গাজীপুরে উদ্ধার করা ৩৭টি ঘোড়ার মধ্যে দুটি মারা গেছে। বাকি ৩৫টি চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্টগ্রামের একটি অভয়ারণ্যে রয়েছে। এই ঘোড়াগুলো অবৈধভাবে জবাই করে মাংস বিক্রির জন্য রাখা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: প্রতি রাতে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হতো ৩০-৪০টি ঘোড়ার মাংস
অভয়ারণ্য-বাংলাদেশ অ্যানিমেল ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা রুবাইয়া আহমেদ বলেন, ‘গাজীপুরের জেলা প্রশাসকের অনুরোধে আমরা একটি অবৈধ কসাইখানা থেকে ৩৭টি ঘোড়া উদ্ধার করি। ৩৫টি ঘোড়ার মধ্যে একটি ছোট ঘোড়া ছিল। কসাইখানায় অস্বাস্থ্যকর স্থানে ঠাসাঠাসি অবস্থায় ঘোড়াগুলো রাখা ছিল। সাতটি জবাই করা ঘোড়ার মাংস কসাইখানার মাঝখানে ফেলে রাখা ছিল, যার দুর্গন্ধে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছিল।
‘বেঁচে থাকা অনেক ঘোড়া ছিল পোকায় আক্রান্ত, কোনও কোনও ঘোড়া এতটাই দুর্বল ছিল যে দাঁড়াতে পারছিল না। কোনও কোনওটির দেহে পচা ক্ষত, আবার একটির গর্ভপাতের উপক্রম হয়। কর্তৃপক্ষ সময়মতো হস্তক্ষেপ না করলে এই ঘোড়াগুলোও জবাই করে দেশের বিভিন্ন স্থানে গরুর মাংস বলে বিক্রি হতো।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ কে খান পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতায় অভয়ারণ্য ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে উদ্ধার অভিযানটি পরিচালিত হয়। প্রায় ১২ ঘণ্টার দীর্ঘ যাত্রা শেষে ৩৫টি ঘোড়াই জীবিত অবস্থায় চট্টগ্রামে পৌঁছেছে। বর্তমানে প্রাণী চিকিৎসকদের একটি নিবেদিতপ্রাণ দল সেগুলোর চিকিৎসায় দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে।
‘আমাদের কাছে মোট ৩৭টি ঘোড়া হস্তান্তর করা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি মারা গেছে। ঘোড়াগুলোকে দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতন করা হয়েছে, তাদের পায়ে এখনও শিকলের দাগ দেখা যাচ্ছে। ঘোড়াগুলোকে জবাইয়ের জন্যই প্রস্তুত করা হয়েছিল।’
গাজীপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নারগিস খানম জানান, গাজীপুর থেকে উদ্ধার করা সব ঘোড়া বর্তমানে অভয়ারণ্যে নিরাপদে আছে এবং তাদের চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) রাত ১০টার দিকে গাজীপুর জেলা প্রশাসন, প্রাণিসম্পদ অধিদফতর, র্যাব-১ এবং পুলিশ যৌথভাবে গাজীপুরের হায়দরাবাদ এলাকায় অভিযান চালায়।
প্রাণিসম্পদ দফতর সূত্রে জানা যায়, ওই এলাকায় এক বছর ধরে অবৈধভাবে ঘোড়ার মাংস বিক্রি হচ্ছিল। প্রাণিসম্পদ অধিদফতর ঘোড়ার মাংস বিক্রি নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও শফিকুল ইসলাম (৪৫) নামে এক ব্যক্তি গোপনে সেই ব্যবসা চালিয়ে আসছিল। অভিযানের সময় শফিকুল ও তার সহযোগীরা পালিয়ে যায়।
গাজীপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘ঘোড়া জবাই ও মাংস বিক্রি সম্পূর্ণ অবৈধ এবং দণ্ডনীয় অপরাধ। এর আগে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তিনবার জরিমানা করা হয়েছিল, তবুও সে কার্যক্রম বন্ধ করেনি। এবার বড় পরিসরে অভিযান চালানো হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও এমন অভিযান চলবে।’

















