আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমকে একটি অনুষ্ঠান থেকে বের করে দিয়েছেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করার সময় তাকে উদ্দেশ্য করে ‘ভুয়া-ভুয়া’ স্লোগান দেন তারা।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সরকারি তোলারাম কলেজে এ ঘটনা ঘটে। ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্টস অ্যান্ড বিজনেসমেন ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে নারায়ণগঞ্জের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের নিয়ে উদ্যোক্তা সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ী নেতা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। এ খবর পেয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীসহ কলেজের কিছু শিক্ষার্থী ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন।
সন্ধ্যায় এ ঘটনায় একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্টস অ্যান্ড বিজনেসমেন ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের সভাপতি মুহাম্মদ শহীদুল ইসলাম বক্তব্য শুরু করেন। এ সময় অনুষ্ঠানের হলরুমে প্রবেশ করেন তোলারাম কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি মনির হোসেন জিয়ার নেতৃত্বে ছাত্রদল নেতাকর্মীসহ কিছু শিক্ষার্থী। তখন অতিথিদের আসনে বসে ছিলেন মোহাম্মদ হাতেম। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তাকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে অনুষ্ঠান থেকে চলে যেতে বলেন। একপর্যায়ে নেতাকর্মীদের তোপের মুখে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন। এ সময় তাকে উদ্দেশ্য করে ‘ভুয়া-ভুয়া’ স্লোগান দেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
এ বিষয়ে সরকারি তোলারাম কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি মনির হোসেন জিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থের জোগান দাতা। জুলাই বিপ্লবের সময়ে তিনি আওয়ামী লীগ সরকার ও তার দলের নেতাকর্মীদের সহযোগিতা করেছেন। আমি একজন জুলাই যোদ্ধা হয়ে কীভাবে আমার ভাইয়ের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করবো। সে কারণে আজ তাকে তোলারাম কলেজের অনুষ্ঠান থেকে বের করে দিয়েছি আমরা।’
তিনি আরও বলেন, ‘উদ্যোক্তাদের নিয়ে বিকেএমইএর একটি অনুষ্ঠানে তিনি অতিথি হিসেবে এসেছিলেন। তার আগমনের বিষয়টি জানতে পেরে আমিসহ কলেজের শিক্ষার্থীরা সেখানে গিয়ে প্রতিবাদ জানাই। পরে সসম্মানে তাকে সেখান থেকে চলে যেতে বলি। প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগের এই দোসরকে অতিথি হিসেবে কলেজের শিক্ষার্থীরা মেনে নিতে পারেননি।’
এ ব্যাপারে বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে তোলারাম কলেজের ছাত্রদল নেতাসহ বেশ কয়েকজন এসে আমাকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে ঘটনাটি ঘটিয়েছে। এমনিতে অনুষ্ঠান একেবারে শেষ পর্যায়ে ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যে আমি সেখান থেকে চলে আসতাম। এর মধ্যে ঘটনাটি ঘটেছে। কোনও একটি মহল ষড়যন্ত্র করে ঘটনাটি ঘটিয়েছে।’
আমি কোনও দলের রাজনীতি করি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি কোনও দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নই। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আমাকে বিএনপির ট্যাগ দিয়েছিল, এখন আওয়ামী লীগের ট্যাগ দেওয়া হচ্ছে। মূলত আমি ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা। ফলে যখন যে সরকার আসে তার সঙ্গে আমাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালিয়ে নিতে হয়। এতে কোনও রাজনীতিক দলের হয়ে কাজ করার প্রশ্নই আসে না।’
সরকারি তোলারাম কলেজের অধ্যক্ষ বিমলচত্র দাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি অনুষ্ঠানের শুরুতে সেখানে ছিলাম। তবে শেষ পর্যায়ে সেখানে উপস্থিত ছিলাম না। ফলে পরে কী হয়েছে, তা জানা নেই।’
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ১৫ মে নারায়ণগঞ্জে প্রধান কার্যালয়ে সরাসরি ভোটে বিকেএমইএর পর্ষদ নির্বাচন হয়। এতে মোহাম্মদ হাতেম প্রোগ্রেসিভ নিট অ্যালায়েন্স পূর্ণ প্যানেলে জয়ী হয়। আর সংগঠনের নির্বাহী সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন ফজলে শামীম এহসান। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দুজনই এই পদে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

















