রাজশাহী মহানগর ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আব্দুর রহমানের ভাড়া বাসায় ঢুকে ছেলে তাওসিফ রহমানকে সুমনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় বিচারকের স্ত্রী তাসমিন নাহারও গুরুতর আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) বিকালে নগরের ডাবতলায় বিচারকের নিজ বাসভবনে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
রাজশাহী মহানগর পুলিশ জানায়, একদল দুর্বৃত্ত বিচারক আব্দুর রহমানের বাসায় ঢুকে তার স্ত্রী ও ছেলেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলেও তার ছেলে মারা যান। বিচারকের স্ত্রী চিকিৎসাধীন আছেন।
বিচারক আবদুর রহমানের গ্রামের বাড়ি জামালপুর জেলায়। তিনি পরিবার নিয়ে নগরের ডাবতলা এলাকায় ভাড়া বসবাস করতেন। তাওসিফ রহমান নবম শ্রেণিতে পড়তো।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মুখপাত্র শংকর কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘তাসমিন নাহারকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার শরীরে অস্ত্রপচার করা হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে একজন দুর্বৃত্তকে আটক করা হয়েছে। আহত হওয়ায় তাকেও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’
তবে কী কারণে এই হামলা হয়েছে, তা এখনও জানা না গেলেও তাদের শনাক্ত করতে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ঘটনাস্থলে তদন্ত কার্যক্রম চালাচ্ছে পুলিশের গোয়েন্দা ইউনিট ও ক্রাইম সিন ইউনিট।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হামলাকারী হিসেবে আটক ব্যক্তির নাম ইমন। তার বাড়ি গাইবান্ধায়। বিচারক আব্দুর রহমান সিলেটে কর্মরত থাকাকালে ইমনের বিরুদ্ধে সিলেটের জালালাবাদ থানায় একটি জিডি করেছিলেন। সে ঘটনার সূত্রে এই ঘটনা ঘটেছে কিনা তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেনি পুলিশ। ভবনে ঢোকার সময় ওই যুবক দারোয়ানের কাছে থাকা খাতায় নিজের নাম লিখেছেন লিমন। ‘বিচারকের ভাই’ পরিচয় দিয়ে তিনি পাঁচতলার ফ্ল্যাটে যান।
ভবনটির দারোয়ান মেসের আলী জানান, ওই যুবককে তিনি আগে কখনও দেখেননি। বিচারককে ভাই পরিচয় দেওয়ায় তিনি ঢুকতে দেন। তবে তার আগে নাম ও মোবাইল নম্বর লিখিয়ে নেন। দুপুর আড়াইটার দিকে ওই যুবক ফ্ল্যাটে যান। এর প্রায় ৩০ মিনিট পর ফ্ল্যাটের গৃহকর্মী তাকে এসে জানান, ফ্ল্যাটে বিচারকের ছেলেে ও স্ত্রীকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। এরই মধ্যে ভবনের অন্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দারাও চলে আসেন। তারা সবাই ফ্ল্যাটে ঢুকে তিন জনকেই আহত পান। এরপর তিন জনকেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, নিহত সুমনের মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে। আর হামলকারী যুবক ও বিচারকের স্ত্রীকে অস্ত্রোপচার কক্ষে নিয়ে যাওয়াা হয়েছে।
রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার আবু সুফিয়ান বলেন, ‘বিচারকের ডাবতলা এলাকায় নিজ বাসভবনে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। তাদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে বিচারকের ছেলে ও স্ত্রী গুরুতর আহত হন। হাসপাতালে নেওয়ার পথে ছেলে তাওসিফ রহমান মারা যায়। আহত বিচারকের স্ত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় একজনকে আটক করেছে পুলিশ। তবে কী কারণে এমন হামলা হয়েছে তা কেউ বলতে পারছে না। আমরা ঘটনার তদন্ত করছি। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ঘাতক আহত হওয়ায় তাকেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।’

















