Swadhin News Logo
মঙ্গলবার , ১৮ নভেম্বর ২০২৫ | ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. best
  2. cassinoBR
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কৃষি ও প্রকৃতি
  5. ক্যাম্পাস
  6. খেলাধুলা
  7. চাকরি
  8. জাতীয়
  9. জোকস
  10. তথ্যপ্রযুক্তি
  11. দেশজুড়ে
  12. ধর্ম
  13. নারী ও শিশু
  14. প্রবাস
  15. বই থেকে

ওসিসহ একাধিক ব্যক্তিকে হত্যার হুমকি, তাকে ধরতে পারছে না পুলিশ

প্রতিবেদক
Nirob
নভেম্বর ১৮, ২০২৫ ৮:৩৪ পূর্বাহ্ণ
ওসিসহ একাধিক ব্যক্তিকে হত্যার হুমকি, তাকে ধরতে পারছে না পুলিশ

কখনও ব্যবসায়ী, কখনও প্রতিপক্ষ, আবার কখনও পুলিশকে হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে চট্টগ্রাম পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী মো. রায়হান আলম। হুমকি দিয়ে হত্যা যেন নেশা হয়ে উঠেছে। তবু তাকে ধরতে পারছে না পুলিশ। এরই মধ্যে হয় ফেসবুকে না হয় সরাসরি ফোন করে হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।

গত ৫ থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একের পর এক পোস্টে, কখনও ফোনে এসব হুমকি দেওয়া হয়েছে। পলাতক অবস্থায় থেকেও প্রতিপক্ষকে ‘ভয়ঙ্কর মৃত্যু’, ‘খেলা শুরু হবে’, ‘টাকার কারিশমায় মামলা’ ইত্যাদি ভাষা ব্যবহার করে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ বলছে, তাকে খুঁজছে।

সর্বশেষ গত শুক্রবার রাতে চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ীকে কল করে হত্যার হুমকি দেয় রায়হান। ওই ব্যবসায়ীকে রায়হান বলেছে, ‘তোকে গুলি করে মারবো না, ব্লেড দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারবো।’ হুমকি পাওয়া ব্যবসায়ীর নাম মো. একরাম। পাথরের ব্যবসা করেন। তিনি বলেন, ‌‘শুক্রবার রাত ৮টার দিকে আমাকে ফোন করে সন্ত্রাসী রায়হান। পরে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো খুদে বার্তায় আমাকে ব্লেড দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারার হুমকি দেয়। এরপর থেকে আতঙ্কে রয়েছি।’

কেন হুমকি দেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে একরাম বলেন, ‘গত ১৫ মার্চ ঢাকার একটি শপিংমলে ঘুরতে দেখে চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিলাম। এরপর সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্না শারমিন এবং বিদেশে পলাতক সাজ্জাদ আলী ওরফে বড় সাজ্জাদ আমাকে হুমকি দেয়। ওই হুমকির ঘটনায় পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেছিলাম। এরপর থেকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। নতুন করে হুমকির বিষয়ে থানায় মামলা করবো।’

আতঙ্কের কথা জানিয়ে একরামের স্ত্রী রুমা আক্তার বলেন, ‘হুমকির পর থেকে আতঙ্কে আছি। ভয়ে স্বামী বাসা থেকে বের হচ্ছেন না। বের হলে সঙ্গে পুলিশ থাকবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার।’

এ ব্যাপারে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সন্ত্রাসী রায়হানের হুমকির বিষয়ে অবগত আছি আমরা। ওই ব্যবসায়ী মামলা করবেন। এর আগেও হুমকির ঘটনায় ওই ব্যবসায়ী থানায় মামলা করেছিলেন। পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে নিরাপত্তা দেওয়া হবে।’

নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (গণমাধ্যম) আমিনুর রশিদ বলেন, ‘নগর ও জেলার বেশ কয়েকটি হত্যা মামলায় সন্ত্রাসী রায়হানের নাম উঠে এসেছে। তাকে গ্রেফতারে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে। একেক সময় একেক স্থান থেকে হুমকি দিচ্ছে, এজন্য তাকে গ্রেফতারে সময় লাগছে পুলিশের।’

হুমকি দিয়ে একের পর এক খুনে রায়হানের নাম

গত ৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর সঙ্গে নির্বাচনি জনসংযোগে অংশ নেওয়া সন্ত্রাসী সরোয়ার হোসেন বাবলাকে (৪৩) গুলি করে হত্যা করা হয়। এর তিন দিন আগে সরোয়ারকে ফোন করে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে রায়হানের বিরুদ্ধে। নিহত সরোয়ারের বাবা জানান, সরোয়ারকে ফোন দিয়ে রায়হান বলেছিল, ‘তোর সময় শেষ, যা খাওয়ার খেয়ে নে। এরপর হত্যা করা হয়।’

গত ২৫ অক্টোবর মোটরসাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফেরার সময় রাউজান পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চারাবটতলে গুলি করে হত্যা করা হয় যুবদল কর্মী আলমগীর আলমকে। এই হত্যা মামলায় রায়হানকে আসামি করা হয়। পুলিশ জানায়, রাজনৈতিক এই হত্যাকাণ্ডে রায়হান ভাড়াটে খুনি হিসেবে কাজ করেছে। জীবিত অবস্থায় মোবাইলে আলমগীর আলমের কথোপকথনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে আলমগীরকেও রায়হানের নাম উল্লেখ করে শঙ্কা প্রকাশ করতে দেখা গেছে।

