রাজশাহী মহানগর ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আব্দুর রহমানের পরিবারের লোকজনকে ১০ দিন আগে হত্যার হুমকি দিয়েছিল লিমন মিয়া (৩৫) নামে এক ব্যক্তি। এ ঘটনায় গত ৬ নভেম্বর সিলেটের জালালাবাদ থানায় লিমন মিয়ার বিরুদ্ধে জিডি করেছিলেন বিচারকের স্ত্রী তাসমিন নাহার লুসী। জিডি করার সাত দিনের মাথায় বিচারকের ভাড়া বাসায় ঢুকে ছেলে তাওসিফ রহমান সুমনকে (১৫) কুপিয়ে হত্যা করেছে লিমন। এ সময় বিচারকের স্ত্রী তাসমিন নাহার লুসীকে (৪৪) কুপিয়ে জখম করা হয়।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) বেলা আড়াইটার দিকে নগরের ডাবতলা এলাকায় বিচারকের নিজ বাসায় এ ঘটনা ঘটে। আহত তাসমিন নাহারকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত লিমন মিয়াকে আটক করেছে পুলিশ। জিডি করার সূত্রে এ ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা পুলিশের।
খবর পেয়ে বিকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান। পরে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আটক লিমনের পকেটে একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে সে চালক। তার সঙ্গে পূর্ববিরোধ থাকতে পারে বিচারকের পরিবারের। এ নিয়ে সিলেটের জালালাবাদ থানায় লিমনের বিরুদ্ধে জিডি করেছিলেন বিচারকের স্ত্রী। সেটির যোগসূত্র থাকতে পারে। তবে তদন্তের পর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।’
আটক লিমন মিয়ার বাড়ি গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের মদনেরপাড়া গ্রামে। আহত হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
লিমন মিয়ার বিরুদ্ধে জিডি
ঘটনার পর জালালাবাদ থানায় লিমন মিয়ার বিরুদ্ধে বিচারকের স্ত্রী তাসমিন নাহারের করা একটি জিডির কপি হাতে পেয়েছে পুলিশ। গত ৬ নভেম্বর জালালাবাদ থানায় এ জিডি করা হয়। এতে তাসমিন নাহার উল্লেখ করেছেন, ‘কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের সদস্য হওয়ায় লিমনের সঙ্গে পরিচয় হয় আমার। এরপর সে আমার মোবাইল নম্বর নেয়। তার পরিবার আর্থিকভাবে কিছুটা দুর্বল হওয়ায় প্রায় সময় আমার কাছ থেকে আর্থিক সহযোগিতা নিতো। একপর্যায়ে প্রতিনিয়ত আমার কাছে সহযোগিতা চাইলে দিতে অপারগতা প্রকাশ করি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আমার মোবাইলে কল দিয়ে হুমকি-ধমকি দিতো। সর্বশেষ গত ৩ নভেম্বর সকাল আনুমানিক ১০টা ২০ মিনিটে আমার মেয়ের ফেসবুক মেসেঞ্জারে কল দিয়ে আমাকে ও আমার পরিবারের লোকজনকে হত্যা করবে বলে হুমকি দেয়। সে যেকোনো সময় আমিসহ আমার পরিবারের সদস্যদের বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে বলে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এ অবস্থায় নিরাপত্তার স্বার্থে বিষয়টি সাধারণ ডায়েরিভুক্ত করা প্রয়োজন। অতএব, উপরোক্ত বিষয়টি আপনার থানায় সাধারণ ডায়েরিভুক্ত করতে যেন জনাবের মর্জি হয়।’
পুলিশ বলছে, ভবনে ঢোকার সময় ওই ব্যক্তি দারোয়ানের কাছে থাকা খাতায় নিজের নাম লিখেছে লিমন। ‘বিচারকের ভাই’ পরিচয় দিয়ে পাঁচতলার ফ্ল্যাটে যায়।
ভবনটির দারোয়ান মেসের আলী জানান, ওই ব্যক্তিকে তিনি আগে কখনও দেখেননি। বিচারককে ভাই পরিচয় দেওয়ায় বাসায় ঢুকতে দেন। তবে তার আগে নাম ও মোবাইল নম্বর লিখিয়ে নেন। বেলা আড়াইটার দিকে ওই ব্যক্তি ফ্ল্যাটে যায়। এর প্রায় ৩০ মিনিট পর ফ্ল্যাটের গৃহকর্মী এসে জানান, বিচারকের ছেলে ও স্ত্রীকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। এরই মধ্যে ভবনের অন্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা চলে আসেন। তারা সবাই ফ্ল্যাটে ঢুকে তিন জনকে আহত অবস্থায় পান। এরপর তিন জনকেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মুখপাত্র শংকর কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘তাওসিফ রহমানকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। গুরুতর আহত তাসমিন নাহার ও আহত ব্যক্তির চিকিৎসা চলছে।’

















