ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে বিরোধের জেরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় মঞ্চসহ বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন। এ সময় ঘটনাস্থলে ছাত্রদলের এক নেতার মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল না। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, স্ট্রোক করে মারা গেছেন।
রবিবার (০৯ নভেম্বর) বিকালে গৌরীপুর পৌর শহরের পাটবাজার এলাকায় এ সংঘর্ষ হয়। নিহত ছাত্রদল নেতার নাম তানজিম আহমেদ আবিদ। তিনি বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার এম ইকবাল হোসেনের সমর্থক ও উত্তর জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি। বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ইকবাল হোসেন এবং মনোনয়ন বঞ্চিত তায়েবুর রহমান হিরনের অনুসারীদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকায় সেনাবাহিনী ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় ক্ষুব্ধ ছিলেন আহমেদ তায়েবুর রহমান হিরনের সমর্থকরা। রবিবার ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে ইকবাল হোসেনের সমাবেশে যোগ দিতে আসা নেতাকর্মীদের ওপর হিরন সমর্থকরা হামলা চালান বলে অভিযোগ ওঠে। এতে বিক্ষুব্ধ ইকবাল সমর্থকরা পাল্টা হামলা চালিয়ে হিরনের মহিলা সমাবেশের মঞ্চে ভাঙচুর করেন। এরপর দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হন। এ সময় ছাত্রদল নেতা আবিদের মৃত্যু হয়।
বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে একটি পক্ষ আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। আমি এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দল ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
এ বিষয়ে জানতে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক তায়েবুর রহমান হিরনের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি তিনি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, অসুস্থ অবস্থায় আবিদকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তার মৃত্যু হয়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে স্ট্রোক তার মৃত্যু হয়েছে।’
উত্তর ছাত্রদলের সভাপতি নূরুজ্জামান সোহেল জানিয়েছেন, আবিদ উত্তর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি বর্তমানে জাতীয়তাবাদী উলামা দলের সদস্য। তিনি দক্ষিণ জেলা উলামা দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মৃত দেওয়ান মো. আবুল হোসেনের ছেলে।
উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মহিউদ্দিন তালুকদার আকাশ বলেন, ‘সমাবেশের শেষ পর্যায়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন আবিদ। এ সময় মাথায় পানি ঢেলে সুস্থ করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু জ্ঞান না ফেরায় ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’
ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় কারও আঘাতে অসুস্থ হননি আবিদ। এমনকি কেউ মারধরও করেনি। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে।’
গৌরীপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেবাশীষ কর্মকার বলেন, ‘এখনও থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সেনাবাহিনী ও পুলিশ।’
জেলা পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলাকালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে আবিদকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে তার শরীরে আঘাতের কোনও চিহ্ন নেই। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এলে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

















