চট্টগ্রামে ‘মব’ তৈরি করে একটি হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে চাঁদা আদায়ের পর ছেড়ে দেওয়া সেই ফয়সাল মাহমুদকে (৩২) এবার পুরোনো একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ। কয়েকদিন আগে পাঁচলাইশ মডেল থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
গ্রেফতার ফয়সাল নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার সভাপতি বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে তিনি পদে আছেন কিনা, তা দলীয় সূত্রে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। গত চার বছর ধরে চট্টগ্রামে একটি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন ফয়সাল।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) সকাল ১০টায় পাঁচলাইশ মডেল থানার গোলপাহাড় মোড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে ফয়সালকে গ্রেফতার করা হয়। পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইনে পাঁচলাইশ থানায় দায়ের করা পুরোনো মামলায় তদন্তে পাওয়া আসামি হিসেবে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।’
ওসি বলেন, ‘ফয়সাল গত চার বছর ধরে চট্টগ্রামে থেকে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। তার ব্যবহৃত মোবাইল যাচাই করে দেখা যায়, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের মনোহরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তিনি। নিজের ফেসবুকে সরকারবিরোধী বিভিন্ন উসকানিমূলক পোস্ট দিচ্ছেন। ছবি ও ভিডিও প্রচার করছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত থেকে সরকারবিরোধী কার্যক্রম চালাচ্ছেন। এ ছাড়া গত ৯ অক্টোবর সকালে ষোলশহর ফসিল গ্যাস পাম্পের বিপরীত পাশে মুরাদপুর আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশনের নির্মাণাধীন ভবনের সামনে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী মিছিল করে লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল ছুড়ে সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন। ফয়সাল ওই মিছিলে অংশ নিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন।’
এর আগে রবিবার (৯ নভেম্বর) রাত ৮টার দিকে মব তৈরি করে নগরের পাঁচলাইশ এলাকার বেসরকারি হাসপাতাল পার্কভিউ থেকে টেনেহিঁচড়ে ফয়সালকে তুলে নিয়ে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। পরে মারধর করে ১৬ ঘণ্টা আটকে রেখে একাধিক এটিএম বুথ থেকে ৬০ হাজার টাকা আদায়ের পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় তার বাবা পাঁচলাইশ থানায় মামলা করলে তিন জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- আশরাফুল আমিন (২৯), মো. তারিক আসিফ (২৭) ও শাহাদাত হোসেন শান্ত (২০)। হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে টাকা আদায়ের সঙ্গে জড়িত কয়েকজন ‘আপ বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠনের নেতা বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় আপ বাংলাদেশ তাৎক্ষণিকভাবে দুই জনকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে। সেইসঙ্গে ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সোমবার আপ বাংলাদেশের মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা ইরা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন।
হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় ফয়সাল মাহমুদের বাবা জসিম উদ্দিন বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় অপহরণের মামলা করেন। মামলায় মোহাম্মদ আবুল সাজ্জাদ ওরফে আদর (৩২), আশরাফুল আমিন (২৯), মো. তারিক আসিফ (২৭), শাহাদাত হোসেন শান্ত (২০) ও আমিমুল এহসান ফাহিমসহ (২৫) অজ্ঞাতনামা চার-পাঁচ জনকে আসামি করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ফয়সাল মাহমুদ গত চার বছর ধরে চট্টগ্রাম শহরে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত। গত রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ফয়সাল পাঁচলাইশ মডেল থানাধীন পার্কভিউ হাসপাতালে ডাক্তারের সঙ্গে ভিজিট করতে যান। রাত ৮টার দিকে হাসপাতালের চারতলায় ফয়সাল অবস্থানকালে আসামিরা ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে এলোপাতাড়ি কিলঘুষি, চড়-থাপ্পড় ও লাথি মেরে জোরপূর্বক তুলে একটি গাড়িতে করে নিয়ে যায়। তাকে অপহরণ করে রাউজান থানার গহিরা এলাকার একটি পরিত্যক্ত ভবনে নিয়ে আটকে রাখে। সেখানে তাকে মারধর করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে আসামিরা। একপর্যায়ে অপহরণকারীরা বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ফয়সালের কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। তখন ফয়সাল অপহরণকারীদের মানিব্যাগে থাকা দুই হাজার টাকা বের করে দেন।
মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, অপহরণকারীরা তাদের দাবিকৃত টাকা না দিলে বড় ধরনের ক্ষতি করার হুমকি দেয়। সোমবার সকাল ৯টায় তারা ফয়সালকে ভয় দেখিয়ে রাউজান থানা এলাকার একটি ব্যাংকের বুথে নিয়ে আরও ১৮ হাজার টাকা তুলে নেয়। বেলা সাড়ে ১১টায় খুলশী থানাধীন জিইসি মোড়ে আরেক বুথে নিয়ে ৪০ হাজার টাকা তুলে নেয়। অপহরণকারীরা ফয়সালের কাছ থেকে সর্বমোট ৬০ হাজার টাকা আদায়ের পর প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে দুপুর ১২টার দিকে চকবাজার থানার প্যারেড মাঠে ফেলে রেখে যায়।

