সাজ্জাদের কাছ থেকে দীক্ষা নিয়ে দুর্ধর্ষ রায়হান

পুলিশ জানিয়েছে, হত্যাচেষ্টার একটি মামলায় কারাগারে গিয়ে চট্টগ্রামের আলোচিত সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে পরিচয় হয় রায়হানের। গত বছরের ৫ আগস্টের পর দুজন কারাগার থেকে জামিনে বের হয়। এরপর ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে বেপরোয়া হয়ে ওঠে রায়হান। সাজ্জাদ সম্প্রতি কারাগারে গেলে রায়হান তার অস্ত্রভান্ডারের দেখভাল করছে। কথায় কথায় গুলি ছোড়ে একের পর এক হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তাকে ধরতে একাধিকবার অভিযান চালিয়েও পাওয়া যায়নি। রাউজান ও ফটিকছড়ির পাহাড়ি এলাকায় আস্তানা তার। সেখান থেকে এসে অপরাধ করে, বিশেষ করে গুলি করে হত্যার পর দ্রুত পাহাড়ের নিরাপদ স্থানে চলে যায়। মূলত শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের কাছ থেকে দীক্ষা নিয়ে দুর্ধর্ষ হয়ে উঠেছে রায়হান।

যেমন হুমকি তেমনই কাজ

গত ২৫ জুলাই নগরের কালুরঘাট এলাকার এক ওষুধের দোকানিকেও মোবাইলে হুমকি দেয় রায়হান। তখন ওই দোকানিকে বলেছিল, ‘আমি ঢাকাইয়া আকবর খুনের মামলার ২ নম্বর আসামি রায়হান, মাথার খুলি উড়ায় ফেলবো। আকবর সি বিচে কীভাবে পড়ে ছিল তুই দেখছস? তুইও পড়ে থাকবি।’

চাঁদা না পেয়ে গত ১ আগস্ট চান্দগাঁও থানার মোহরা এলাকার এক ব্যবসায়ীকেও গুলি করার অভিযোগ ওঠে রায়হানের বিরুদ্ধে। মো. ইউনুস নামের ওই ব্যবসায়ী নদী থেকে বালু তোলার কাজে ব্যবহৃত খননযন্ত্রের ব্যবসা করেন। পুলিশ জানায়, রায়হানের নামে গত বছরের ৫ আগস্টের পর চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় জোড়া খুনসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৫টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে সাতটি হত্যা মামলা।

শুধু ফোন করে হুমকি দিচ্ছে তা নয়, নিজের ফেসবুক থেকেও বিভিন্ন জনকে হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। কয়েকদিন আগে ফেসবুকে এক পোস্টে লিখেছিল, ‘রাউজানের হরিশখান পাড়ার আজিজ বস নামের মুনাফিকের যত দালাল আছে, তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ইত্যাদির নাম-ঠিকানা লিখে আমাকে ইনবক্স করুন। পরিচয় গোপন রাখা হবে। বাকিটা আমি দেখে নেবো। আমাকে মারার জন্য ২০ লাখ বাজেট করেছে আজিজ। আমি ৩০ লাখ দেবো, আজিজকে জীবিত দিলেই হবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রায়হান যে আজিজকে হুমকি দিয়েছে তার পুরো নাম আজিজ উদ্দিন ইমু। তিনি চট্টগ্রাম-৬ আসনে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। গত বছরের ৫ আগস্টের পর আজিজ বিএনপির রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। আওয়ামী লীগের সময়ে রাউজানে নানা ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড করেছেন। রায়হান একসময় আজিজের শিষ্য হিসেবে কাজ করেছিল। মূলত আজিজের হাত ধরেই রায়হান সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগের ক্ষমতা হারানোর আগে আধিপত্য নিয়ে বিরোধে আজিজের সঙ্গ ছাড়ে রায়হান।

ওসিকে হুমকি

গত ২৯ অক্টোবর রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়াকে উদ্দেশ্যে করে রায়হান ফেসবুকে লিখেছিল, ‘আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, মামলা বাণিজ্য বন্ধ করুন। আপনি যদি সঠিক তদন্ত না করে টাকার বিনিময়ে মামলা দিয়ে দেন, রাউজানের পরিস্থিতি কিন্তু আপনার কন্ট্রোলের বাইরে চলে যাবে। যা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। বরাবর, ওসি মনিরুল ইসলাম স্যার।’ রায়হানের ফেসবুক আইডির নাম রায়হান আলম। তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন এটি যে রায়হানের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট তা পুলিশকে নিশ্চিত করেছেন। বিষয়টি রাউজান থানার ওসি মনিরুল ইসলামও নিশ্চিত করেছেন।

হুমকির বিষয়ে ওসি মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রায়হানের বিষয়টি আমাদের নজরদারিতে আছে। তাকে গ্রেফতারের জন্য খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।’

কে এই রায়হান

রাউজানের ৭ নম্বর রাউজান ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের জুরুরকুল খলিফা বাড়ির মৃত বদিউল আলমের ছেলে রায়হান। বর্তমানে পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের অন্যতম সহযোগী। 

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ছোট সাজ্জাদের বাহিনীতে রয়েছে ২৫ জন সক্রিয় সদস্য। গত ১৫ মার্চ ঢাকার একটি শপিংমল থেকে সাজ্জাদকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর বাহিনীর হাল ধরে পাঁচ সহযোগী। তাদের অন্যতম সাজ্জাদের ডানহাত হিসেবে পরিচিত রায়হান। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে রায়হান দ্বিতীয়। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলটির বিভিন্ন মিছিল ও সমাবেশে যোগ দিতো রায়হান। স্থানীয় এক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যের সঙ্গে তার সখ্য ছিল। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর বিএনপির সভা-সমাবেশে যোগ দিতে শুরু করে।

ধরার জন্য সব ধরনের চেষ্টা চলছে পুলিশের

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাটহাজারী সার্কেল) কাজী তারেক আজিজ বলেন, ‘রায়হান দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী। তাকে ধরার জন্য সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা।’

সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক