Swadhin News Logo
বৃহস্পতিবার , ১৩ নভেম্বর ২০২৫ | ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. best
  2. cassinoBR
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কৃষি ও প্রকৃতি
  5. ক্যাম্পাস
  6. খেলাধুলা
  7. চাকরি
  8. জাতীয়
  9. জোকস
  10. তথ্যপ্রযুক্তি
  11. দেশজুড়ে
  12. ধর্ম
  13. নারী ও শিশু
  14. প্রবাস
  15. বই থেকে

চটকদার বিজ্ঞাপনে সিগারেট বিক্রি বাড়াচ্ছে কোম্পানিগুলো

প্রতিবেদক
Nirob
নভেম্বর ১৩, ২০২৫ ৮:১৫ পূর্বাহ্ণ
চটকদার বিজ্ঞাপনে সিগারেট বিক্রি বাড়াচ্ছে কোম্পানিগুলো

খুলনায় তামাক ব্যবহার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। এতে জনস্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও পরিবেশের জন্য বহুমুখী সংকট তৈরি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে নারী-শিশু, তরুণ ও শিক্ষার্থীদের ওপর। আইন প্রয়োগে দুর্বলতা, নিয়মিত অভিযান পরিচালিত না হওয়ায় এবং কোম্পানিগুলোর চটকদার বিজ্ঞাপনের দাপটে তামাক নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নগরের একাধিক বাসিন্দা, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক জানিয়েছেন, সিগারেট কোম্পানিগুলো আগের অবস্থা পরিবর্তন করে শিক্ষার্থী ও তরুণদের টার্গেট করে নতুন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছে। আকর্ষণীয় প্যাকেজিং, সহজলভ্যতা এবং চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে তামাক ব্যবহারে আগ্রহী করে তুলছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে বা শিক্ষর্থীরা বেশি যাতায়াত করে এমন জায়গায় গোপনে প্রচারণা চালাচ্ছে। এ ধরনের বিপণন কৌশল তামাক ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়িয়ে দিচ্ছে। আর ঝুঁকিতে পড়ছে সবার স্বাস্থ্য ও পরিবার।

চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তামাক শুধু ফুসফুসের ক্যানসার, হৃদরোগ ও শ্বাসতন্ত্রের রোগের ঝুঁকিই বাড়ায় না, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নেও বাধা সৃষ্টি করে। যদি এ প্রবণতা বাড়তে থাকে তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এক গুরুতর স্বাস্থ্য সংকটের মুখে পড়বে। যা উত্তরণে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন-২০০৫ (সংশোধিত ২০১৩) অনুযায়ী প্রকাশ্যে ধূমপান, ১৮ বছরের কম বয়সীদের কাছে তামাকজাত পণ্য বিক্রি এবং তামাক পণ্যের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ। অথচ খুলনায় ১৮ বছরের কম বয়সীদেরও ধূমপান করতে দেখা যায়। আর প্রকাশ্যে ধূমপান সব স্থানেই হচ্ছে।

প্রকাশ্যে সিগারেটের চটকদার বিজ্ঞাপন, কমেছে অভিযান

২০১৫, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখায় খুলনা জেলা শ্রেষ্ঠ হিসেবে অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিল। কিন্তু টাস্কফোর্স কমিটি সক্রিয় না থাকায় এখন জেলাটি তামাকের জন্য নিরাপদ স্থানে পরিণত হয়েছে। আইনের তোয়াক্কা না করে এখানে প্রকাশ্যে সিগারেটের বিজ্ঞাপন প্রচার করছে কোম্পানিগুলা। এমনকি তরুণদের আকৃষ্ট করতে ফ্রি সিগারেট বিতরণসহ নানা উপহার সামগ্রী দিচ্ছে।

খুলনায় আইন লঙ্ঘনের দায়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত ৬১ জনকে জরিমানা করা হয়েছে। অর্থদণ্ড আদায় করা হয়েছে দুই লাখ ৬৭ হাজার টাকা। একই সময়ে পরিচালিত অভিযানে একটি কোম্পানিকে ৩০ হাজার টাকা ও কোম্পানির সহকারী ম্যানেজারসহ দুজনকে ৫১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এর আগে ২০২২ সালে পৃথক চার অভিযানে নয় জনকে এক লাখ ৯০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় এবং দুজনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আর একটি প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি একই সময়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ৮০১ জনকে জেল-জরিমানা করা হয়েছে। এই চিত্র থেকে বোঝা যায়, অভিযান তেমন একটা জোরালো নয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৩৪ মাসে খুলনায় ৫০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। এর মধ্যে ২০২৩ সালে ৩৪টি, ২০২৪ সালে ১০টি ও ২০২৫ সালের ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত ছয়টি। এসব অভিযানে মামলা হয় ৫৯টি। এর মধ্যে ২০২৩ সালে ৩৮টি, ২০২৪ সালে ১৬টি ও ২০২৫ সালের এ পর্যন্ত পাঁচটি। এই সময়ে ৫৯ জনকে সাজা দেওয়া হয়। তার মধ্যে ২০২৩ সালে ৩৮, ২০২৪ সালে ১৬ ও ২০২৫ সালে পাঁচ জন। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে ২০২৩ সালে পাঁচ জনকে ৩১ হাজার ১০০ টাকা, ২০২৪ সালে ১৬ জনকে ৬২ হাজার ৯০০ টাকা ও ২০২৫ সালের ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত ৪০ জনকে এক লাখ ৭৩ হাজার ৪৬০ টাকা জরিমানা করা হয়। হিসেবে আগের বছরগুলোর তুলনায় চলতি বছর কম অভিযান পরিচালিত হয়েছে।

জেলার সচেতন নাগরিকরা বলছেন, আইনের কঠোর প্রয়োগ, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সামাজিক প্রতিরোধের মাধ্যমে জেলায় তামাকের ব্যবহার রোধ করা সম্ভব। এখনই যদি কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তবে এর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে জনজীবনে। নারী-শিশু থেকে শুরু করে সবাই ভুক্তভোগী হবে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ মে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালিয়ে জাপানি তামাক কোম্পানি জাপান টোব্যাকোকে (জেটি) ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানির শিববাড়ির গোডাউনের সহকারী ম্যানেজার মো. আহসানুর রহমানকে ৫০ হাজার টাকা ও রেজাউল ইসলামকে এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ২০২২ সালের ২২ মে দৌলতপুরের ‘বাপ্পী টি-স্টলের’ একজনকে ১০ দিনের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং আরেক জনকে পাঁচ দিনের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ১৬ জুন খালিশপুরে জাপান টোব্যাকোকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। ১ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর দুজন প্রতিনিধিকে এক লাখ টাকা জরিমানা ও প্রত্যেককে একমাস করে কারাদণ্ড এবং চার জনকে ২০ হাজার টকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া ১৯ ছাত্রকে অভিভাবকদের মুচলেকায় ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই বছরের ১৫ নভেম্বর সোনাডাঙ্গা এলাকায় রুমি কেমিক্যাল ওয়ার্কস নামে জর্দা কারখানার এক ব্যক্তিকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

কোম্পানিগুলো দোকানোর সাজিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি দিচ্ছে উপহার

সরেজমিনে দেখা গেছে, খুলনা মহানগরীতে তামাক কোম্পানিগুলোর সহযোগিতায় মোড়ে মোড়ে স্থাপন করা হয়েছে তামাকজাত পণ্য বিক্রির স্থান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রূপসা ঘাট, সাতরাস্তা মোড়, শিববাড়ী মোড়, নিউমার্কেট, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় গলি রোড, বয়রা বাজার, পাওয়ার হাউজ মোড়, ৭নং ঘাট, নিরালা, মোহাম্মদ নগর ও দৌলতপুর। স্থানগুলোর প্রতিষ্ঠানে উপঢৌকন প্রদান, প্রতিষ্ঠান সাজিয়ে দেওয়া, ডেকোরেশন করা, বিভিন্ন উপহার সামগ্রী দিচ্ছে তামাক কোম্পানিগুলো। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় গলিতে একটি দোকান তামাক কোম্পানির অর্থায়ন ও পরিকল্পনায় গড়ে উঠেছে। এসব স্থানে হলুদ ও নীল, লাল ও সাদা, লাল, লাল ও হলুদ, নীল ও সাদা রঙ দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। সেগুলো তামাকজাত কোম্পানি ও পণ্যের প্রচারণার রঙ। তামাক নিতে তরুণদের আগ্রহী করে তুলতে ব্যবহার্য পণ্য যেমন; ক্যাপ, টি-শার্ট, জ্যাকেট, লাইটার, ওয়ালেট, রিস্টব্যান্ড, ছাতা, পানির বোতল, মগ, কলম ও নোটবুকের মতো জিনিস উপহার হিসেবে দিচ্ছে। নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করলে তাদের দেওয়া হয় বিভিন্ন উপহার। যেমন- ঘড়ি, ক্যালেন্ডার, ফ্যান, মোবাইল ফোন, ব্লেন্ডার, ডিসপ্লে রেক, গ্লাস কাউন্টার বা দোকানের সাইনবোর্ড। ম্যাচবক্স, চশমা, সিগারেট কাভার, গ্যাসলাইট, গিফট বক্স, গেঞ্জি, লিফলেট ও ব্ল্যাংক প্যাকেটও বিতরণ করছে কোম্পানিগুলো। 

ধরাছোঁয়ার বাইরে

জেলায় তামাক কোম্পানিগুলোতে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর থেকে শুরু করে সুপারভাইজার, ডেভেলপার, ট্রেড মার্কেটিং, টেরিটরি এক্সিকিউটিভ, এরিয়া ম্যানেজার, রিজিওনাল ম্যানেজার পদে অনেকে কাজ করছেন। কিন্তু  ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে কেবল ফিল্ড অফিসাররা শনাক্ত হন। অন্যরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন। ফিল্ড অফিসারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ধরা পড়লে কোম্পানিই জরিমানা দিয়ে তাদের মুক্ত করে। তবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে তামাক কোম্পানিগুলোর শুধু ফিল্ড অফিসার নন, নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক প্রধানকে আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন বলে জানালেন তারা।

এদিকে, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে টাস্কফোর্স কমিটির সভা নিয়েও রয়েছে অভিযোগ। কমিটির দুজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সভা আলাদা না হয়ে অন্যান্য সভার সঙ্গে হয়। ফলে সংক্ষিপ্তভাবে কেবলমাত্র স্বাক্ষর নিয়েই সভা শেষ করে দেওয়া হয়। এ কারণে সভা থেকে প্রাপ্ত সিদ্ধান্ত তেমনভাবে কাজে আসে না। পূর্ববর্তী সভার সিদ্ধান্ত ফলোআপ করা এবং সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। ফরে সভার সিদ্ধান্ত সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয় না।

এই দুজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের ৫ ধারায় তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আইনের এই ধারা  লঙ্ঘনে তিন মাসের জেল ও এক লাখ টাকা জরিমানার কথা বলা হলেও প্রচারণায় ঘাটতি আছে। এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০০ মিটারের মধ্যে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রির দোকান না থাকার বিধানও সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টির বাইরে রয়েছে। ফলে আইন বাস্তবায়ন পরিলক্ষিত হয় না।

তামাক নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে যুক্ত একজন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘তামাক নিয়ন্ত্রণে সবার আগে সচেতনতা প্রয়োজন। পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতাকে আন্দোলনে রূপ দিতে না পারলে এটা নিয়ন্ত্রণ কঠিন। ক্ষতিকর দিকগুলো জানা সত্ত্বেও চিকিৎসকও ধূমপান করেন। তাই আইন দিয়ে নয়, সচেতনতার মধ্য দিয়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ করা সহজ। পাশাপাশি টাস্কফোর্স সক্রিয় থাকাটাও জরুরি। টাস্কফোর্স কমিটি যত বেশি সক্রিয় হবে, তামাক নিয়ন্ত্রণ তত সহজ হবে।’

নানা কৌশলে সিগারেট বিক্রি বাড়াচ্ছে কোম্পানিগুলো 

বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোটের সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সিগারেট কোম্পানিগুলো আইনের ফাঁকফোকর খুঁজে বের করে নানা কৌশলে তরুণদের ধূমপানে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে। যা সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন প্রচেষ্টায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। নানা কৌশলে কোম্পানিগুলো কিন্তু সিগারেট বিক্রি বাড়াচ্ছে। সেটি দিন দিন বাড়ছেও। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে আইন লঙ্ঘনকারী তামাক কোম্পানিগুলোকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। সারা দেশে আইন বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি বিদ্যমান আইনটিকে আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোট আইনটি সংশোধনের মাধ্যমে শক্তিশালী করার দাবি জানিয়ে আসছে।’

ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্টের স্বাস্থ্য অধিকার বিভাগের প্রধান সৈয়দা অনন্যা রহমান বলেন, ‘সরকার রোগ প্রতিরোধে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবতায়নের ওপর জোর দিলেও কোম্পানিগুলো সারা দেশে বেপরোয়াভাবে আইন লঙ্ঘন করে চলছে। এজন্য তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন টাস্কফোর্স কমিটিগুলোর নিয়মিত সভা করা প্রয়োজন। কমিটির প্রত্যেক সদস্য যদি একটি করেও উদ্যোগ গ্রহণ করে তাহলে তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি অনেক দূর এগিয়ে যাবে।’

টাস্কফোর্স কমিটি সক্রিয় নয়

জেলার উন্নয়নকর্মী কাজী মো. হাসিবুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তামাক নিয়ন্ত্রণে আইনের কঠোর প্রয়োগ দরকার। শুধু জরিমানা করলে হবে না। তামাক কোম্পানিগুলো জরিমানার অর্থ দোকাদিকে দিয়ে আরও সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে দেয়। তাই জরিমানার পাশাপাশি ন্যূনতম একদিনের কারাদণ্ড দেওয়া প্রয়োজন। এর মাধ্যমে তারা আইন মানতে বাধ্য হবেন। টাস্কফোর্স কমিটি সক্রিয় হলে তবেই এটি সম্ভব।’

পরিবেশবাদী সংগঠন ‘সিয়াম’র নির্বাহী পরিচালক মাছুম বিল্লাহ বলেন, ‘তামাক নিয়ন্ত্রণে টাস্কফোর্স কমিটি সক্রিয় নয়। আন্তরিকও নয়। এ কারণে তামাক নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালানো হচ্ছে না। কাজেই আইনও বাস্তবায়ন হচ্ছে না। কোম্পানিগুলো বিভিন্ন উপহার দেওয়ার মাধ্যমে তামাকজাত দ্রব্যের ক্রেতা ও বিক্রেতাদের প্রভাবিত করছে। টাস্কফোর্স কমিটি এক্ষেত্রে সক্রিয় কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না।’

দরকার আইনের কঠোর প্রয়োগ

খুলনা সিভিল সার্জন অফিসের সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তামাকের ক্ষতিকর দিক নিয়ে প্রচারণা জোরদার করা হবে। পাশাপাশি আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। তবে এটি নিয়ন্ত্রণে আসবে।’

একই কথা বলেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের তামাকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে ওরিয়েন্টেশন দিয়ে থাকি। প্রত্যেক শিক্ষক এ বিষয় নিয়ে কাজ করেন। ২০২৪ সালের শেষ দিকে আয়োজিত একটি কনসার্টে তামাক কোম্পানির অপকৌশল বাস্তবায়নের নীলনকশা ভন্ডুল করেছিলাম। সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি আইনের কঠোর প্রয়োগ দরকার। সেখানে কেবল জরিমানা করলেই হবে না বরং কারাদণ্ড দেওয়া প্রয়োজন। তাতে ভয়ভীতি বাড়বে।’

খুলনার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মো. মিজানুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তামাক নিয়ন্ত্রণে টাস্কফোর্স কমিটির সভা নিয়মিত হওয়া প্রয়োজন। সভা থেকে প্রাপ্ত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হওয়াও জরুরি। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। অর্থদণ্ডের পাশাপাশি কারাদণ্ড দিতে হবে।’

জেলা প্রশাসক বললেন নিয়মিত অভিযান চলে

খুলনার জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান বলেন, ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে নিয়মিত অভিযান চালানো হয়। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজন হলে অভিযান আরও জোরদার করা হবে। নগরীর ১১টি পয়েন্টে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রির তথ্য পেয়েছি। সেই পয়েন্টগুলোর তালিকা করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সাত রাস্তামোড় পয়েন্টে গত ১৬ অক্টোবর অভিযান চালানো হয়েছে। সেখানে ফ্রিতে সিগারেট বিতরণ করার সময় একজনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি।’

সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক