমর্থক। তার করা মামলায় ১৮৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২০০-২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে কৃষকদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার নাসিরুল ইসলামকে।
মজিবুর রহমানের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন দিলে সাড়া না পাওয়ায় তার অভিযোগ জানা সম্ভব হয়নি।
তবে এ প্রসঙ্গে শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনু বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ ৭ নভেম্বরের প্রোগ্রামে খন্দকার নাসিরের নির্দেশে দলীয় কার্যালয় হামলা লুটপাট চালানো হয়, এ সময় হামলাকারীরা আমাদের কর্মী সমর্থকদের ব্যবহৃত ১৮/২০ টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়। অথচ মামলা নিলো আমাদের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধেও।
অপর মামলার বাদী উপজেলা বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম। তিনি খন্দকার নাসিরুল ইসলামের সমর্থক। তার মামলায় ৩৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৩০০-৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় প্রধান আসামি উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনু (৬০) ও দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনএমের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহ মো. আবু জাফরকে (৮০)।
এ ছাড়া তিন নম্বরে রয়েছে সালথা উপজেলার খারদিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু (৭৫)। তিনি বর্তমানে পলাতক রয়েছেন এবং হুকুমদাতা হিসেবে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এ মামলার বাদী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ৭ নভেম্বর বিকালে আমাদের কর্মসূচির আয়োজন করা হয় এবং ঝুনু মিয়ার কর্মসূচি ছিল সকালে। কিন্তু আমাদের কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য তারা বিকালে আয়োজন করে পরিকল্পিতভাবে আমাদের কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা করে। যার পেছনে উসকানি দিয়েছেন শাহ মো. আবু জাফর ও আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু। এই বাচ্চু সাহেবের ছেলের নেতৃত্বে খারদিয়া গ্রাম থেকে অস্ত্র নিয়ে লোকজন এসেছিল। এ ছাড়া তার করা মামলা ভিন্নদৃষ্টিতে নেওয়ার জন্য পাল্টা মামলা করা হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আসামিদের মধ্যে খন্দকার নাসিরুল ইসলাম ও শামসুদ্দীন মিয়া ঝুনু ফরিদপুর-১ (আলফাডাঙ্গা, বোয়ালমারী ও মধুখালী) আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। তবে দলের প্রাথমিক তালিকায় দুই জনের কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। এই দুই গ্রুপের মধ্যে গত এক বছর ধরে রাজনৈতিক আধিপত্য চলে আসছে।
যার পরিপ্রেক্ষিতে গত শুক্রবার (৭ নভেম্বর) বিকালে উপজেলা সদরের ওয়াপদা মোড় এলাকায় বিপ্লব ও সংহতি দিবসে কর্মসূচি থেকে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষকারীদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্রের পাশাপাশি চাইনিজ কুড়াল, রামদা সহ দেশীয় অস্ত্র দেখা যায়। এ সংঘর্ষে শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনু সমর্থিত উপজেলা বিএনপির একাংশের কার্যালয়ে ভাঙচুরসহ ১৫টি মোটরসাইকেল আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া আশপাশের অন্তত ১০টি দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের অন্ততপক্ষে অর্ধশত কর্মী-সমর্থক আহত হন।

















